কাঠমিস্ত্রী জসীমের উদ্যোগে লাইব্রেরি পেল এলাকাবাসী

ছবিতে ডানে মো: জসিমউদ্দিন এবং বামে তার প্রতিষ্ঠিত লাইব্রেরি
ছবিতে ডানে মো: জসিমউদ্দিন এবং বামে তার প্রতিষ্ঠিত লাইব্রেরি  © সংগৃহীত

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার একজন কাঠমিস্ত্রী মো: জসিমউদ্দিন। অর্থের অভাবে নিজে খুব বেশি পড়ালেখা করতে পারেননি। দ্বিতীয় শ্রেণীতে থাকা অবস্থায়ই পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে নেমেছিলেন জীবিকার সন্ধানে। তবে একাডেমিক পড়ালেখা থেমে গেলেও বই পড়া বন্ধ করেননি তিনি। বই যে অন্তহীন জ্ঞানের আধার এটি উপলব্ধি করেছিলেন। সেই ছোটবেলা থেকেই কাজ শেষে ঘরে ফিরে কিছু সময় বই পড়ার চেষ্টা করতেন।

অভাবের কারণে এই বই পড়াটাও নিতান্তই সহজ ছিল না জসিমের জন্য। কাছাকাছি লাইব্রেরি না থাকায় টানাপোড়েনের সংসারে বই সংগ্রহে বেশ বেগ পেতে হত তাকে। চাইলেই নিজের পছন্দের বইটি কিনতে পারতেন না, অপেক্ষা করতে হত অর্থ সংগ্রহের। নিজের এই অভিজ্ঞতা থেকেই বইপ্রেমী সকল মানুষকে বই পড়ার সুযোগ দিতে একটি লাইব্রেরি তৈরির স্বপ্ন দেখতেন জসিম। জমানো কিছু অর্থ দিয়ে শেষপর্যন্ত সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নও করেছেন তিনি।

নিজের হাতে তৈরি বইয়ের তাক, সংগ্রহে থাকা কিছু বই আর স্বল্প সংখ্যক নতুন বই কিনে একটি টিনের ঘরেই শুরু করেছেন লাইব্রেরির যাত্রা। মাত্র কয়েকদিনেই বেশ জনপ্রিয়ও হয়ে উঠেছে তার এই লাইব্রেরি। প্রতিদিনই নানা বয়সের মানুষ ভিড় জমান লাইব্রেরিতে। কেউ লাইব্রেরিতে বসেই বই পড়েন আবার কেউবা অবসর সময়ে বাড়িতে পড়ার জন্য বই নিয়ে যান। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন জসিমের এই লাইব্রেরিতে বই প্রদান করে সহযোগিতার হাতও বাড়িয়ে দিয়েছেন।

জসিমউদ্দিনের লাইব্রেরিতে নিয়মিত বই পড়তে যাওয়া কয়েকজন পাঠক জানান, পাঠকদের প্রতি বেশ আন্তরিক জসিমউদ্দিন। বইয়ের সংগ্রহ কম হলেও মোটামুটি সব ধরনের বই-ই মেলে এই লাইব্রেরিতে। যেসব পাঠকরা বাড়িতে পড়ার জন্য বই নিয়ে যান তাদের বই জমা দেয়ার জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা দেয়া হয় না। তারা নিজ দায়িত্বে নাম এন্ট্রি করিয়ে বই নিয়ে যান এবং পড়া শেষে পুনরায় বই লাইব্রেরিতে জমা দেন।

শুধুমাত্র বই পড়াই নয়। জসিমউদ্দীনের লাইব্রেরিতে এখন চলে সাংস্কৃতিক চর্চাও। প্রায় নিয়মিতই আয়োজন করা হয় গান-কবিতার আসর এবং পাঠচক্র। এছাড়া পড়ার মনোরম পরিবেশ নিশ্চিতে গড়ে তোলা হয়েছে একটি ফুলের বাগানও।

জসিমউদ্দীনের স্বপ্ন তিনি একসময় এই লাইব্রেরিকে একটি আধুনিক লাইব্রেরি হিসেবে গড়ে তুলবেন যেখানে থাকবে সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা। এ বিষয়ে জসিমউদদীন বলেন, ‘ পূর্নাঙ্গ লাইব্রেরির জন্য একটি ভবন এবং আরও বই প্রয়োজন। আমি চাই এই লাইব্রেরিটি একসময় এমন হয়ে উঠবে যেখানে ইন্টারনেট সুবিধা থাকবে এবং সাহিত্য চর্চা, গবেষণাকার্যের জন্য প্রয়োজনীয় সকল বই থাকবে। আমি আমার জীবদ্দশায়ই লাইব্রেরিটিকে এই রূপ দিতে চাই।’

জসিম আরও বলেন, ‘একটি লাইব্রেরীর মাধ্যমে সমাজের উন্নতি ঘটে। যেহেতু আমার সামর্থ্য সীমিত আমি আশা করবো সামর্থ্য বান মানুষরা লাইব্রেরিটির পূর্ণাঙ্গকরণে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবেন।’


সর্বশেষ সংবাদ