দুই শিক্ষকের মামলার রায় আজ

ভিকারুননিসা ছাত্রী অরিত্রী অধিকারী কেন আত্মহত্যা করেছিল?

অরিত্রীর  অধিকারী
অরিত্রীর অধিকারী  © সংগৃহীত

অরিত্রীর  অধিকারী। পড়তেন ভিকারুননিসা নূন স্কুলের প্রভাতি শাখার ইংরেজি মাধ্যমে নবম শ্রেণিতে। ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর (সোমবার) রাজধানীর শান্তিনগরের নিজ বাসায় ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস নেন এই ছাত্রী। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে ঢাকা মেডিকেল (ঢামেক) কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

তখন অরিত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষার সময় তার কাছে একটি মোবাইল ফোন পাওয়া যায়। এজন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ তার বাবা-মাকে ডেকে পাঠায়। তারা ৩ ডিসেম্বর (সোমবার) স্কুলে গেলে স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের জানায়, অরিত্রী মোবাইল ফোনে নকল করছিল, তাই তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের (টিসি) সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, স্কুল কর্তৃপক্ষ মেয়ের সামনে মা-বাবাকে অনেক অপমান করে। এই অপমান এবং পরীক্ষা আর দিতে না পারার মানসিক আঘাত সইতে না পেরে অরিত্রী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। বাসায় ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দেয় অরিত্রি।

অরিত্রীর বাবা জানান, তাদেরকে স্কুলে ডেকে নেওয়া হয়েছিলো। তাদেরকে বলা হয়েছিল, পরীক্ষার সময় তাদের মেয়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার করেছে। এজন্য তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ মেয়েটিকে বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নিতে দেবে না বলে জানায়। এমনকি, তাকে টিসি দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শান্তিনগরের বাসায় ফিরে মেয়েটি তার ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়। তারপর, গলায় স্কার্ফ পেঁচিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করে।

পরে এ ঘটনায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌসসহ তিন জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করেন অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারী। আত্মহ্যার একদিন পর ২০১৮ সালের ৪ ডিসেম্বর রাজধানীর পল্টন থানায় দিলীপ অধিকারী বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

এরপর অরিত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌসসহ তিন জন শিক্ষককে বরখাস্ত করেছিলো কলেজটির পরিচালনা কমিটি। সেইসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই তিনজন শিক্ষকেরই এমপিও বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো।

২০১৯ সালের ২০ মার্চ এ দুই শিক্ষককে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক কামরুল হাসান তালুকদার। আসামিদের নির্দয় ব্যবহারে অরিত্রী আত্মহত্যায় প্ররোচিত হয় বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন তদন্ত কর্মকর্তা। একইসঙ্গে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় শ্রেণিশিক্ষক হাসনা হেনাকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করা হয়।

একই বছরের ১০ জুলাই এ দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। ২৫ নভেম্বর এ মামলার বাদী ও অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারীর জবানবন্দির মধ্য দিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এরপরে ২০২০ সালের ২৩ আগস্ট অরিত্রী মা বিউটি অধিকারী আদালতে সাক্ষ্য দেন। এ মামলার ১৮ সাক্ষীর মধ্যে ১৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।

২০২৩ সালের ২৭ নভেম্বর ঢাকার ১২তম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আব্দুল্লাহ আল মামুন রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের যুক্তিউপস্থাপন শেষে এ মামলার রায় ঘোষণার জন্য আজ রবিবার দিন ধার্য করেন।


সর্বশেষ সংবাদ