নাড়ির টানে বাড়ি নয়, ক্যাম্পাস পাহারায় জবির নিরাপত্তাকর্মীরা

ক্যাম্পাস পাহারা দিচ্ছেন নিরাপত্তাকর্মীরা ও জবির লোগো
ক্যাম্পাস পাহারা দিচ্ছেন নিরাপত্তাকর্মীরা ও জবির লোগো  © টিডিসি সম্পাদিত

এক মাস সিয়াম সাধনার পর ঈদুল ফিতর আসে আনন্দ আর উৎসবের বার্তা নিয়ে। এই আনন্দ পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে দেশের নানা প্রান্তে থাকা মানুষরা নাড়ির টানে বাড়ি ফেরে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের মধ্যেও ব্যতিক্রম ছিল না। ছুটি পেয়ে সবাই পরিবার-পরিজনের কাছে ফিরে গেছেন।

তবে বাড়ি ফেরা হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু নিরাপত্তাকর্মীর। ঈদের ছুটিতেও তারা নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করছেন, নিশ্চিত করবেন ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা। 

জানা যায়, গত ২৩ মার্চ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটি কার্যকর হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা ধীরে ধীরে গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। কয়েক দিনের মধ্যে ক্যাম্পাস প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে। ক্লাসরুম, করিডোর, লাইব্রেরি, ভাস্কর্য চত্বর সব জায়গায় নেমে আসে নীরবতা।

আরো পড়ুন: মঙ্গল শোভাযাত্রা বর্জনের সিদ্ধান্ত ঢাবির চারুকলার ২৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের

কিন্তু ক্যাম্পাস পুরোপুরি ফাঁকা হয়ে গেলেও কিছু মানুষ রয়েছেন, যারা দিন-রাত এখানে অতন্দ্র প্রহরীর মতো দাঁড়িয়ে আছেন। অপরিচিত কেউ প্রবেশ করছে কি না, নারী-পুরুষ দলবদ্ধভাবে কোথাও যাচ্ছে কি না— সবকিছুতেই রয়েছে তাদের নজরদারি। 

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও ছাত্রী হলের নিরাপত্তায় ২৪ জন কর্মী দায়িত্ব পালন করেন। তারা তিনটি শিফটে কাজ করেন। ভোর ৬টা থেকে দুপুর ২টা, দুপুর ২টা থেকে রাত ১০টা, এবং রাত ১০টা থেকে ভোর ৬টা। এবারের ঈদের ছুটিতে তাদের মধ্যে ছয়জন বাড়ি গেলেও, ১৮ জন কর্মী ঈদের ছুটিতেও ক্যাম্পাস ও হল পাহারায় নিয়োজিত রয়েছেন। 

ঈদে দায়িত্বে থাকা বেশ কয়েকজন প্রহরীর সঙ্গে কথা হয় দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের এ প্রতিবেদকের। তাদের ভেতর একজন আব্দুস সাত্তার। বাড়ি তার কুমিল্লার দেবিদ্বারে, যিনি পরিবারকে রেখে  ঈদ করবেন ঢাকায়। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের নিরাপত্তায় প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে থাকেন।

তিনি বলেন, ‘ আমার বয়স হয়েছে, ছেলে-মেয়েরা বড় হয়েছে, এমনকি নাতি-নাতনিও রয়েছে। কিন্তু দায়িত্ববোধের কাছে পরিবার ও ঈদের আনন্দ একাকার হয়ে গেছে। দায়িত্ববোধ ও উপার্জনের তাগিদেই তাদের ছেড়ে ঢাকা  ঈদ করছি।’  

তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের সঙ্গে ঈদ কাটানোর আনন্দের তুলনা হয় না। ছুটি নেওয়ার সুযোগ থাকলেও নেইনি। কিছু ঋণ শোধ করতে হবে, তাছাড়া ঈদে বাড়ি গেলে খরচও বেশি হয়। কষ্ট লাগলেও এই ঈদে বাড়ি যাচ্ছি না। সামনে কোরবানির ঈদে চেষ্টা করবো পরিবারের সঙ্গে থাকার।’  

জবি ক্যাম্পাসের আরেক নিরাপত্তাকর্মী দেলোয়ার, বাড়ি তার বরগুনায়, নদীর ভাঙনে প্রায় সবকিছু হারিয়ে কেরানীগঞ্জে থাকেন পরিবার নিয়ে। কিন্তু বৃদ্ধা মা থাকেন গ্রামের বাড়িতে, মায়ের জন্য উপহার কিনেও ঈদে বাড়ি যেতে পারছেন না তিনি।

দেলোয়ার বলেন, ‘মায়ের জন্য আগেই নতুন জামা-কাপড় কিনে দিয়ে এসেছি, কিছু টাকা পাঠিয়েছি। তবে এবারের ঈদে বাড়ি যাওয়া হবে না। পরিবার কেরানীগঞ্জে থাকে, তাদের সঙ্গেই ঈদ করবো। মায়ের সঙ্গে ঈদ কাটাতে ভালো লাগে, কিন্তু চাইলেও সবসময় যাওয়া সম্ভব হয় না। গত মাসে গিয়েছিলাম, তখনই মায়ের জন্য যা লাগবে দিয়ে এসেছি।’ 

এদিকে জবির নিরাপত্তা কর্মী সুমনের সহকর্মীরাই তার পরিবার। রাত ১০টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত ডিউটি করেন তিনি। বাড়ি চাঁদপুরে হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার জন্য ঈদে বাড়ি যাবেন না তিনি।    

তিনি বলেন, ‘পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ অন্যরকম। গ্রামের মসজিদে ঈদের নামাজ পড়ার যে অনুভূতি, তা ঢাকায় পাই না। কিন্তু ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এখানে যারা সহকর্মী, তারাই আমার পরিবারের মতো। তাদের সঙ্গেই ঈদ উদযাপন করবো।’ 

প্রসঙ্গত, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এসব কর্মীরা বছরের পর বছর ধরে একইভাবে ঈদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তাদের অনেকেই পরিবারের মুখ চেয়ে চাকরিটা আঁকড়ে ধরে রেখেছেন। উৎসবের আনন্দ ছেড়ে ক্যাম্পাস পাহারায় কাটানো ঈদ তাদের কাছে নতুন কিছু নয়।

তবে এসব কর্মীদের যথাযথ স্বীকৃতি ও প্রণোদনা কি মিলছে? নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এই মানুষগুলোর ত্যাগ কি যথাযথভাবে মূল্যায়িত হচ্ছে কিনা?—প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের


সর্বশেষ সংবাদ