এসআই থেকে বাদপড়া জামায়াত আমিরের ছেলে বললেন— ‘এখনও হয়রানির শিকার হচ্ছি’

আরাফাত হোসেন
আরাফাত হোসেন  © টিডিসি

আরাফাত হোসেন। ৪০তম ক্যাডেট ব্যাচের অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাব–ইন্সপেক্টর (এসআই)। দীর্ঘ এক বছর প্রশিক্ষণ করার পর চাকরিতে যোগদানের কিছুদিন পূর্বে ‘ক্লাসে হইচই’ করার অভিযোগে তাকে অব্যাহতি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।   

আরাফাতের বাড়ি কুড়িগ্রামের কচাকাটা থানায়। তার বাবা খায়রুজ্জামান ২০ বছর থানা থানা জামায়াতের আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এখন তিনি জেলায় দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। তিনি এসআই পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে ২০২৩ সালের নভেম্বরের ৪ তারিখ রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমিতে ১ বছরের মৌলিক প্রশিক্ষণের জন্য যোগদান করেন।  

এসআই পদে যোগদানের বিষয়ে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন আমি কোনো রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলাম না। তবে ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনে সরাসরি যুক্ত ছিলাম। আমার বাবা যেহেতু জামায়াতের  উপজেলা শাখার আমির ছিলেন, তাই সরকারি চাকরি নিয়ে খুব ভয় পেতাম। এজন্য আমি বিসিএস বাদ দিয়ে ব্যাংকের জন্য পড়াশুনা করতাম। এরমধ্যে সরকারি বেসরকারি অনেক চাকরিতে লিখিত ও ভাইভা দেই। ৪০ তম সাব-ইন্সপেক্টর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি হওয়ার পর একপ্রকার অনিচ্ছা সত্ত্বেও আবেদন করি। মাঠ পরীক্ষার জন্য মাঠে যাই এটা ধরে নিয়েই যে আমার চাকরিটা হবে না।’ 

আরও পড়ুন: ‘বেকারত্ব-মাথায় ঋণের চাপ, ছোট ভাইদের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ— এর চেয়ে মৃত্যু শ্রেয়’

তিনি আরও বলেন, ‘এরপর ধাপে ধাপে মাঠ পরীক্ষা, লিখিত পরীক্ষা, কম্পিউটার টেস্ট ভাইভায় উত্তীর্ণ হই। এগুলোতে সর্বোচ্চ গোপনীয়তা রক্ষা করি। ভেরিফিকেশন শুরু হলে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগের কর্মী থানায় আমাদের রাজনৈতিক মতাদর্শ বলে দেয়। তখন আমি ভেরিফিকেশন ম্যানুপুলেট করার চেষ্টা করি এবং পরবর্তীতে প্রশিক্ষণে চলে যাই। প্রশিক্ষণে যোগদানের ৯ মাস পর্যন্ত আমার প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজন জানতো না যে আমার কী চাকরি হয়েছে। তারা জানলে আমাদের রাজনৈতিক মতাদর্শ বলে দিতে পারে, এতে আমার চাকরিটা চলে যেতে পারে,  তাই গোপন রেখেছিলাম।’ 

এদিকে, প্রশিক্ষণের শেষ দিকে এসে অব্যাহতি পান আরাফাত। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এক বছর নিজের টাকা খরচ করে প্রশিক্ষণ করার পর আমাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। অভিযোগ, আমি নাকি ক্লাসে হইচই করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছি। এ অভিযোগ যে মিথ্যা তা অ্যাকাডেমির সিসিটিভি ফুটেজ চেক করলেই বোঝা যাবে।  

ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে তিনি বলেন, একদিন সকালে প্র্যাক্টিসের সময় ৫৮ জনকে আলাদা করা হয়। আর ওই রাতেই একটি সম্মিলিত ক্লাস দেওয়া হয়। আর পরবর্তীতে সেই ক্লাসে বিশৃঙ্খলা করার অভিযোগে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এখানে একটা কথা বিশেষভাবে বলা দরকার, সকালে যে ৫৮ জনকে ডেকে আলাদা করা হয়েছিল, রাতের ক্লাসে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ওই ৫৮ জনকেই শোকজ লেটার দেওয়া হয়। এ থেকেই বোঝা যায় যে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টা পূর্ব পরিকল্পিত। এ ধরনের অপরাধের জন্য পুলিশ অ্যাকাডেমির নিয়ম অনুযায়ী ২/৪ ঘণ্টার পানিশমেন্ট হওয়ার কথা। কিন্তু সেখানে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার মত ঘটনা নজিরবিহীন।

আরও পড়ুন: এসআই থেকে অব্যাহতি পাওয়া নয়ন হাসতে ভুলে গেছেন, বললেন— ‘এখন কৃষি কাজ করছি’

চাকরি থেকে অব্যাহতি পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন জানিয়ে আরাফাত বলেন, ‘চাকরিচ্যুত হয়ে বাড়ি আসার পর আমার জীবনের এক কালো অধ্যায় শুরু হয়। লজ্জায় বাড়ি থেকে বের হতে পারিনি অনেকদিন। প্রতিবেশীরা সহানুভূতি দেখানোর নাম করে খোঁচা দেওয়ার চেষ্টা করে। আত্মীয় স্বজন, রাস্তার মানুষ বাঁকা চোখে তাকায়। বাজারে এবং কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে তো যাওয়াই বাদ দিয়েছি। এত এত প্রশ্নের সম্মুখীন হই যে, ইদানীং আর কারো সাথে যোগাযোগ রাখি না। মোট কথা আমি এখন সমাজচ্যুত।’

তিনি বলেন, ‘বেসরকারি চাকরি গুলোতেও অব্যাহতির কথা শুনলে নিতে চায় না। নতুন করে যে শুরু করব, সেটার মন মানসিকতাও নেই। এক বছর প্রশিক্ষণে এত কষ্ট করিয়েছে যে, আমার এখন পড়াশুনাতেও মন বসেনা। ক্যারিয়ার শেষ করে দিয়েছে। এখন আমার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘বাবা থানা জামায়াতের আমির হওয়ায় পুলিশ প্রায়ই আমাদের বাড়িতে হানা দিত। মাঝে মধ্যেই আমাদের বাড়ির পিছনের গেট ভেঙে ঢুকতো। বাবাকে খুঁজতে আমাদের রুমে পর্যন্ত হুটহাট ঢুকে যেত। ওইসময় ছোট ছিলাম প্রচুর ভয় পেতাম। নির্বাচনের সময়গুলোতে হয়রানির পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়ে যেত। আমি বড় হওয়ার পর যখন বাইরে থেকে বাড়িতে ঘুরতে যেতাম তখন নিজেও পুলিশের ভয়ে মানুষের বাসায় গিয়ে থাকতাম রাতে। আমরা আওয়ামী সরকারের আমলেও হয়রানির শিকার ছিলাম, এখনও একই অবস্থা।’  


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence