স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষা, গবেষণা ও চাকরি পেতে যা জানা জরুরি

স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষা
স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষা  © সংগৃহীত

বর্তমানে শিক্ষার্থীদের অন্যতম একটি লক্ষ্যে হচ্ছে বাহিরের দেশ থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের স্কলারশিপের জন্য চেষ্টা করে থাকেন। যাতে বিনামূল্যে বা আংশিক অর্থায়নেই বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমাতে পারেন। যারা ভালোমানের স্কলারশিপ নিয়ে ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, চায়না, কোরিয়া, ব্রুনাই, মালেশিয়াসহ উন্নত বিশ্বের বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ নিয়ে উচ্চশিক্ষা এবং রিসার্চ এর পাশাপাশি সেখানে চাকুরী করতে চান আজকের লেখাটা শুধুমাত্র তাদের জন্যে।  

ভালোমানের স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশ যেতে আপনার প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর সঠিক প্লান থাকতেই হবে। চলুন একটু জেনে নেয়া যাক।

বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য আমেরিকান ভালোমানের দামী স্কলারশিপ নিয়ে এমএস/পিএইচডি করতে যাওয়ার জন্য প্রফেসরদের সাথে যোগাযোগ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এই প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে অনুসরণ করলে আপনার স্কলারশিপ পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। নিচে ধাপে ধাপে এই প্রক্রিয়াটি বর্ণনা করা হলো: 

১. প্রফেসর খুঁজে বের করা
প্রথম ধাপ হল আপনার গবেষণা আগ্রহের সাথে মিল রয়েছে এমন প্রফেসর খুঁজে বের করা। এজন্য নিচের পদ্ধতিগুলি অনুসরণ করতে পারেন: 

* বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট: প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাইটে প্রফেসরদের তালিকা এবং তাদের গবেষণার ক্ষেত্র পাওয়া যাবে। 

* গবেষণা পেপার: আপনার আগ্রহের বিষয় নিয়ে প্রকাশিত গবেষণা পেপারগুলো খুঁজে দেখুন। পেপারগুলোর লেখকরা প্রায়ই প্রফেসর হয়ে থাকেন। 

* গুগল স্কলার: গুগল স্কলার ব্যবহার করে প্রাসঙ্গিক গবেষণা পেপার এবং তাদের লেখকদের খুঁজে বের করতে পারেন। 

২. প্রফেসরের গবেষণা এবং পটভূমি বোঝা
প্রফেসরের সাথে যোগাযোগের আগে তাদের গবেষণা এবং পটভূমি সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন। 

* প্রফেসরের ওয়েবসাইট: প্রফেসরদের ব্যক্তিগত বা ল্যাবের ওয়েবসাইটে তাদের বর্তমান গবেষণা প্রকল্প এবং অতীতের প্রকাশনা সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যাবে। 

* গবেষণা পেপার পড়া: প্রফেসরের সাম্প্রতিক গবেষণা পেপারগুলি পড়ুন এবং আপনার আগ্রহের সাথে মিল আছে কিনা তা দেখুন। 

* প্রফেসরের শিক্ষাগত পটভূমি:  তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং কর্মজীবনের ইতিহাস সম্পর্কে জানুন। 

৩. ইমেইল লেখার প্রস্তুতি
প্রফেসরদের সাথে প্রথম যোগাযোগ সাধারণত ইমেইলের মাধ্যমে হয়। ইমেইলটি স্পষ্ট, সংক্ষিপ্ত এবং পেশাদারী হওয়া উচিত। ইমেইল লেখার সময় নিচের বিষয়গুলো বিবেচনা করুন: 

* বিষয়বস্তু (Subject): বিষয়বস্তুতে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করুন আপনি কেন ইমেইল করছেন, যেমন "Prospective PhD Student Interested in Your Research". 

* উদ্বোধনী (Salutation): প্রফেসরের নাম সঠিকভাবে উল্লেখ করুন, যেমন "Dear Professor Dr. [Last Name]". 

* নিজের পরিচয়: সংক্ষেপে নিজের পরিচয় দিন, যেমন আপনার বর্তমান শিক্ষাগত অবস্থান, কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েট করেছেন এবং কোন বিষয়ে আগ্রহী। 

* গবেষণার আগ্রহ: প্রফেসরের কোন গবেষণার বিষয় আপনি আগ্রহী এবং কেন, তা উল্লেখ করুন। 

* সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত (CV): আপনার সংক্ষিপ্ত জীবনী সংযুক্ত করুন যাতে প্রফেসর আপনার শিক্ষাগত এবং পেশাগত পটভূমি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেন। 

* প্রশ্ন ও অনুরোধ: প্রফেসরের সাথে কাজ করার সুযোগ এবং পরবর্তী ধাপগুলো সম্পর্কে জানতে আগ্রহ প্রকাশ করুন। 

* শেষ কথা: বিনয়ের সাথে ধন্যবাদ দিয়ে ইমেইল শেষ করুন, যেমন "Thank you for your time and consideration. Sincerely, [Your Name]". 

৪. ইমেইল টেম্পলেট
নিচে একটি ইমেইলের নমুনা দেয়া হলো যা আপনি প্রফেসরকে ইমেইল করার জন্য ব্যবহার করতে পারেন: 

Subject: Prospective PhD Student Interested in Your Research 

Dear  Professor / Dr. [Last Name], 

My name is [Your Name], and I recently completed my [Your Degree] in [Your Major] from [Your University]. I am writing to express my interest in pursuing a PhD under your guidance in the Department of [Department Name] at [University Name]. 

I have read several of your publications on [Research Topic], particularly your work on [Specific Paper or Project], which aligns closely with my research interests. My undergraduate thesis focused on [Briefly Describe Your Thesis], and I am keen to expand my research in this area. 

Attached to this email is my CV, which provides more details about my academic background and research experience. I would be honored to have the opportunity to discuss potential research opportunities in your lab. 

Thank you for your time and consideration. 

Sincerely,
[Your Name]
[Your Contact Information] 

৫. ফলো-আপ ইমেইল
প্রথম ইমেইলের উত্তর না পেলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। প্রফেসররা অনেক ব্যস্ত থাকেন, তাই তারা ইমেইল মিস করতে পারেন। প্রথম ইমেইলের ২-৩ সপ্তাহ পর একটি ফলো-আপ ইমেইল পাঠাতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ: 

Subject: Follow-Up on Prospective PhD Student Inquiry 

Dear Dr. [Last Name], 

I hope this email finds you well. I am writing to follow up on my previous email sent on [Date of Initial Email] regarding potential PhD opportunities in your lab. I understand that you have a busy schedule, but I wanted to reiterate my strong interest in your research and my eagerness to contribute to your team. 

Thank you for considering my application. I look forward to the possibility of discussing this further with you. 

Best regards,
[Your Name] 

৬. ইন্টারভিউ প্রস্তুতি
প্রফেসর যদি আপনার ইমেইলে সাড়া দেন এবং সাক্ষাৎকারের জন্য আমন্ত্রণ জানান, তবে ইন্টারভিউয়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। 

* প্রফেসরের গবেষণা পুনরায় পড়ুন:  আপনার আলোচনার সময় প্রফেসরের গবেষণার বিষয়ে জ্ঞান প্রদর্শন করুন। 

* সংশ্লিষ্ট প্রশ্ন প্রস্তুত করুন:  প্রফেসরের গবেষণা, ল্যাবের কাজ এবং আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করুন। 

* নিজের কাজ নিয়ে কথা বলুন: আপনার পেছনের গবেষণা এবং অভিজ্ঞতা সম্পর্কে কথা বলার প্রস্তুতি নিন। 

৭. যোগাযোগের সতর্কতা:
প্রফেসরের সাথে যোগাযোগ করার সময় কিছু সতর্কতা মেনে চলা উচিত। 

* পেশাদারিত্ব বজায় রাখা: আপনার ইমেইল এবং কথোপকথনে পেশাদারিত্ব বজায় রাখুন। 

* ইমেইলের ব্যাকরণ এবং বানান:** ইমেইলে কোন ব্যাকরণ বা বানান ভুল যেন না থাকে তা নিশ্চিত করুন। 

* অত্যাধিক ইমেইল না পাঠানো: প্রফেসরকে অত্যাধিক ইমেইল পাঠানো এড়িয়ে চলুন। 

পরিশেষে, প্রফেসরের সাথে সফল যোগাযোগ স্থাপন করা এবং তাদের আস্থা অর্জন করা বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য আমেরিকাসহ বিশ্বের যেকোন দেশের ভালোমানের দামী স্কলারশিপ নিয়ে এমএস/পিএইচডি করতে যাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। সঠিক গবেষণা, পরিকল্পনা এবং পেশাদারিত্বের মাধ্যমে এটি করা সম্ভব। প্রফেসরের সাথে যোগাযোগের প্রক্রিয়া সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা এবং উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা আপনার সুযোগগুলোকে অনেক বাড়িয়ে দিতে পারে। সফলভাবে প্রফেসরের সাথে যোগাযোগ করতে পারলে স্কলারশিপ পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায় এবং আপনি আপনার একাডেমিক এবং পেশাগত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন।

লেখক, ড. মোহা: ইয়ামিন হোসেন প্রফেসর, ফিসারিজ বিভাগ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ