তিতুমীর কলেজের ভবনে ভবনে হামলা-ভাঙচুরের ক্ষতচিহ্ন, কোটি টাকার ক্ষতি

ভাঙচুর ও লুটপাট চালানোর দৃশ্য
ভাঙচুর ও লুটপাট চালানোর দৃশ্য  © সংগৃহীত

কোটা আন্দোলনকে ঘিরে রাজধানীসহ সারা দেশে ঘটেছে সহিংসতার ঘটনা। এর মধ্যে রাজধানীর মহাখালীতে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানোর অভিযোগ উঠেছে দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে। সেতু ভবন, বিআরটিএ কার্যালয় কিংবা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ তাদের ধ্বংসের হাত থেকে বাদ যায়নি সরকারি তিতুমীর কলেজেও। দুর্বৃত্তদের হামলায় কলেজটির আনুমানিক দুই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে প্রশাসন।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সন্ধ্যায় তিতুমীর কলেজে এই ভাঙচুর চালায় দুর্বৃত্তরা। দেশজুড়ে চলমান কোটা আন্দোলনে রাজপথে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা ছিল নজিরবিহীন। মহাখালীর সড়কে তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। 

তিতুমীর কলেজ বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, ১০ জুলাইয়ের পর আনুষ্ঠানিকভাবে কোটা আন্দোলনের কর্মসূচি শাহবাগে ছিল তারা। তিতুমীরে পড়ে তিতুমীরের সম্পদ নষ্ট করবে এরা কখনও তিতুমীরের শিক্ষার্থী হতে পারে না। তবে অন্যান্য রাজনৈতিক দল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিশে, ব্যানার ব্যবহার করে মহাখালীর তিতুমীর কলেজে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন ছাত্রলীগের নেতারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, কলেজের প্রধান ফটক, প্রশাসনিক ভবন, শেখ কামাল ভবন, ড. ওয়াজেদ মিয়া  ভবন, বিজ্ঞান ভবন, কলেজ বাস, অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষের কার্যালয়, ছাত্রীদের হল সংলগ্ন গেট, আক্কাসুর রহমান আঁখি হল ও বঙ্গবন্ধু কর্নার। হামলা ও ও ভাঙচুর থেকে বাদ যায়নি কলেজের জাতীয় পতাকার স্ট্যান্ডও। এখন হামলা ও ভাঙচুরের ক্ষতচিহ্ন নিয়ে দাড়িয়ে আছে কলেজের এসব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো।

তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, ১৮ জুলাই আনুমানিক ৭টায় প্রায় হাজার খানেক দুষ্কৃতকারী কলেজ আক্রমণ করে। কলেজের বাস, বিভিন্ন ভবন ভাঙচুর করে। অধ্যক্ষ কার্যালয়ে গিয়ে আমাদের কলেজের সিসি ক্যামেরা, টিভি, ফুটেজ, ল্যাপটপ এবং অনেক মূল্যবান জিনিসপত্র ভাঙচুর করে, চুরি করে, লুট করে। উপাধ্যক্ষ কক্ষের মনিটর ভাঙচুর করে। আমাদের কলেজের ইন্টারনেট সংযোগের সেন্ট্রাল সার্ভার ভাঙচুর করে। আমাদের ৭০-৭২টি সিসি ক্যামেরা ছিল তার অধিকাংশ তারা ভেঙেছে এবং নিয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে আমাদের ইঞ্জিনিয়াররা এসেছেন। তাঁরা ধারণা করছেন আনুমানিক দুই কোটি টাকার মতো আমাদের কলেজের ক্ষতি হয়েছে।’

কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমাদের প্রায় দুই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে ছেলেদের হলের এক থেকে তিন তলা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তাছাড়া, নতুন ভবনের গ্লাস, প্রশাসনিক ভবনের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের কক্ষ ভাঙচুর, বিজ্ঞান ভবনের শিক্ষার্থীদের ব্যবহৃত ল্যাবের গ্লাস, বঙ্গবন্ধু কর্নারের ভাঙচুর চালানো হয়েছে।’

তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. রিপন মিয়া বলেন, ‘সরকারি তিতুমীর কলেজের এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য আমি মনে করি জামায়াত-বিএনপির যেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং শিবিরের যেই ঘটনা আমরা ছোট থেকে শুনে এসেছি 'শিবির রগ কাটা পার্টি' তারাই এই ক্যাম্পাসে রাতের আঁধারে যখন কলেজের সবকিছু বন্ধ ছিল তখন তারা তালা ভেঙে এই দুরবস্থা ঘটিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কলেজের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের কক্ষ ভাঙচুর করেছে এবং লুটপাট করেছে। পাশাপাশি আমাদের কলেজের যেসব বাস বাইরে ছিল, সেই বাসগুলো ভেঙেছে, মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দিয়েছে। আমরা আরও দেখতে পাই আমাদের কলেজের প্রত্যেকটি গ্লাস এবং দরজা-জানালা ভেঙে ফেলেছে। আমার মনে হয় তাদের প্রথম টার্গেট ছিল স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে নির্মূল করা।’

কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হক জুয়েল বলেন, ‘বন্ধ কলেজ ও হলের তালা ভেঙে কতটা নির্মম ও নৃশংসতার পরিচয় জামায়াত, শিবির, বিএনপির প্রেতাত্মারা দিয়েছে। আমাদের কোটা বিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ব্যানার ব্যবহার করে, তাদের উপর ভর করে তারা কলেজে বর্বরতা চালিয়েছে।’


সর্বশেষ সংবাদ