নীলক্ষেত মোড় অবরোধ

২০ মিনিট দৌঁড়েও সময় মত কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারেননি জসিম

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ জসিম
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ জসিম  © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সরকারি সাত কলেজের দর্শন বিভাগের তিনটি শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের নীলক্ষেত অবরোধ কর্মসূচির কারণে ওইদিন পরীক্ষা দিতে আসা স্নাতক ৪র্থ বর্ষ ও স্নাতকোত্তর শেষ পর্বের শিক্ষার্থীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। রাজধানীর জ্যামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অবরোধ কর্মসূচি ভোগান্তি বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। অল্প কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী সময় মত কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারলেও বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই দেরি করে এদিন পরীক্ষার হলে গিয়েছেন।

মোহাম্মদ জসিম। তিনি ঢাকা কলেজের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মাস্টার্স ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী। এদিন জসিমের স্টাডি অব আল-হাদীস কোর্সের পরীক্ষা ছিল। তিনি তার সাভারের বাসা থেকে ইডেন মহিলা কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা দেয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। সাভার থেকে গাবতলী পর্যন্ত এসে তিনি প্রচন্ড জ্যাম দেখতে পান। এরপর ধীরগতিতে কলাবাগান পর্যন্ত এসে পরীক্ষা শুরু আগে শেষ ২০ মিনিট দৌঁড়িয়েছেন। তবুও তিনি সময় মত কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারেননি। প্রশ্ন দেয়ার বেশ কিছুক্ষণ পর তিনি কেন্দ্রে পৌঁছান।

জসিম বলেন, কলাবাগান জ্যামে বসেছিলাম ১৫ মিনিট। তখন ঘড়িতে বেজেছিল ১১টা ৪০। পরে ভাবলাম এভাবে বসে থাকলে হবে না। তারপর আমি বাসের গেটের কাছে আসলাম সামনে তাকিয়ে দেখলাম অনেক জ্যাম। তারপর হেলপারের সাথে কথা বললাম, বললাম মামা ১২টায় পরীক্ষা শুরু হবে; যথাসময়ে যেতে পারবো? মামা বললো না, নিউমার্কেট যেতেই প্রায় ৩০-৪০ মিনিট লাগবো আপনি হেটে চলে যান।

‘‘পরে গাড়ি থেকে নেমে দৌঁড়ানি শুরু করলাম। ভাবলাম সামনে কোনো গাড়ি ছাড়লে দৌঁড়ে উঠে পড়বো। কিন্তু তখনও কোনো গাড়ি ছাড়েনি। সাইন্সল্যাবের পরে রাস্তা ফাঁকা ছিল। তবুও নিউমার্কেটের মত জায়গায় এসে কি আর দৌঁড়ানো যায়! অনেক জ্যাম আর অনেক মানুষ। পরে নীলক্ষেত এসে দেখি ছোটরা আন্দোলন করছে। পরে বাইরে মোবাইল রেখে দৌঁড়ে গিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করি। ততক্ষণে পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে।’’

জসিমের মত এমন অনেক ভুক্তভোগীই নিজেদের ভোগান্তির অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন। ইডেন মহিলা কলেজের মাস্টার্স শিক্ষার্থী পারভীন আক্তার বলেন, আমি ফার্মগেট থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত লেগুনায় এসেছি। কিন্তু পান্থপথ সিগন্যাল আসার পরেই যানজট শুরু। এরপর হেঁটে আমি পান্থপথ থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত আসতে ১টা বেজে যায়। আমার পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ। নীলক্ষেত থেকে সেখানে পৌঁছাতে আরও আধঘণ্টা মতো লাগতো। দু’ঘণ্টার পরীক্ষায় দেড় ঘণ্টা পর কেন্দ্রে পৌঁছালে তো আর পরীক্ষা দিয়ে লাভ নেই। এ জন্য আমি আর পরীক্ষা কেন্দ্রেই যাইনি।

৩ দাবিতে নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করেছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ

বুধবার (১৬ মার্চ) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সাত কলেজের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবিতে নীলক্ষেতের সড়ক অবরোধ করে রাখেন। এদিন সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ২০২০ সালের স্নাতক ৪র্থ বর্ষ, দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত ২০১৯ সালের মাস্টার্স শেষ পর্ব ও দুপুর ৩টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ২০১৭ সালের মাস্টার্স শেষ পর্ব (বিশেষ) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নিজেদের ভোগান্তির কথা জানিয়ে জসিম বলেন, তারা তাদের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করেছে। কিন্তু আমার মতে ওইদিন তাদের আন্দোলন করা উচিত হয়নি। আমরাও অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। তাদের সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো মাথায় রেখে এ ধরনের কর্মসূচি করা উচিৎ।

আরও পড়ুন: দর্শন বিভাগের আন্দোলনে ভোগান্তিতে সাত কলেজের পরীক্ষার্থীরা

আন্দোলনকারীদের দাবিগুলো হল- করোনা বিবেচনায় সিজিপিএ শর্ত শিথিল করে ১ম, ২য় ও ৩য় বর্ষের অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের বিশেষ বিবেচনায় পরবর্তী বর্ষে প্রমোশন, দর্শন বিভাগের প্রশ্নের মানবণ্টন পরিবর্তন ও ১০০ নম্বরের পরিবর্তে ৮০ মার্কের পরীক্ষা নিতে হবে এবং ২০ নম্বর ইনকোর্সের মাধ্যমে যোগ করতে হবে। এছাড়া গণহারে অকৃতকার্য হওয়ার কারণ নির্ধারণ ও প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং এর স্থায়ী সমাধান করতে হবে।

তবে শুধু আন্দোলনের কারণেই রাস্তায় এমন জ্যাম ছিল না বলে দাবি করেছেন আন্দোলনকারীদের কেউ কেউ। বেগম বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী নির্জর মুন জানিয়েছেন, আজ ১৬-১৭ সেশন ফাইনাল ইয়ার এবং মাস্টার্সের পরীক্ষার কথা বিবেচনায় রেখে ৯টার কর্মসুচী ১১টা থেকে শুরু করা হয়েছে। যাতে পরীক্ষার্থী ভাইদের কোন অসুবিধা না হয়। তারপরও সিনিয়র ভাইরা অভিযোগ করছে আমাদের জন্যই জ্যাম রাস্তায়। এদিন নীলক্ষেত যাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না, দীর্ঘ ২ মাস ধরে কোন কলেজের চেয়ারম্যান, প্রিন্সিপাল, ঢাবি প্রশাসনের কাছে এপ্লিকেশন নিয়ে যাওয়ার পর পজিটিভ কোন সাড়া দেয়নি।

তিনি জানান, শেষ পদক্ষেপ হিসেবে অনিচ্ছা সত্বেও নীলক্ষেতে যাওয়া ভুক্তভোগীদের। সিনিয়র ভাইরা আমাদের কথাগুলো একটু বুঝবেন। তারপরেও আমরা বলছি, সামনের কোন পরীক্ষার দিনে কোন ধরনের কোন কর্মসুচী দেয়া হবে না। যদিও কয়েক দিন ঢাকায় জ্যাম বেশি। অনেকের স্কুল-কলেজে ভর্তিসহ নানা কার্যক্রম চলছে, করোনার পর সব প্রতিষ্ঠান খোলার কারণেও এই যানজট সমস্যা খুব বেশি দেখা যাচ্ছে গত কয়েকদিন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence