রাবিতে সংঘর্ষের সূত্রপাত ছাত্রলীগের নেতৃত্বেই— ৮ ছাত্র সংগঠনের দাবি

  © ফাইল ছবি

বাসের সিটে বসাকে কেন্দ্র করে গত ১১ মার্চ সন্ধ্যায় চালকসহ কন্টাক্টার ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতি ও বাকবিতণ্ডা হয়। তুচ্ছ এ ঘটনাটি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতৃত্বে স্থানীয়দের সাথে সংঘর্ষে রূপ নেয়। ক্যাম্পাসের ভেতরের অহিংস আন্দোলনও সহিংসতায় রূপ নেয় ছাত্রলীগের নেতৃত্বেই। আজ মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) বিকেলে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এমনটাই দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮টি ছাত্র সংগঠন।

এই সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে— বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলন, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ও নাগরিক ছাত্র ঐক্য। 

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্র সংগঠনগুলো বলেছেন, সেদিন আল আমিন আকাশ নামের এক শিক্ষার্থী সাথে বাস কন্টাক্টারের বাকবিতণ্ডায় তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। তখন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আকাশ ও তার বন্ধুদের উপর মারমুখী হলে ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া উপস্থিত হয়। তার নেতৃত্বে ব্যবসায়ীদের উপর চড়াও হলে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাথে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষ শুরু হলে বিভিন্ন হল থেকে ছাত্রলীগ কর্মীরা দেশীয় অস্ত্র রামদা, চাপাতি, রড, হকিস্টিক, স্ট্যাম্পসহ বিনোদপুর গেটে এসে জড়ো হয়। ছাত্রলীগ কর্মীদের এই সংঘর্ষ সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ হিসেবে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার হলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়।

সংঘর্ষ বাঁধলে বিনোদপুরের কিছু ব্যবসায়ীর সাথে মহানগর ছাত্রলীগ নেতা অনিক মাহমুদ বনিসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়। স্থানীয় সন্ত্রাসীরা পুলিশ বক্সে আগুন দিলে আশেপাশের কিছু দোকানেও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ঘটনা এ পর্যন্ত তরান্বিত হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। 

সংগঠনগুলো আরো বলেছেন, রাত সাড়ে ১০টায় উপাচার্য ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে কোনো সমাধান না করেই ফিরে আসেন। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের উপর টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ও ছররা গুলি চালায় পুলিশ। এর ফলে অসংখ্য শিক্ষার্থী আহত হয়। একজন শিক্ষার্থীর সাথে বাস কন্টাক্টারের সামান্য বাকবিতণ্ডার ঘটনা সংঘর্ষের পর্যায়ে যাওয়া এবং অসংখ্য শিক্ষার্থী আহত হওয়ার ঘটনায় চূড়ান্তভাবে দায়ী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বে অবহেলা ও নির্লিপ্ত অবস্থান। 

গত ১২ মার্চ শিক্ষার্থীরা একত্রে উপাচার্যের বাসভবনের গেটের সামনে অবস্থান নিয়ে দাবি আদায়ের চেষ্টা করে। একপর্যায়ে অবরুদ্ধ উপাচার্য কোনো সমাধান না দিয়ে তার বাসভবনে চলে যায়। শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে পুনরায় সহিংস করে তোলার চেষ্টায় মন্নুজান হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জান্নাত জারা-এর নেতৃত্বে রেল লাইনের উপর ডামি পুড়িয়ে চারুকলার রেলগেট অবরোধ করে।

এ ঘটনাগুলো ঘটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন স্থানীয় ক্ষমতাসীনরা ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ, শিক্ষার্থী ও বিনোদপুরের সাধারণ মানুষকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ শিক্ষার্থী ও বিনোদপুরের সাধারণ জনগণ। 

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, বাংলাদেশ রেলওয়ে আলাদা আলাদাভাবে তিনটি মামলা করে। এতদসত্ত্বেও স্থানীয় ব্যবসায়ী, মেস মালিক ও জনগণের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রকার উদ্যোগ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যার ফলশ্রুতিতে অত্র এলাকায় অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা চরম উৎকণ্ঠা ও নিরাপত্তাহীনতায় আছে। এই পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে নিম্নোক্ত ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে হবে। 

এসময় তারা ৬টি দাবি করেন। দাবিগুলো হলো— ক্যাম্পাসের ভিতর-বাইরে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে; দায়িত্বে ব্যর্থ হওয়ায় প্রক্টরিয়াল বডির অপসারণ ও উপাচার্যকে শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে; আহত শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে; ছাত্রলীগের দখলদারিত্ব ও সিট বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে ও নতুন হল নির্মাণ করে শতভাগ আবাসিকতা নিশ্চিত করতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও রেল কর্তৃপক্ষের দায়েরকৃত মামলার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে ও মামলার নামে সাধারণ শিক্ষার্থী ও জনগণদের হয়রানি করা যাবে না; শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি আদায়ে রাকসু সচল করতে হবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence