৩ মাস কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছাত্রলীগ সেক্রেটারির ভাই, অবৈধভাবে যোগদান করান রেজিস্ট্রার!
জবির স্টোর কিপার এনামুল
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৫৯ PM , আপডেট: ২৪ জুন ২০২৫, ১২:৫৮ PM

৬০ দিনের বেশি কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী পলাতক হিসেবে গণ্য করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালানোর পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) এক কর্মকর্তা টানা ৮৯ দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকেও গতমাসে অবৈধভাবে পুনরায় যোগদান করেছেন। ওই কর্মকর্তার নাম এনামুল হক। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টোর কিপার পদে কর্মরত আছেন তিনি। এছাড়া নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেনের আপন ভাই তিনি।
অভিযোগ উঠেছে, জবির পলাতক এই কর্মকর্তাকে অবৈধভাবে পুনরায় কর্মস্থলে যোগদান করতে সহায়তা করেছেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. শেখ গিয়াসউদ্দিন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর অভিযুক্ত কর্মকর্তা এনামুল বলছে, তার ডেঙ্গু হওয়ায় কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত করে যে ব্যবস্থা নেবে তা তিনি মেনে নেবেন।
জানা যায়, গত মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিমের বিদেশে অবস্থানের সময় তার অনুপস্থিতিতে চলতি দায়িত্ব পালন করছিলেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমিন। সূত্র জানায়, রেজিস্ট্রার গিয়াসউদ্দিন নিজে এই ফাইল ট্রেজারার সাবিনা শরমিনের নিকট নিয়ে গেলে তিনি স্বাক্ষর করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিন মাস অনুপস্থিত থাকার পরও গত ১৮ মার্চ তার এই অনুপস্থিতিকে ভবিষ্যতের ছুটির সাথে সমন্বয় করা হবে এই মর্মে একটি অফিস স্মারক ইস্যু করে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করান ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. গিয়াসউদ্দিন।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ধরনের ছুটি মওকুফ কর্মচারী (শৃঙ্খল ও আপিল) বিধিমালা-২০১৮ আইনের পরিপন্থী। উক্ত আইনের অনুচ্ছেদ ২(চ) অনুযায়ী, কেউ যদি ৬০ দিন কিংবা তদূর্ধ্ব কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকেন তাহলে তাকে চাকরি থেকে পলায়ন হিসেবে বিবেচনা করা হবে। সে হিসেবে পলায়নই করেছিলেন এনামুল হক।
অভিযোগ রয়েছে, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার গিয়াসউদ্দিনের প্রত্যক্ষ মদদে স্টোর কিপার এনামুল হকের ৮৯ দিনের অনুপস্থিতিকে ভবিষ্যতের ছুটির সাথে সমন্বয় করা হবে জানিয়ে কাজে যোগদানের ওই স্মারক ইস্যু করা হয়। বিষয়টি সামনে আসার পর, গত ২৪ মার্চ তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শুধু এনামুল হককে চাকরিতে পুনর্বাসনের বিষয়টিই নয়, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলায় মদদদাতা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামীপন্থী শিক্ষক-কর্মকর্তাদের একমাত্র শেল্টার দেয়ার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর।
অভিযোগ রয়েছে, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার গিয়াসউদ্দিনের বাড়ি গোপালগঞ্জ হওয়ার সুবাদে আওয়ামীপন্থী শিক্ষক কর্মকর্তাদের সাথে রেজিস্ট্রারের রয়েছে দহরম মহরম সম্পর্ক। এ কারণে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র জনতার বিরুদ্ধে অবস্থান করা শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের শাস্তির দাবি একাধিকবার উঠলেও নীরব ভূমিকা পালন করছে প্রশাসন। অভিযোগ আছে, এদের শাস্তি না হওয়ার বিষয়েও হস্তক্ষেপ করে যাচ্ছেন রেজিস্ট্রার।
অভিযুক্ত কর্মকর্তার এনামুল হক দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, তিনি অক্টোবর থেকে অসুস্থ হয়েছেন। পরে নভেম্বর তার ডেঙ্গু ধরা পড়েছে।
তার দাবি, এসময় তিনি এতোটাই দুর্বল হয়েছিল যে, তার পক্ষে অফিস করা সম্ভব হয়নি। চিকিৎসার কাগজপত্র তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে দিয়েছেন। এতে যদি কোনো ফল্ট থাকে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কোনো আপত্তি নেই।
এ বিষয়ে জানতে রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. শেখ গিয়াসউদ্দিনকে একাধিকবার কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
ওই অফিস স্মারক ইস্যুর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপচার্যের রুটিন দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমি এতে স্বাক্ষর করেছি। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তদন্ত হলে দেখা যাবে।
এ বিষয়ে জবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, যেহেতু আমি ওই সময়ে ছিলাম না, তাই বিষয়টির খোঁজ নিয়ে জানার চেষ্টা করছি, ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের ডেকে কিভাবে কী হলো তার খোঁজ-খবর নিচ্ছি। তবে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু করা যায় না, অভিযোগ প্রমাণিত হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
৬০ দিনের বেশি বাইরে থাকলে চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী পলাতক হিসেবে গণ্য করা হয় ও সে কিভাবে পুনরায় যোগদান করার সুযোগ পেল এ ব্যাপারে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য বলেছি।