করোনায় ঝরে গেছে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ১৮ শিক্ষার্থীর প্রাণ

করোনায় প্রাণ হারানো শিক্ষার্থীদের একাংশ
করোনায় প্রাণ হারানো শিক্ষার্থীদের একাংশ  © সংগৃহীত

গত বছরের মার্চে দেশে করোনা শনাক্তের পর বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সরকারের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত মতে, শিক্ষার্থীদের করোনা ভ্যাকসিনের আওতায় এনে দ্রুত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে। তখন হয়তো করোনার প্রাদুর্ভাব কাটিয়ে ফের মুখরিত হয়ে উঠবে শিক্ষার্থীদের চিরচেনা প্রাণের ক্যাম্পাসগুলো। শিক্ষার্থীরা ফিরে পাবে ক্যাম্পাসের সেই চিরচেনা রূপ।

তবে চিরচেনা সেই ক্যাম্পাসে আর ফেরা হবে না বিশ্ববিদ্যালয়-মেডিকেল পড়ুয়া অন্তত ১৮ শিক্ষার্থীর। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের এসময়ে করোনার প্রাণ গেছে এসব শিক্ষার্থীর। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সংবাদকর্মীদের তৈরি এক পরিসংখ্যান এমন তথ্য বলছে।

তথ্যমতে, গেল বছর মার্চে দেশে প্রথম করোনা শনাক্তের পর থেকে এখন পর্যন্ত করোনা  ও করোনা উপসর্গ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়-মেডিকেল পড়ুয়া ১৮ শিক্ষার্থী মারা গেছেন। সর্বশেষ গত ২৯ জুলাই করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন তানজিদা মোরশেদ নামের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ছিলেন।

দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। এরপর ১৭ মার্চ থেকে চলতি বছরের জুলাই মাসের ২৯ তারিখ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রিন্ট ও অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যের ভিত্তিতে এ পরিসংখ্যানটি তৈরি করা হয়েছে।

গত বছরের ৮ জুন করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম সুমন মারা যায়। মাদারীপুরের নিজ এলাকায় তিনি মারা যান। সুমন ডুয়েটে কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জনিয়ারিং বিভাগে এমএসসি কোর্সে অধ্যয়নরত ছিলেন।

গত বছরের ১৯ আগষ্ট করোনা ও কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. সাইফ উদ্দিন। তিনি ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের ছাত্র ছিলেন।

গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর কাকন মিয়া নামে ঢাকা বিশ্ববিদ‌্যালয়ের এক ছাত্র করোনার উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তিনি ঢাবির ইন্টান্যাশনাল বিজনেস বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। করোনার কারণে বিশ্ববিদ‌্যালয় বন্ধ থাকায় রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলায় নিজ বাড়িতে ছিলেন কাকন মিয়া।

গত ১৯ নভেম্বর কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম তপনের (২৮) মৃত্যু হয়েছে। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থী ছিলেন।

গত ২৩ জানুয়ারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মারুফ হোসেন মিনা নামে এক ছাত্র মারা গেছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির (৪৪তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী। আ ফ ম কামালউদ্দিন হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন মারুফ। তাঁর গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলায়।

৫ এপ্রিল নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের এক শিক্ষার্থী করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু বরণ করেছেন। রিমা আক্তার নামে ওই শিক্ষার্থী সমাজকর্ম বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের ছাত্রী ছিলেন। রিমার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায়।

গত ৮ এপ্রিল প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেলের ৫ম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. রাশেদ খান।

গত ৯ এপ্রিল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ১ম ব্যাচের শিক্ষার্থী ইউসুফ আলী মারা গেছেন। তার বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলায়।

গত ১০ এপ্রিল করোনা উপসর্গ নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের শারমিন আক্তার রিমা নামে এক ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। শারীরিকভাবে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শারমিন  সমাজতত্ত্ব বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জে।

গত ২১ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়ে সাদেকুর রহমান শুভ নামের এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে৷ শুভ কুষ্টিয়ার রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন৷

গত ২৭ এপ্রিল প্রাণঘাতী মহামারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন সিলেটের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় লিডিং ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী তাহমিনা আক্তার লুবনা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির আইন বিভাগের ১৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।

গত ৯ জুলাই করোনা আক্রান্ত হয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্ট্যাডিজ বিভাগের শিব্বির আহমেদ নামে মাস্টার্সের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি শিব্বির আহমেদ কুষ্টিয়া শহরের লাহিনীপাড়ার এক মসজিদে ইমামতি করতো।

গত ১৩ জুলাই করোনা উপসর্গ নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল্লাহ ফাইয়াজ নামের এক ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ফাইয়াজ কুমিল্লা জেলার সদর উপজেলার মো. আখতারুল হকের ছেলে।

গত ১৪ জুলাই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গর্ভবতী অবস্থায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনীতা সরকার মিতু নামে সাবেক এক ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। মৃত নবনীতা সরকার মিতু বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনবিদ্যা বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

গত ১৬ জুলাই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সুমন হোসেন নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের এক ছাত্র মারা গেছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন।

গত ২৩ জুলাই করোনা আক্রান্ত হয়ে শারমিন সুলতানা শাম্মী নামের পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী মারা যান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সম্মান প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন।

দুইদিন পর  গত ২৫ জুলাই করোনাভাইরাসে একই  বিশ্ববিদ্যালয়ের  মেহেদি হাসান নামে এক ছাত্র মারা গেছেন। মেহেদি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ছিলেন।

সর্বশেষ গত ২৯ জুলাই করোনা উপসর্গ নিয়ে তানজিদা মোরশেদ নামের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ছিলেন।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া বলেন, বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবী এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ও এর ব্যতিক্রম নয়। করোনাকালে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ কয়েজনকে হারিয়েছি। যার ক্ষতি অপূরণীয়। তাদের চলে যাওয়াতে আমরা ব্যথিত।


সর্বশেষ সংবাদ