পরিবারের সম্বল গরু বিক্রির টাকায় চিকিৎসা চলছে আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ আরমানের
- নোয়াখালী প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:২৮ AM , আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:২৮ AM
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিয়ে গুলিবিদ্ধ হন নোয়াখালী সদর উপজেলার এওজবালিয়া ইউনিয়নের নন্দনপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আরমান হোসেন। প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ শরীরটা ভোগাচ্ছে তাকে। চিকিৎসা করতে গিয়ে এরই মধ্যে বিক্রি করতে হয়েছে ঘরের পালিত দুধের গরু। তবে টাকার অভাবে থেমে আছে চিকিৎসা। ফলে চিকিৎসা খরচ নিয়ে বিপাকে পড়েছে তার পরিবার।
জানা গেছে, নোয়াখালী সদর উপজেলার এওজবালিয়া ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের শান্তসীতা গ্রামের আক্কেল আলী মাঝি বাড়ির মো. আনাল হকের ছেলে আরমান। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে সে চতুর্থ। গত ১ আগস্ট মা-বাবাকে না জানিয়ে জমানো টাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিতে ঢাকায় যান আরমান।
সদরঘাটে ফুফাতো ভাইয়ের বাসায় থেকে নিয়মিত আন্দোলনে যোগ দিতেন। ৫ আগস্ট বিকেলে রাজধানীর বংশাল থানার সামনে পুলিশের ছোড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন আরমান। এরপর তাকে ছাত্ররা ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। শরীর থেকে দুটি গুলি বের করলে ৬ আগস্ট বাড়িতে আসেন আরমান। কিছুদিন পর আবার যন্ত্রণা শুরু হলে আবারও তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
আরও পড়ুন: চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ রুম্মান
আরমান নন্দনপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার অষ্টম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেও পরীক্ষার খাতায় ঠিকমতো লিখতে পারছেন না।
আরমান হোসেন বলেন, আমার শরীরে তিনটা গুলি লাগে, দুটা বুকে আর একটা মাথায়। বুকের গুলির স্থানে ব্যথা না লাগলেও মাথার গুলির স্থানে ব্যথা করে। পরীক্ষার খাতায় লিখতে পারি না, লিখতে গেলে আবার মাথায় ব্যথা অনুভব করি। থেমে থেমে লিখতে হয়। কোনো কাজ করতে পারি না, মাথা টনটন করে ব্যথা করে।
আরমানের শিক্ষক আব্দুল মান্নান ও মো. মহিন উদ্দিন বলেন, আরমান ও তার ছোট বোন আমাদের মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে। কয়েকদিন আরমান মাদ্রাসায় অনুপস্থিত ছিল। আমরা আরমানের বোনকে জিজ্ঞেস করলে সে তার ভাইয়ের সম্পর্কে বলত না। পরে খবর নিয়ে জানতে পারি আরমান গুলিবিদ্ধ হয়েছে। গরু বিক্রির টাকায় চিকিৎসা নিয়েছে। তার বাবা কষ্টে আছে। এই কঠিন সময়ে আরমানের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়ালে তার চিকিৎসা সম্পন্ন হতো।
আরমানের বাবা আনাল হক বলেন, আমি পাগলের মতো হয়ে আছি। আমার তিন মেয়ে দুই ছেলে। আমার ছোট ছেলে আরমান গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ছিল। তারপর বাড়ি আসলে যন্ত্রণা সহ্য করতে না পারায় আবারো হাসপাতালে ভর্তি করাই। ডাক্তাররা জানায় তার মাথায় আরেকটা গুলি আছে। সেটি বের করতে ঘরের পালিত দুধের গরু ৭৫ হাজার টাকায় বিক্রি করি। বর্তমানে আমার ছেলে কাত হয়ে ঘুমাতে পারে না, সারারাত ছটফট করে। আমি বিভিন্নভাবে ঋণে জর্জরিত হয়ে এখন আর চিকিৎসা করাতে পারছি না।
আরও পড়ুন: ছাত্রদলের সভায় দাওয়াত পায়নি শিবির-বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক হাসিব আহমেদ বলেন, আরমান সাহসী ছেলে। সেদিন সাহস নিয়ে এগিয়ে গিয়েছে। তবে তার চিকিৎসার জন্য গরু বিক্রি করতে হয়েছে, এটা খুবই কষ্টদায়ক। তার জন্য কী করা যায়, তা নিয়ে অন্যদের সাথে আলাপ করবো এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এ বিষয়ে নোয়াখালী সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আখিনূর জাহান নীলা বলেন, এ বিষয়টা জানা ছিল না। জানতে পারলে সহযোগিতা করতাম। এখনো তাকে সহযোগিতা করার সুযোগ রয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার মাধ্যমে তালিকাবদ্ধ করে, ভেরিফাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।