ভুয়া টিউশন মিডিয়ার প্রতারণার ফাঁদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
- মাভাবিপ্রবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:০৮ PM , আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৫, ০৩:৪৭ PM
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত টিউশন মিডিয়ার প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা, যারা নতুন শহরে এসে টিউশনি খুঁজতে যান, তারা এসব প্রতারণার মূল লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছেন। ফেসবুকে প্রলোভনমূলক বিজ্ঞাপন দিয়ে টিউশন দেয়ার আশ্বাস দিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এক শ্রেণির প্রতারক চক্র।
নতুন শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে এসব চক্র ফেসবুকে পোস্ট দেয়—টিউশনি পেতে কোনো টাকা লাগবে না, একেবারে ফ্রি রেজিস্ট্রেশন করুন। এরপর তারা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ব্যক্তিগত তথ্য ও মোবাইল নম্বর নেয় এবং রেজিস্ট্রেশনের জন্য একটি কোড পাঠায়। অনেকেই না বুঝে ওই কোড দিয়ে দিলে তাদের ফেসবুক একাউন্ট হ্যাক হয়ে যায়। এরপর প্রতারকরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করতে থাকে কিংবা তাদের পরিচিতজনদের কাছেও টাকা চেয়ে ব্ল্যাকমেইল করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলছেন, টিউশন খোঁজার সময় তারা যেন অপরিচিত ফেসবুক পেজের ফাঁদে পা না দেন। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ফেরদৌস শান্ত বলেন, টিউশন মিডিয়ায় নিজের ব্যক্তিগত তথ্য, ফোন নম্বর দেয়া থেকে বিরত থাকুন। কোনো গুগল ফর্ম পূরণ করবেন না। টিউশন পেতে সিনিয়রদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন, তারা নির্ভরযোগ্য মাধ্যম থেকে ব্যবস্থা করতে পারবেন।
সরেজমিনে তদন্ত করে জানা গেছে, দুইটি পেজের নাম সবচেয়ে বেশি শোনা যাচ্ছে। একটি ‘Tuition Tangail’ এবং অন্যটি ‘টাঙ্গাইল টিউশনি’। এই পেজগুলো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পরে টিউশনি দেয় না, কিংবা কোনো যোগাযোগ রাখে না। শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকার পাশাপাশি প্রশাসনের পক্ষ থেকেও প্রতারকদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া জরুরি বলে মনে করছেন ভুক্তভোগীরা।
পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ইশতিয়াক বলেন, তারা প্রথমে খুব বিনয়ের সঙ্গে মেসেজ পাঠায়—‘ভাই, শরীর খারাপ, একটু সাহায্য করেন, ৫০ টাকা মোবাইল রিচার্জ পাঠান, পরে ফেরত দেবো।’ আমি সহানুভূতি দেখিয়ে পাঠালাম, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে তারা আমাকে ব্লক করে দিল!
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক শিক্ষার্থী (ছদ্মনাম দীপা) বলেন, টিউশনের অফার দেখে কমেন্ট করেছিলাম। এরপর এক ব্যক্তি ইনবক্সে যোগাযোগ করেন, আমাকে বিস্তারিত জানতে চান—আমি কোন বিষয়ে পড়ি, কোন বর্ষের ইত্যাদি। তারপর বলেন, টিউশন নিশ্চিত, কিন্তু গ্যারান্টি হিসেবে একটি কোড পাঠিয়ে তা দিতে বলেন। পরে বুঝতে পারি, এটা ছিল ফেসবুকের রিসেট কোড। আমি না বুঝে দিয়ে দিই, এরপরই আমার একাউন্ট হ্যাক হয়ে যায়।
অনেক শিক্ষার্থী অগ্রিম টাকা পাঠিয়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। ব্যবস্থাপনা বিভাগের ভুক্তভোগী মো. নাজমুল হাসান ভূঁইয়া বলেন, টাঙ্গাইল টিউশন মিডিয়া থেকে টিউশন দেয়ার কথা বলে ৩০০ টাকা নিয়েছিল। পরে আর যোগাযোগ করেনি, ফোনও রিসিভ করে না।
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ফেরদৌস শান্ত বলেন, আমরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনেক সময় আর্থিক চাপে থাকি, আর সেই দুর্বলতাকে পুঁজি করে কিছু টিউশন মিডিয়া প্রতারণা করছে। তারা অগ্রিম টাকা নেয়, কিন্তু টিউশনির ব্যবস্থা করে না। কেউ টিউশন পেলেও এক মাসের বেশি টিকে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট ভাইবোনদের বলবো এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে, কোনো টিউশন মিডিয়াকে নিজের ব্যক্তিগত তথ্য,ফোন নাম্বার দিবেন না, তাদের দেওয়া কোনো গুগল ফর্ম পূরণ করবেন না। টিউশন পেতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়রদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। তারা আপনাকে নির্ভরযোগ্য টিউশনের ব্যবস্থা করতে সহায়তা করবেন।
এ বিষয়ে প্রক্টরিয়াল বডির সহকারী প্রক্টর মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ দিলে প্রশাসনিকভাবে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ভুয়া টিউশন মিডিয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছি।