কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়

ছাত্রলীগ থেকে ছাত্রদলের কমিটিতে, শিক্ষার্থীদের হয়রানি করাই এখন তার কাজ

আব্দুর রহিম
আব্দুর রহিম  © সংগৃহীত

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাব্বির-আপেল কমিটিতে কলা অনুষদের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন আব্দুর রহিম। ২০১৭ সালে ছাত্রলীগের কমিটি পরিবর্তনের পর পরিচয় পাল্টে যোগ দেন ছাত্রদলে। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে ২০২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাব বিস্তার শুরু করেন শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইমরান হোসেন প্রধানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত আব্দুর রহিম। হল প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই ছাত্রদলের পরিচয়ে হলের রুমে রুমে গিয়ে শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহ, সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে অসদাচরণ, সিট ছাড়তে চাপ প্রয়োগসহ নানা হয়রানির অভিযোগ উঠেছে রহিমের বিরুদ্ধে। গত বুধবার (৬ নভেম্বর) মধ্যরাতে বঙ্গবন্ধু হলের ২য়, ৩য় ও ৪র্থ তলার একাধিক কক্ষে গিয়ে রহিমসহ ছাত্রদলের ৫-৭ জন কর্মী জোরপূর্বক শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্য চেয়ে হয়রানি করেন।

শিক্ষার্থীদের থেকে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তিকৃত নবীন শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশনের পর থেকেই রাত ১২টার পর থেকে হলের বিভিন্ন কক্ষে থাকা ছাত্রদের ব্যক্তিগত তথ্য নিতে আসে এই আবদুর রহিম। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষার্থীকে হল থেকে নামতে বলা ও নিজের অনুসারীদের হলে উঠানোর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। 

২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ হাসান আকাশ বলেন, আমার রুমে হঠাৎ করে ৮-১০ জন কোন অনুমতি ছাড়াই ঢুকে পরে। পরের দিন আমার সেমিস্টার পরীক্ষা থাকায় আমি তাদের দিকে তেমন মনোযোগ না দিয়ে পড়তে থাকি। তারপর আমার বিভিন্ন তথ্যের জন্য জেরা করা শুরু করে। পরে আমার ম্যানার খারাপ এইসব বলে তাদের খাতায় নাম বিভাগ লিখে পাশে স্টার চিহ্ন বসিয়ে দেয়। 

ইইই বিভাগের শিক্ষার্থী মামুনুর রশীদ বলেন, ছাত্রদলের রহিম ভাই ও ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী মোস্তাকিমসহ ৪/৫ জন আমাদের রুমে এসে নাম লিস্ট করে ও রুমের আরেক সিটের ফজলুল ভাই তখন ক্যাম্পাসে না থাকায় তাকেও কল করে। ফজলুল ভাইয়ের মাস্টার্সের একটা ইমপ্রুভ বাকি ছিল তাই তিনি সিট ক্যান্সেল করে নি। কিন্তু জোরপূর্বক সেই সিটে রহিম ভাই তার জুনিয়রকে উঠিয়ে দিয়ে যায়। এ বিষয়ে আমাদের মাঝে বাকবিতন্ডাও হয়।

ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী শিহাব জানান, আমার রুমে রহিম ভাই এসে এখানে ছাত্রলীগের সিট ছিল বলে নেমে যাওয়ার জন্য বলেন। ওই সিটে তিনি ছাত্রদলের ছেলেদের নাকি উঠাবেন বলেছেন।

এ বিষয়ে জানতে আব্দুর রহিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিকদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেন তিনি। তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমি রুমে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেছি। স্বৈরাচারী ছাত্রলীগের পোস্টেড কোনো নেতাকর্মী কেউ হলে আছে কি না, সেটা দেখার জন্য ছাত্রদল সেখানে গেছে। কিন্তু শিক্ষার্থী কাউকে ডিস্টার্ব বা বের করে দেওয়া হয়নি। হলে ছাত্রলীগের পোস্টেড কেউ আছে কি না, এটা জিজ্ঞেস করা তো দোষের কিছু না৷ 

কথোপকথনের এক পর্যায়ে ছাত্রদল কেন শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহ করছে জানতে চাইলে উত্তেজিত হয়ে রহিম বলেন, সাংবাদিকরা নিউজ করে কি করতে পারে আমি দেখে নিবো, আর আমি কি করবো তোমরা দেখবে৷ 

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, হলের সিট বরাদ্দের বিষয়ে হল প্রশাসন কাজ করছে। আমরা হল প্রশাসনের পক্ষ থেকেই প্রতি রুমে গিয়ে শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহ এবং সিট বরাদ্দের জন্য সাক্ষাৎকার নিয়েছি। কিন্তু রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে আলাদাভাবে হলের রুমে গিয়ে শিক্ষার্থীদের হয়রানির বিষয়টি অনুচিত। হল প্রশাসন এ ধরনের দায়িত্ব কাউকে দেয়নি। 

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইমরান হোসেন প্রধান বলেন, হলে কে থাকবে এটা নির্ধারণ করবে হল প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের হয়রানির উদ্দেশ্যে কেউ যদি ছাত্রদলের নাম ব্যবহার করে আমরা তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবো।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence