নেতাকে দিয়ে পা টেপানো চবি ছাত্রলীগ সভাপতির ফোনালাপ ফাঁস

রেজাউল হক রুবেল
রেজাউল হক রুবেল  © ফাইল ছবি

দুই নেতাকে দিয়ে পা টেপানোর ছবি ভাইরালের পর এবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের একটি ফোনকল রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে নিজ গ্রুপের কর্মীকে কুপিয়ে আহত করার ঘটনায় নিজের পরিকল্পনার বিষয়ে কথা বলেন তিনি। তবে রেকর্ডটিকে এডিটেড বলে দাবি করছেন এ সভাপতি।

বুধবার (৭ জুন) রাত ১২টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রুবেলের এ  ফোনালাপ ফাঁস হয়। রেকর্ডটি ছড়িয়ে পড়ার পরে নিজ গ্রুপের কর্মীরা তাকে অবিশ্বাস করা শুরু করেছেন। এমনকি রেজাউল হক রুবেলের গ্রুপ হিসেবে পরিচিত সিএফসি তাকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে।

বুধবার রাত ১টার দিকে শাহ আমানত হলের সামনে ‘রুবেলের গালে গালে, জুতা মারো তালে তালে’, ‘রুবেলের চামড়া, তুলে নিব আমরা’ সংবলিত স্লোগান দিতে দেখা যায় সিএফসির কর্মীদের।

আরো পড়ুন: চবি ছাত্রলীগ সভাপতিকে বহিষ্কারের দাবিতে ঝাড়ু মিছিল

কর্মীদের অভিযোগ, রুবেলের বিরুদ্ধাচরণ করলে নিজ দলের কর্মীদের শায়েস্তা করতে দ্বিধাবোধ করেন না। এছাড়া ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে বিভিন্নভাবে রুবেল অনৈতিক ফায়দা লুটেছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন তারা।

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও সিএফসির কর্মী খালেদ মাসুদ বলেন, রুবেল নিজের কর্মীকে আঘাত করার কথা স্বীকার করেছে। যে নিজ দলের কর্মীকে আঘাত করতে পারে, তার আদর্শ নিয়ে প্রশ্ন উঠে। অতীতেও সে এমন ন্যক্কারজনক কাজ করেছে। তার কাছে আমরা কেউই নিরাপদ না। সে যেকোনো সময় আমাদেরকেও অন্য দলের কর্মীদের দিয়ে আঘাত করতে পারে। 

তিনি আরো বলেন, সে ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে বিভিন্নভাবে অনৈতিক ফায়দা লুটেছে। আদর্শ বিবর্জিত কোন নেতার নেতৃত্ব আমরা মানবো না। তাই চবি ক্যাম্পাস থেকে তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হলো। 

এদিকে ভাইরাল হওয়া ওই রেকর্ডে শোনা যায়, নিজ দলের এক কর্মীকে পাশে থাকার কথা বলতে গিয়ে সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, ‘তাকে বিভিন্ন মানুষ আয়ত্তে নিয়ে নিছে। নিজের... নিজেই মারি ফেলবে। রমজাইন্নারে (শাখা ছাত্রলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক ও সিএফসির কর্মী) মারতে হইছে আমার? আমারে চিটাগাং ভার্সিটির সবাই ভয় পাইতো রে ভাই, ভয় পায়। তুই শুধু আমার পাশে থাক। বাকি কাজ অটো হয়ে যাবে।’

গত ১ জুন ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে তিন ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষের শাখা ছাত্রলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক রমজান হোসাইনকে কুপিয়ে জখম করার বিষয়েও কথা বলতে শোনা যায় ভাইরাল হওয়া ওই রেকর্ডে। রুবেল বলেন, ‘রমজাইন্নারে কোপ পড়ছে না? অনেক লাফাইছে না? লাফাইছে রমজান। ওই হিসেবে পড়ি গেছে। সবকিছু মুখে বলতে হবে কেন? চুপ করে থাক না। আমারে দাঁড়াইতে দে। দেখবি অনেকে অনেক হিসাবের মধ্যে হয় পায়ে এসে পড়বে নয়তো নিজের মতো নিজের হিসাব মিলাই নিবে।’

তবে অডিও ফোনকল রেকর্ডটিকে সুপার এডিটেড দাবি করে শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, এগুলো আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। এটা সুপার এডিটেড। আমার বিভিন্ন কথাবার্তাকে সংযোজন বিয়োজন করে এই অডিও রেকর্ডটা বানানো হয়েছে। 

শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও সিএফসির আরেক নেতা সাদাফ খান বলেন, এটা রেজাউল হক রুবেলেরই ফোনকল রেকর্ড। তার কাছে নিজ দলের কর্মীরাও নিরাপদ না। সে ছাত্রলীগের আদর্শ বহির্ভূত। তাই তাকে চবি ক্যাম্পাস থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। 

প্রসঙ্গত, গত মার্চ মাসে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নেতাকে দিয়ে পা টিপিয়ে নেওয়ার ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেখা যায়, হাফ প্যান্ট পরে বিছানায় শুয়ে মোবাইল ফোন টিপছেন রেজাউল হক রুবেল। আর পাশে বসে সভাপতির পা টিপছেন দুই নেতা।

এর আগে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে রেজাউল হক রুবেলের বিরুদ্ধে তিন ছাত্রলীগ কর্মীর রগ কেটে দেয়ার অভিযোগ ওঠে। ওই সময়ে রুবেলের বহিষ্কার দাবি করে ঝাড়ু মিছিল করে চবি ছাত্রলীগের একাংশ।


সর্বশেষ সংবাদ