ক্যাম্পাস বন্ধেও থেমে নেই ইবির সেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক সংগঠনগুলো
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক সংগঠনগুলো  © টিডিসি ফটো

করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সেই সাথে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়(ইবি) ক্যাম্পাসও বন্ধ রয়েছে। তবে থেমে নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর সেব কাজ। নেতৃত্ব গঠন, ক্যারিয়ার উন্নয়ন, রক্তদান কর্মসূচি, পথশিশু ও ছিন্নমূলদের সহযোগিতাসহ বিভিন্ন সমাজসেবামূলক বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে সংগঠনগুলো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, করোনাকালে ক্যাম্পাস বন্ধে তারা আগের মতো কাজ করতে পারছেন না। তবে অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। ক্যাম্পাস ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের সংগঠনগুলোর প্রাণ হচ্ছে ক্যাম্পাস। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকলে হয়তো শিক্ষার্থীদের নিয়ে আরো নানা রকম সৃজনশীল ও সমাজসেবামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে পারত বলে জানান তারা।

রোটারাক্ট ক্লাব অব ইসলামিক ইউনিভার্সিটির সভাপতি ও লোক প্রশাসন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আখতার হোসেন আজাদ বলেন, সামাজিক সংগঠনগুলোর প্রধান কাজ হলো সমাজসেবা ও সদস্যদের ব্যক্তিগত উন্নয়ন। দুঃখজনক হলেও সত্য, প্রায় দেড় বছর ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় সেবামূলক কাজ করার সুযোগ হারিয়েছি আমরা। তবে এই সময় ভার্চুয়ালি সদস্যদের দক্ষতা অর্জনে আমরা বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। একই সাথে সদস্যরা নিজ নিজ এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করে সেবামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

নারীদের স্তন ও জরায়ু-মুখ ক্যানসার সচেতনতায় কাজ করে করে সেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ক্যাপ’। সংগঠনটির সভাপতি রিয়াদুস সালেহীন বলেন, নারীদের ক্যানসার সচেতনতা সৃষ্টিকারী সংগঠন 'ক্যাপ' ২০১৫ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (কুষ্টিয়া) থেকে যাত্রা শুরু করে৷ বর্তমানে দেশের বিভিন্ন জায়গায় স্বেচ্ছাসেবীদের প্রচেষ্টায় নারীদের স্তন ও জরায়ু-মুখ ক্যানসার সচেতনতায় কাজ করে যাচ্ছে সংগঠনটি৷ এ ধরনের সংগঠনগুলো মূলত সমাজের মানুষদের নিয়ে কাজ করে। ক্যাম্পাস বন্ধ থাকার কারণে মানুষের কাছে যেয়ে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে যতটুকু সম্ভব মানুষদের সচেতন ও সহযোগিতা করা যায় সেটি অব্যাহত করছি।

সেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘বুননের’ সভাপতি ইযাবুল বারী বলেন, ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় আমাদের সংগঠনের উপার্জন নেই। এজন্য আমরা বড় ধরনের সহযোগিতা করতে পারছি না। তবে, আমরা যারা দায়িত্বে আছি তাদের নিজেদের টাকা দিয়ে মানুষের সাহেয্য সহযোগিতা করেছি।

‘নিরাপদ হােক রক্তদান, আমার রক্তে বাচুক প্রাণ’ স্লোগানকে সামনে রেখে ২০১৭ সালে যাত্র শুরু করে ‘রক্তিমা’। সংগঠনটি অসুস্থ ও অসহায় ব্যক্তিদের রক্ত দিয়ে সহায়তা করে আসছে। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক এইচ এম আরাফাত হোসেন বলেন, করোনা মহামারীর শুরুর দিকে সাংগঠনিক কার্যক্রম চলমান থাকলেও সময়ের সাথে সাথে সাংগঠিন কর্মকান্ড স্থবির হয়ে আছে। আমাদের কাজ যেহেতু অনলাইন আর ফোন কলের মধ্যেই হয়, সে ক্ষেত্রে করোনার মাঝেও কাজের চাপ কিছুই কমেনি। বরং বেড়েছে। তবে যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ বন্ধর কারণে আমাদের ডোনার পেতে বেগ পেতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতির মধ্য রক্তিমা বর্তমানে ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা রংপুরসহ মোটামুটি সারা দেশে রক্তদানের কাজটা ভালোভাবে করে আসছে। করোনাকালীন সময়ে যেখানে ডোনার খুজতে বেগ পেতে হচ্ছে এই দিক দিয়ে হিসাব করলে খুব ভালোভাবে রক্তিমা রক্ত ম্যানেজ করার কাজটি করে আসছে।

বিশ্ববিদ্যালয় লণ্ঠনের সভাপতি আব্দুর রউফ বলেন, মেধা ও মননে প্রগতিশীল বাংলাদেশ এই স্লোগানকে ধারণ করে লণ্ঠন কাজ করে যাচ্ছে‌। শিক্ষার্থীদের দক্ষতা অর্জনের লক্ষ্যে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে। কোভিড-১৯ এর কারণে গোটা পৃথিবী যখন থমকে গেছে তখন লণ্ঠন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা যেন বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা করতে পারে সে জন্য অনলাইনে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। তার মধ্যে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আমার কণ্ঠে আমার ভাষা শীর্ষক ভিডিও প্রতিযোগিতা। যা গোটা বাংলাদেশ বেশ সাড়া ফেলেছিল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকলে হয়তো শিক্ষার্থীদের নিয়ে আরো নানা রকম সৃজনশীল কর্মসূচি হাতে নেওয়া যেত। সেই সাথে করোনা প্রতিরোধে সচেতনতা মূলক কাজ করে যাচ্ছে লণ্ঠন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে সামাজিক সুস্থতা আনা সম্ভব। এছাড়া নিজেকে একজন চৌকস মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে একজন উদার মানুষ হতে হলে লেখাপড়া, রাজনীতি ও নিজের কাজের পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতায় কাজ করে থাকেন সেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো।

তাইতো সেচ্ছাসেবকরা কারও চিকিৎসার টাকা আবার কারও রক্তের প্রয়োজনে ছুটে যান এবং শীতার্ত মানুষের বাড়িতে গিয়ে উষ্ণতার পরশ ছড়িয়ে দেয়। তাদের সহযোগীতায় সমাজের অসহায় মানুষের বিদীর্ণ মুখে ফুটে ওঠে হাঁসি। তাদের মুখের হাঁসি দেখে মনে প্রশান্তি খুঁজে পান এসব সেচ্ছাসেবী সংগঠনের সেবকরা। মহামারী করোনার সংকটময় সময় কাটিয়ে আবার অসহায় মানুষদের সেবা করার প্রত্যাশা তাদের।


সর্বশেষ সংবাদ