ভাড়া ভবনে ভিসির কক্ষ সাজাতে ব্যয় ২০ লাখ টাকা

উপাচার্যের এই কক্ষের সাজ-সজ্জায় ব্যয় হয়েছে ২০ লাখ টাকা
উপাচার্যের এই কক্ষের সাজ-সজ্জায় ব্যয় হয়েছে ২০ লাখ টাকা  © টিডিসি ফটো

চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চাঁবিপ্রবি) ভাড়া ভবনে উপাচার্য অধ্যাপক ড. পেয়ার আহমেদের কক্ষ সাজাতে ব্যয় হয়েছে ২০ লাখ টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজস্ব বাজেট থেকে এ অর্থ ব্যয় করার অভিযোগ উঠেছে। যদিও এ খাত থেকে ভাড়া ভবনের সাজসজ্জায় ব্যয়ের এখতিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নেই বলে জানিয়েছে তদারক সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)।

এ বিষয়ে ইউজিসির অর্থ, হিসাব ও বাজেট বিভাগের পরিচালক মো. রেজাউল করিম হাওলাদার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ভাড়া ভবনে এ ধরনের ডেকোরেশন করা যায় না। চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এমন কিছু করেছে কি না, আমার জানা নেই।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁদপুর সদরের কুমিল্লা রোডের ওয়াপদা এলাকার খলিশাঢুলী এলাকার একটি ভাড়া ভবনে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই), ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইসিটি) এবং বিবিএ—এই তিন বিভাগের ৯টি ব্যাচের ক্লাসের জন্য মোট ছয়টি শ্রেণিকক্ষ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়টির।

প্রতি বিভাগের জন্য দু’টি করে শ্রেণিকক্ষে কোনো মতে পাঠদান দেওয়া হতো। এ ছয় শ্রেণিকক্ষের মধ্যে একটি কক্ষ নতুন করে সাজানো হয়েছে। বর্তমানে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

‘ভাড়া ভবনের জন্য রাজস্ব বাজেট থেকে অর্থ ব্যয় করা যায় না।  চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে আমরা তদন্ত দল পাঠাব। তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রভাষকদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে।’—অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ, চেয়ারম্যান, ইউজিসি

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে আগে থেকেই শ্রেণিকক্ষের সংকট ছিল। সেখানে আইসিটি বিভাগের একটি কক্ষ বাতিল হওয়ায় সংকট আরও বাড়বে। উপাচার্যের জন্য আলাদা একটি কক্ষ থাকার পরও আইসিটি বিভাগের শ্রেণিকক্ষকে উপাচার্যের কক্ষ বানানো এবং ভাড়া ভবনে এ ধরনের সাজসজ্জার প্রয়োজন ছিল না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ভাড়া ভবনে রাজস্ব বাজেট থেকে রুম রেনোভেশনের জন্য এমন খরচ করা হলে ইউজিসির অডিট আপত্তি হবে, বিষয়টি জানার পরও উপাচার্য কিংবা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এ ব্যয় করেছেন। কী কারণে করেছেন, সেটি তারাই ভালো বলতে পারবেন।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার পদটি তৃতীয় গ্রেডের। এই পদে দশম গ্রেডের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আল মামুনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ৯ম গ্রেডের সেকশন অফিসার সাজ্জাদুল ইসলামকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব বিভাগের পরিচালকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি বিধিমালার তথ্য বলছে, চলতি দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পদের এক ধাপ নিচের পদের ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেওয়া যাবে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আইসিটি বিভাগের যে কক্ষের সাজসজ্জা করা হয়েছে, সেটি ৬২৫ বর্গফুটের। কেবল অভ্যন্তরীণ সজ্জায় এ কক্ষের জন্য ব্যয় করা হয়েছে ১৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া দুটি এসির জন্য দুই লাখ, চেয়ার-টেবিলের জন্য এক লাখ ও সোফার জন্য দুই লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. পেয়ার আহমেদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘রুম সাজানোর বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা করেছেন। এখানে টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে হলে অনেক কিছুরই প্রয়োজন রয়েছে। যখন যেটা প্রয়োজন হয়েছে, সেটা কেনা হয়েছে।’

আইন ভঙ্গ করে বিভাগের চেয়ারম্যান-রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব প্রদান
গত ৫ আগস্ট পটপরিবর্বনের পর ৮ নভেম্বর চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান অধ্যাপক ড. পেয়ার আহমেদ। এরপর বিধি ভঙ্গ করে প্রভাষককে বিভাগের প্রধান, ১০ম গ্রেডের কর্মকর্তাকে রেজিস্ট্রার ও ৯ম গ্রেডের সেকশন অফিসারকে পরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, আইসিটি বিভাগের প্রভাষক সোহেল রানাকে বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।  সিএসই বিভাগের প্রভাষক জাহিদুল ইসলাম এবং বিবিএ বিভাগের প্রভাষক বায়েজিদ আহমেদ রনিকে বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে বলা হয়েছে, ‘অধ্যাপকদের মধ্য থেকে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে একজনকে বিভাগীয় চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত করা যাবে; অধ্যাপক না থাকলে সহযোগী অধ্যাপককে; সহযোগী অধ্যাপক না থাকলে সহকারী অধ্যাপকদের মধ্যে থেকে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে একজনকে উপাচার্য বিভাগীয় চেয়ারম্যান নিযুক্ত করতে পারবেন। কোনো অবস্থাতেই সহকারী অধ্যাপক পদমর্যাদার নিচের কাউকে চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা যাবে না।’

সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার পদটি তৃতীয় গ্রেডের। এ পদে দশম গ্রেডের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আল মামুনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ৯ম গ্রেডের সেকশন অফিসার সাজ্জাদুল ইসলামকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব বিভাগের পরিচালকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী, চলতি দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পদের এক ধাপ নিচের পদের ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেওয়া যাবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও কর্মকর্তা সংকট রয়েছে উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. পেয়ার আহমেদ বলেন, ‘প্রভাষকদের ভারপ্রাপ্ত প্রধানদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিভাগের কার্যক্রম গতিশীল করতে। এছাড়া রেজিস্ট্রার ও অর্থ শাখার কার্যক্রম এগিয়ে নিতে এখানে ৯ম ও ১০ম গ্রেডের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যা করা হয়েছে, তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালোর জন্য করা হয়েছে।’

ভাড়া ভবনের জন্য রাজস্ব বাজেট থেকে অর্থ ব্যয় করা যায় না বলে জানিয়েছেন ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে আমরা তদন্ত দল পাঠাব। তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রভাষকদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence