বৃষ্টি এলেই ক্লাস রুমে পানি, দিতে হয় ছুটি

সরকারি বধির হাই স্কুল

চাল দিয়ে পানি পড়ে নষ্ট হচ্ছে সরকারি বধির হাই স্কুলের ক্লাসরুম
চাল দিয়ে পানি পড়ে নষ্ট হচ্ছে সরকারি বধির হাই স্কুলের ক্লাসরুম  © টিডিসি সম্পাদিত

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত দেশের একমাত্র স্কুল ‘সরকারি বধির হাই স্কুল’। ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত স্কুলটি রয়েছে নাজুক পরিস্থিতিতে। আবাসন, চিকিৎসা সেবাসহ নানা সংকটে প্রতিষ্ঠানটি। স্কুলের টিনশেডের ঘরগুলো ভাঙাচুরা হওয়ায় বৃষ্টি এলেই চাল দিয়ে পড়ে বৃষ্টি। ঝড়-বৃষ্টি হলেই দিতে হয় স্কুল ছুটি। 

সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর বিজয় নগরে থাকা স্কুলের টিনশেডটি বর্তমানে প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। ২৫০ জন শিক্ষার্থীর জন্য ছয়টি পুরাতন জরাজীর্ণ শ্রেণিকক্ষ ও একটি  টয়লেট, মেয়েদের জন্য নেই আলাদা বাথরুমের ব্যবস্থা। আর শ্রেণিকক্ষের প্রায় প্রতিটি রুমের ফ্যান লাইটের সুইচবক্সগুলো খোলা অবস্থায় রয়েছে।

এমনকি ক্লাসরুমের দরজা-জানালাসহ উপরের চাল ভাঙাচোরা অবস্থায়। বর্ষাকালে টিনের ছিদ্র দিয়ে পড়ে বৃষ্টির পানি। বাধ্য হয়েই শিক্ষার্থীদের ছুটি দিতে হয়। বৃষ্টির পানি পড়ায় অধিকাংশ বেঞ্চ নষ্ট হওয়ার পর্যায়ে। পুরাতন, জরাজীর্ণ ভবনটি নিচু হওয়ায় ঝড় তোফানে কক্ষগুলো ধুলাবালিতে ঢেকে যায়। স্কুলের ২৫০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে মাত্র ১২ জন শিক্ষক রয়েছে। তাদের বসার জন্যও নেই আলাদা রুম বা কক্ষ। শিক্ষক সংকট রয়েছেন বলে জানা যায়।

আরও পড়ুন: ২০ বছর ধরে হাজী সেলিমের দখলে দেশের একমাত্র সরকারি প্রতিবন্ধী স্কুলের জমি

এ ছাড়াও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা দেশের একমাত্র ‘সরকারি বধির হাইস্কুলটিতে’ নেই কোন আবাসন ব্যবস্থা। বধির সংস্থার অধীনে থাকা ছাত্রাবাসে টাক খরচ করে থাকতে হয় তাদের। অতিরিক্ত খরচের কারণে অনেকে ভর্তি হতে চান না এখানে। হোস্টেলে থাকেন মাত্র ৮০ জন শিক্ষার্থী। 

জানা গেছে, ১৯৬৩ সালে বধির সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। আর ১৯৬৬ সালে এ সংস্থার অধীনে নৈশকালীন স্কুল হিসেবে যাত্রা শুরু করে সরকারি বধির হাইস্কুল। পরে ১৯৮৪ সালে জুনিয়র হাইস্কুল। ১৯৯০ সালে হাইস্কুল হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে এবং ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হয়।

২০১৬ সালে তা সরকারি স্কুল হিসেবে জাতীয়করণ হয় এবং ২০২০ সালে তা বাস্তবায়ন হয়। আর ২০০৫ সালে তৎকালীন সরকার রাষ্ট্রপতির পক্ষে বধির স্কুলের নামে পুরান ঢাকার লালবাগ এলাকায় ১০০ শতাংশ জমি চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে ঢাকা জেলা প্রশাসন। ২০২২ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জমিটি উদ্ধারে নির্দেশ দিলেও তা উদ্ধার হয়নি। এমনকি বর্তমান জায়গায় একটি ভবন নির্মাণের কথা বললেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।

স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘এখানকার বাচ্চারা অনেক অবহেলিত, তাদের জন্য সরকারি খরচে নেই আবাসন ব্যবস্থা, যেটি রয়েছে তা বধির সংস্থার অধীনে, সে হোস্টেলে থাকতে হলে একজন বাচ্চাকে প্রায় ৪ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। যা তাদের সামর্থ্যের বাইরে। সরকারি খরচে থাকার ব্যবস্থা হলে শিক্ষার্থী সংখ্যাও বাড়তো। ফলে যারা দূর-দূরান্তের তারা এখানে ভর্তি হন না।’

সরকারি বধির হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আমিনুল ইসলাম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘ঘরগুলো অনেক পুরাতন, ঝড়-বৃষ্টি এলেই স্কুল ছুটি দিতে হয়। কারণ টিনের চাল দিয়ে পানি পড়ে। বর্ষাকালে তো ক্লাস চালানো খুবই কষ্টকর হয়ে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দিকে কারও নজর নেই, আমরা নানা সংকটে রয়েছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেশের একমাত্র এই স্কুলটি নাজুক পরিস্থিতিতে রয়েছে। অথচ সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে থাকা বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের জন্য সুন্দর ব্যবস্থাপনা রয়েছে। আমাদের বাচ্চাদের প্রতি নজর দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করছি।’


সর্বশেষ সংবাদ