তরুণ তুষারের সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়ার গল্প
- রায়হান ইসলাম, রাবি
- প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৯:২৭ PM , আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৯:২৭ PM
সময়টা ২০১৩ সাল। বয়স তখনো ২০ পেরোয়নি। এই বয়সেই নিজে কিছু করার ইচ্ছা থেকে ফ্রিল্যান্সিং জগতে পা বাড়ানো। যদিও শুরুটা অতো মধুর ছিল না। মুখোমুখি হতে হয় নানা ধরনের বাঁধা-বিপত্তির। তবুও হাল ছাড়েননি। দীর্ঘ ৭ বছরের কঠোর পরিশ্রম, আর একটু একটু অগ্রগতি আজ তাকে সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছে। বর্তমানে তিনি কাজ করছেন ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটপ্লেস ফাইবার এবং আপওয়ার্কের টপ রেটেড ফ্রিল্যান্সার হিসেবে।
বলছিলাম ফ্রিল্যান্সার তরিকুল ইসলাম তুষারের কথা। তিনি অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতে মূলত সার্স ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের (এসইও) ওপর কাজ করছেন। এতে আপওয়ার্কের জরিপে বাংলাদেশ র্যাংকিংয়ে প্রথম অবস্থানটি এখন তার। দীর্ঘ সংগ্রামের পর বর্তমানে তার মাসিক আয় ৫০ হাজারেরও বেশি।
তুষারের স্বপ্ন- গ্রামের স্বল্প আয়ী পরিবারে বেড়ে ওঠা তরুণদের ফ্রিল্যান্সিং পেশায় দক্ষ করে তুলে বেকার সমস্যা ঘোচানো। ইতোমধ্যে তিনি গ্রামে একটি ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলার পাশাপাশি সেখানে নিয়মিত দিচ্ছেন প্রশিক্ষণ। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে তার এই ক্ষুদ্র উদ্যোগ খুব শীঘ্রই একটি বৃহৎ রূপ নেবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তুষার।
তুষার রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়নের আমোদপুর গ্রামে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। রংপুর কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজ থেকে প্রথম জীবনের শিক্ষা সম্পন্ন করে গাইবান্ধা সরকারি কলেজ থেকে বিএ পাস করেন তিনি। ২০১৩ সালে প্রথম ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে জানার পর গুগোল এবং ইউটিউব ঘাঁটাঘাঁটি করে কিছু জিনিস রপ্ত করেন। তবে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করার জন্য তা ছিলো অত্যন্ত নগণ্য।
মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে ২০১৫ সালে একটি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানে শিক্ষানবিশ হয়ে কাজ করার সুযোগ পান তিনি। মূলত তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেন। সেখানে অল্প বেতনে দুই বছর চাকরি করার পর তুষার ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পান। চাকরি চলাকালীন তিনি ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটপ্লেস ফাইবার এবং আপওয়ার্কে একাউন্ট খুলে টুকটাক কাজ চালিয়ে যান। এরপর ২০১৭ সালে চাকরি ছেড়ে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারে মনোযোগী হয়ে ওঠেন।
তুষার বলেন, শুরুতে কোন কিছু বুঝতাম না। ইন্টারনেটে গুগোল, ইউটিউব ঘেঁটে ঘেঁটে শিখতে লাগলাম। কিন্তু সফলতার থেকে ব্যর্থতার ঝুলিটাই বড় হতে লাগলো। একটু হতাশ হয়ে গেলাম, তবে আমার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসিনি। এখনকার মত তখন এতো কোর্সের ব্যবস্থাও ছিলো না।
তিনি বলেন, অনেক ইচ্ছে ছিলো ওয়েভ-ডেভেলোপমেন্টের ওপর কাজ করবো। কিন্তু সেটাতে খুব বেশি সফলতা না আসায় ডিজিটাল মার্কেটিং-এর ওপর কাজ করতে থাকি। এরপর পর্যাক্রমে এসইও-এর ওপর কাজ শিখে সেটির ওপর কাজ চালিয়ে যাই।
তরুণ এ ফ্রিল্যান্সার জানান, আগামীর বাংলাদেশ হবে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর। এজন্য সামনের দিনগুলোতে ডিজিটাল মার্কেটিং-এর গুরুত্ব অনেক বেশি। করোনা মহামারীর কারণে দেশের মানুষ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে কয়েক ধাপ এগিয়ে গেছে। পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং কাজের ক্ষেত্রে ঝুকে পড়ছে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো।
তিনি বলেন, বিশ্লেষকদের মতে- আগামী দিনে ফ্রিল্যান্সিং বর্তমান সময়ের চেয়ে কয়েকগুন বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।
আগামী প্রজন্মের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের কাজ রয়েছে। নিজেকে ঠিক করে নিতে হবে কোন বিষয়ে আপনি দক্ষ। যে বিষয়ের ওপর আপনি কাজ করতে আগ্রহী সেই বিষয়ের ওপর ভাসা-ভাসা ধারণা নিয়ে মার্কেটপ্লেসগুলোতে কাজ করা সম্ভব নয়। এতে হতাশ হতে হবে। এজন্য দক্ষতা অর্জন এবং ধর্য্য ধারণের বিকল্প নেই।