সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট

‘নতুন শিক্ষাক্রম মুনাফা অর্জনের শ্রমিক তৈরি করবে’

‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২০: কোন পথে শিক্ষাব্যবস্থা’ শীর্ষক মতবিনিময়
‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২০: কোন পথে শিক্ষাব্যবস্থা’ শীর্ষক মতবিনিময়  © টিডিসি ফটো

নতুন জাতীয় শিক্ষক্রম ব্যবসায়িক মুনাফা অর্জনে সক্ষম একদল শ্রমিক তৈরি করবে বলে মনে করে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট। বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসির মুনীর চৌধুরী মিলনায়তনে আয়োজিত ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২০: কোন পথে শিক্ষাব্যবস্থা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে এমন মন্তব্য করেছেন সংগঠনটির সভাপতি মাসুদ রানা।

এ সময় মাসুদ রানা আরও বলেন, ‘শিখনকালীন মূল্যায়ন বা ধারাবাহিক মূল্যায়ণ নিঃসন্দহে একটি উন্নত প্রক্রিয়া। কিন্তু স্থান, কাল বিবেচনায় না নিলে উন্নত প্রক্রিয়াও সব সময় উন্নত ফল দেয় না। এ জন্য পর্যাপ্ত ও দক্ষ শিক্ষক আমাদের নেই। শিক্ষকদের একটা অংশও নানা কারণে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়তে পারেন। বাস্তব অভিজ্ঞতা বলে শিক্ষকরা ছাত্রদের জোড় করে নিজের কাছে পড়া বা কোচিং এ পড়তে বলবেন। যারা পড়বে তারাই বেশি নাম্বার পাবে। শুধু তাই নয়, এতে স্বজন পোষণের সম্ভাবনাও বেড়ে যাবে। পরপর তিনটি পাবলিক পরীক্ষা ছাত্রদের জন্য হবে চাপের।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষার কাজ হওয়া উচিৎ স্বাধীন চিন্তা ও বিচারের জন্য প্রয়োজনীয় সামর্থ্য তৈরি করা। আওয়ামী সরকার এর পূর্বেও সৃজনশীল প্রশ্ন চালু করে বলেছিল, চিন্তার ক্ষমতা বাড়বে, মুখস্থ নির্ভরতা কমবে কিন্তু হয়েছে তার উল্টো। আর এ সব কর্মকাণ্ডের বলি হয়েছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। ভালো ভালো কথার মোড়কে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২০’ও একই পথে যাত্রা শুরু করবে। যা গোটা শিক্ষা ব্যবস্থায় বিপর্যয় ডেকে আনবে। তাই এই শিক্ষাক্রম বাতিলের দাবিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ঢাবির পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, শিক্ষা ও শিশু রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক কথা সাহিত্যিক রাখাল রাহা, ঝিগাতলা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ইসহাক সরকার, সাংবাদিক ও চলচ্চিত্র সমালোচক বিধান রিবেরু, শহীদুল্লাহ স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক শামীম জামান।

সভায় অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন বলেন, ‘এই দেশের সরকার কখনোই আন্দোলন ছাড়া কিছু করেনি। শিশুদের শিক্ষকরা হবেন মডেল। এ রকম শিক্ষক আমাদের দেশে কতজন আছে? এরকম শিক্ষকের ব্যবস্থা না করে এখন ভাবতে পারেন পরীক্ষা থাকবে না? স্কুল এখন শিক্ষকরা চালায় না, চালায় গভর্নিং বডি। শিক্ষার বাজেট জিডিপির ২ শতাংশ । এটা দিয়ে শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব নয়।

পাঠক্রম পরিবর্তন করার মধ্য দিয়ে কারিগরি শিক্ষাকে মেইনস্ট্রিম করার চেষ্টা করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার একের পর এক মেগা প্রজেক্ট নিচ্ছে। কিন্তু শিক্ষায় মেগা প্রজেক্ট নেয় না। উচ্চতর গণিত বাদ দেয়া হলো। বিজ্ঞানের ৩টি বই মিলে একটি বই হলো। এটা বিজ্ঞান শিক্ষাকে সংকুচিত করবে। ভবিষ্যতে যারা বিজ্ঞান পড়তে চাইবে তারা মারাত্মক সংকটে পড়বে। মূল কথা হলো সবাই সবকিছু পড়বে এভাবে একটা এভারেজ জাতি তৈরি হবে। কোনো বিজ্ঞানী তৈরি হবে না। বিজ্ঞান না পড়িয়ে ‘জীবন ও জীবিকা’ পড়াবে সবাইকে। অর্থাৎ শুরু থেকেই বিজ্ঞানী, গবেষক নয় - জীবিকার কথা ভাবানো হচ্ছে। সবমিলে এই রূপরেখা জাতিকে ধ্বংস করার রূপরেখা।’

নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবে প্রয়োগ অসম্ভব উল্লেখ করে মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘সরকার এটা করছে কেন? সম্প্রতি দেশের শিক্ষার মান নিয়ে অনেক কথাবার্তা হচ্ছে। র‌্যাংকিং হচ্ছে। বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায় সবার নিচে। তাতে সরকার চাপে পড়ে কিছু করে দেখাতে চাইছে। বাহবা নিতে চাইছে সম্ভবত। কিন্তু এর জন্য তারা সময় নিয়েছে মাত্র দু’বছর। এই সময়ে পাঠ্যপুস্তক তৈরি, শিক্ষক প্রশিক্ষণ দিয়ে এটা বাস্তবায়ন করা অসম্ভব। এজন্য পর্যাপ্ত বাজেটের প্রয়োজন। শিক্ষাক্রমে এ বিষয়ে কোনো কথা নেই।’

নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হলে শিক্ষার্থীরা আরও বেশি ইংলিশ মিডিয়ামের দিকে অনেকেই ঝুকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষাক্রমে ইংরেজি শিক্ষার নাম্বার ও ক্লাসের সময় কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে বাংলা মাধ্যমে যারা পড়বে তাদের ইংরেজির ভিত আরো দুর্বল হবে। ইংলিশ ভার্সন, ইংলিশ মিডিয়ামের দিকে অনেকেই ঝুকবে। শিখনকালীন মূল্যায়নের ক্ষেত্রে অ্যাটেনডেন্স ও মাসিক পরীক্ষার ভিত্তিতে নাম্বার দেয়া যেতে পারে কিন্তু সরাসরি শিক্ষকের হাতে নয়। এটা দেশের বর্তমান বাস্তবতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

শিক্ষক শামীম জামান বলেন, ‘৩য় শ্রেণী পর্যন্ত পরীক্ষা থাকবে না অথচ ক্লাস ফোরে উঠেই তাকে ৬টি পরীক্ষা দিতে হবে। এটা অনেক চাপ হবে। আবার বই থাকবে না এটাও ভয়াবহ হবে। পিইসি-জেএসসি পরীক্ষা বাতিলের কথা আমরা আগেও বলেছি, এখনও বলছি। এখন আবার দশম, একাদশ, দ্বাদশ পরপর তিনটি পরীক্ষা নিলে শিক্ষার্থীদের জন্য চাপের হবে।’

মতবিনিময় সভা সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়ারের সঞ্চালনায় বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence