প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত রাজনীতি শিক্ষাব্যবস্থাকে নষ্ট করে দেয়: ঢাবি উপাচার্য

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন সামাদ স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন সামাদ স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল  © টিডিসি রিপোর্ট

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে অতিরিক্ত রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত রাখার প্রতি তাগিদ দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। তিনি বলেছেন, রাজনীতি প্রত্যেকের জীবনের অংশ হয়ে থাকবে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেন অতিরিক্ত রাজনীতি না থাকে। অতিরিক্ত রাজনীতি প্রকৃত অর্থে স্কুলের শিক্ষাব্যবস্থাকে নষ্ট করে দেয়।

বুধবার (১৯ মে) দুপুরে লক্ষ্মীপুর আদর্শ সামাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পুনর্মিলনীতে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অধ্যাপক মাকসুদ কামাল স্কুলটির ১৯৮২ ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। নিজের দেওয়া বক্তব্যে তিনি স্কুলটি নিয়ে বেশকিছু স্মৃতিচরণ করেন।

আদর্শ সামাদকে অতিরিক্ত রাজনৈতিক বলয়ের বাইরে রেখে বেশি বেশি সহশিক্ষা কার্যক্রমের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন অধ্যাপক মাকসুদ কামাল। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমের সঙ্গে সরাসরি জড়িত আছি। সে অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, সামাদ থেকে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খুব একটা ভালো শিক্ষার্থী পাই না।

‘‘এর কারণ সহজে বোঝা যায়, এখানের যে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম সেটি আগের থেকে অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েছে। এটা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। স্কুলে অতিরিক্ত রাজনৈতিক প্রভাবের কারণেও হতে পারে।’’

তিনি বলেন, এখানে স্থানীয় রাজনীতিবিদদের অনেকে উপস্থিত আছেন। সকলের প্রতি একটি অনুরোধ থাকবে, একটি জনপদ একটি সভ্যতার ধারক-বাহক। যদি সেই জনপদ থেকে দেশ শাসন করার মতো সুনাগরিক তৈরি করতে হয়, তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি নজর দিতে হবে। বস্তুত অর্থে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই এরকম আদর্শ সুনাগরিক তৈরি করতে পারে।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাকে একজন মানুষের মেরুদণ্ড উল্লেখ করে ঢাবি উপাচার্য বলেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা একজন মানুষের মেরুদণ্ড তৈরি করে দেয়। পৃথিবীর যে দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা যতবেশি শক্তিশালী সে দেশের উচ্চশিক্ষাও ততবেশি শক্তিশালী। সে দেশ অর্থনৈতিকভাবেও শক্তিশালী হয়। সেজন্য বলা হয়, একটি দেশের অর্থনীতি নির্ভর করে একটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থার উপরে।

আদর্শ সামাদের পুনর্মিলনী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আজকে আমরা লক্ষ্মীপুর সামাদ অ্যাকাডেমির সাবেক শিক্ষার্থীরা এখানে সমবেত হয়েছি। এখানে অনেক উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব আছেন। স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অনেকে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। আর যারা এখনও বেঁচে আছেন, তারা কোথাও না কোথাও আলো ছড়াচ্ছেন। স্কুলে এখন যারা বর্তমান শিক্ষার্থী আছেন, তাদের জন্য এসব উজ্জ্বল সাবেক শিক্ষার্থীরা প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করবে।

পুনর্মিলনীতে দেওয়া বক্তব্যে তিনি আদর্শ সামাদে নিজের অ্যাকাডেমিক পড়ালেখার কথা স্মরণ করেন। ঢাবি উপাচার্য বলেন, আমি ১৯৮২ সালে এই স্কুলের দশম শ্রেণি থেকে উত্তীর্ণ হয়েছি। তখন স্কুলটিতে ছাত্র সংসদ ছিল। ১৯৮০ সালে যে ছাত্র সংসদ হয়, সে সংসদের আমি নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। তখন স্কুলটিতে অনেক ধরনের সহশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হতো। স্কুলে কবিতা আবৃত্তি, বিতর্ক অনুষ্ঠান, খেলাধুলা, দেয়ালিকা লিখন—এই ধরনের সৃজনশীল কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো।

দুইজন শিক্ষকের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, আমার ডান পাশে বসা আছেন মোবারক স্যার ও খালেক স্যার। খালেক স্যার গণিত পড়াতেন আর মোবারক স্যার পড়াতেন ইংরেজি। তাদের কাছে আমরা রমজান মাসে প্রাইভেট পড়তাম। কলেজ শিক্ষায় যাদের কাছে হাতেখড়ি তাদের মধ্যে এখানে উপস্থিত আছেন ডা. ননী গোপাল সাহা ও মোবাশ্বের স্যার। বস্তুত অর্থে এই শিক্ষকদের অবদানে আমি আজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্বপালন করছি।

তিনি বলেন, স্কুল যত ভালো হবে, সে স্কুলের প্রোডাক্ট (শিক্ষার্থী) তত ভালো হবে। এই স্কুলের যেসব শিক্ষার্থীরা রয়েছেন, তারা তাদের জাতীয় জীবনে গর্বিত উপস্থিতির মধ্যদিয়ে এটি প্রমাণ করেন যে অতীতে এ স্কুলের শিক্ষাব্যবস্থার কি ধরনের সুনাম ছিল!

আদর্শ সামাদকে রাজনীতির চেয়ে সহশিক্ষায় বেশি গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে উপাচার্য বলেন, আজকের পৃথিবী যত না অ্যাকাডেমিক তার কোনো অংশেই সহশিক্ষা কার্যক্রম কম নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আজকে যারা লেখাপড়া করতে যান, তাদের যোগ্যতায় দেখা হয় তারা শিক্ষাজীবনে কে কতটুকু সহশিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

May be an image of dais and crowd

সামাদ স্কুলের সহশিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, আমার ধারণা, অতীতের মতো আমাদের এখানে সহশিক্ষা কার্যক্রম ততটা শক্তিশালী নয়। সহশিক্ষা কার্যক্রমগুলো যদি শক্তিশালী করা যায়, তাহলে কিন্তু প্রকৃত নেতৃত্ব দেওয়ার মতো যোগ্য সুনাগরিক বেরিয়ে আসবে। মূলত অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার বাইরেও সহশিক্ষা শিক্ষার্থীদের বিকশিত করতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। সহশিক্ষা কার্যক্রম যদি না থাকে সে অর্থে শিক্ষার্থীদের বিকশিত হওয়ার সুযোগ থাকে না।

অনুষ্ঠানে নাট্যকার রামেন্দু মজুমদার, লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন, লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভূঁইয়া, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম সালাহ উদ্দিন টিপুসহ বিভিন্ন পেশার হেভিওয়েট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।


সর্বশেষ সংবাদ