কাজ না করেও তিন বছর ধরে বেতন পাচ্ছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

ড. ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট

ড. ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট
ড. ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অফিসে অনিয়মিত এবং তেমন কোনো কাজ ছাড়াই তিন বছর ধরে মাসিক বেতন পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ যেন অফিসও করব না, বেতন নিতেও ছাড়ব না কথারই নামান্তর বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

তবে এ বিষয়ে খোঁজ নিতে গেলে সাংবাদিকদের দেখেই চড়াও হন বেরোবির রিসার্চ ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ড. ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের গবেষক ভর্তির অনুমোদন না পাওয়ায় বিষয়টি ২০২২ সালে জানাজানি হওয়ার পর তিন বছর ধরে ইনস্টিটিউটের তেমন কোনো কার্যক্রম পরিলক্ষিত হয়নি।

সরেজমিনে রোববার অফিস শুরুর পর সকাল সাড়ে ৯টায় ও বেলা ৩টায় গেলে একজন কর্মকর্তা ছাড়া বাকি কাউকে অফিসে পাওয়া যায়নি। পরের দিন সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় দুই থেকে তিনজনকে উপস্থিত পাওয়া যায়। এ সময় তারা সাংবাদিকদের দেখে চড়াও হয়ে সবাই একত্র হয়ে তেড়ে আসেন।

এ সময় কর্মকর্তাদের মধ্যে রোকনুজ্জামান রোকন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘আপনারা এসব দেখাশোনার কে, আপনাদের যা কিছু বলার আমাদের পরিচালক ভিসি স্যারকে বলবেন। শিক্ষকরা দুই-একটা ক্লাস নিয়ে সেমিস্টার শেষ করে দেয়। আপনারা এসব দেখেন না! আর আমাদের নিয়ে পড়ে আছেন।’

আরও পড়ুন : আ.লীগের বিচার না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন হবে না : সারজিস

বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, ইনস্টিটিউটে সর্বমোট সাতজন কর্মকর্তা ও একজন কম্পিউটার অপারেটর এবং একজন এমএলএস এস কর্মরত আছেন। সাতজন কর্মকর্তার মধ্যে আছেন অ্যাডিশনাল রেজিস্ট্রার খন্দকার গোলাম মোস্তফা, প্রিন্সিপাল সায়েন্টিফিক অফিসার ড. প্রসেনজিৎ সরকার, সাবেক উপাচার্য আবদুল জলিলের মেয়ে রুমানা ফেরদৌস জলিল, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রফিউল আজম খানের স্ত্রী ডেপুটি রেজিস্ট্রার সিরাজাম মুনিরা, সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার আবু সায়েম, সিনিয়র রিসার্চ অফিসার ও মুক্তার ইলাহির ভাই মেহজাবিন ইলাহি এবং রংপুর বিভাগের জিয়া পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও রিসার্চ অফিসার ড. মো. রোকনুজ্জামান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে এই অফিসারদের গবেষণা কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে গিয়ে দেখা যায়, কোনো কর্মকর্তারই কোনো গবেষণা নেই। গবেষণাবিষয়ক ওয়েবসাইট রিসার্চ গেটে খুঁজে মাত্র ড. প্রসেনজিৎ সরকার ও সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার আবু সায়েমের দুই-তিনটি গবেষণা সংক্রান্ত আর্টিকেল পাওয়া যায়, বাকিদের কোনো গবেষণা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানান, এই ইনস্টিটিউটের দু-একজন বাদে কেউই নিয়মিত অফিস করেন না। এ ছাড়া তারা গবেষণায়ও মনোযোগী না। বেশির ভাগই ব্যক্তিগত কাজে সময় দেন। অন্য দপ্তরে যেখানে লোকবল সংকট, সেখানে তিন বছর ধরে কোনো কার্যক্রম ছাড়াই এভাবে এত কর্মকর্তাকে বসিয়ে বেতন দেওয়া যেন ‘অফিসও করব না, বেতন নিতেও ছাড়ব না’ কথারই নামান্তর।

আরও পড়ুন : এনসিপির পরবর্তী সাংগঠনিক কাজ কী, জানালেন নাহিদ

বিষয়টি নিশ্চিত করে উপাচার্য বলেন, কর্মকর্তা, কর্মচারীর বিরুদ্ধে নিয়মিত অফিস না করার অভিযোগ আমরা এর আগেও পেয়েছি। তখন তাদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছি। কোনো প্রকাশনা ছাড়া রির্সাচের এ ধরনের দপ্তরে তারা কীভাবে জয়েন করেছেন, এটিই আমার প্রশ্ন। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য রেজিস্ট্রারকে দায়িত্ব দিয়েছি।

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ৩ ডিসেম্বর দশম সিন্ডিকেট সভার নবম সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ড. ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠা হয়। এই ইনস্টিটিউট থেকে এমফিল, পিএইচডি ডিগ্রি দিতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপর ২০১১ সালের ৩ নভেম্বর ২০তম সিন্ডিকেট সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১২ সালের ৭ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ২০১১-২০১২ শিক্ষাবর্ষ থেকে এমফিল, পিএইচডিতে ভর্তি করানো হয়।


সর্বশেষ সংবাদ