ইবিতে শিক্ষকের অপসারণ দাবিতে ভিসি ভবন ঘেরাও; পরবর্তী সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত
- ইবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:৫৮ PM , আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৫, ১১:২৬ AM

প্রশাসনের আশ্বাসে শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক সমকামিতায় মিলিত হতে চাওয়া, ফলাফল টেম্পারিং, মানসিক নির্যাতন, নারী শিক্ষার্থীকে ফ্যানে ঝুলিয়ে পেটানো ও ছাদ থেকে ফেলে দেয়ার হুমকি, কথার অবাধ্য হলে ইন্টারনাল নম্বর কম দেওয়া, ক্লাসে মেয়েদের জামা কাপড় নিয়ে কটূক্তি ও তাদের গালাগাল করা সহ ২৭ টি অভিযোগে অভিযুক্ত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাফিজুল ইসলাম। তাকে চূড়ান্ত বহিষ্কারের দাবিতে করা উপাচার্য ভবন ঘেরাও কর্মসূচি থেকে সরে এসেছে শিক্ষার্থীরা। পরবর্তী সিন্ডিকেটে তার শাস্তির বিষয় পুনর্বিবেচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার আশ্বাস পেলে অবস্থান কর্মসূচি থেকে সরে আসেন তারা।
আজ মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ক্যাম্পাসের বটতলা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পরবর্তীতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন তারা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী, প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতি অধ্যাপক ড. শেখ জাকির হোসেন, প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান এসে শিক্ষার্থী এবং উপাচার্যের সাথে কথা বলে সুরাহার আশ্বাস দেন। পরে প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি স্থগিত করে।
শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা তদন্ত কমিটিকে সব অভিযোগের প্রমাণ সহ উপস্থাপন করেন। দীর্ঘ ৬ বছর ধরে তারা শিক্ষক হাফিজের নির্যাতন সহ্য করে আসছেন। প্রশাসন শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা না করে শিক্ষক হাফিজুলের পক্ষে রায় দিয়েছে। সেই শিক্ষকের শাস্তি ১ বছরের ছুটিকে তারা প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভ মিছিল করছেন। শিক্ষার্থীদের দাবি, এত এত অভিযোগের প্রেক্ষিতে মাত্র ১ বছরের বাধ্যতামূলক ছুটি দিয়ে হাফিজকে আরও শাস্তি থেকে বাঁচিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের দাবি পূরণ না হলে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন আরও কঠোর করারও হুঁশিয়ারি দেন তারা।
এর আগে, গত বছরের ৭ অক্টোবর সেই শিক্ষকের বহিষ্কারের দাবিতে আন্দোলনে নামে বিভাগের শিক্ষার্থীরা। ২৭ দফা অভিযোগ তুলে অপসারণের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক আটকে ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ করেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এর ভিত্তিতে ৮ অক্টোবর ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তদন্ত কমিটির তথ্যমতে অধিকাংশ অভিযোগের প্রমাণ পেলেও সেই শিক্ষক হাফিজুলকে ১ বছরের ছুটিতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়। এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে আবারও বিক্ষোভের ডাক দেয় ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থীদের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে থেকে সরে যেতে নির্দেশনা দিয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. এয়াকুব আলী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হাফিজুল ইসলামকে এক বছরের বাধ্যতামূলক ছুটি দিয়েছে, যা বহিষ্কারের সমান। তাকে শোকজ করা হবে, কিন্তু আমরা স্থায়ী বহিষ্কার করতে পারবো না। তার বিরুদ্ধে স্থায়ী বহিষ্কারের বিষয়টি শুধুমাত্র পারবে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর। আমাদের এখতিয়ার অনুযায়ী আমরা প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে একমত। এই প্রক্রিয়ায় নির্ধারিত আইনি ধাপ অনুসরণ করতে হবে, আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারেই দেখেছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, ‘তোমাদের আন্দোলনের সাথে সাথেই আমি উপস্থিত হয়ে তোমাদের দাবিদাওয়া শুনেছি। সার্বিক বিষয়ে উপাচার্যের সাথে আমার কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন এ নিয়ে একটা অ্যাপ্লিকেশন জমা দিতে। পরবর্তী সিন্ডিকেট মিটিংয়ে এর পুনর্বিবেচনা করে তারপর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’