ইবির দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের লিখিত অভিযোগ 

ইনজামুল হক সজল ও ইফফাত আরা
ইনজামুল হক সজল ও ইফফাত আরা  © টিডিসি সম্পাদিত

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের জিওগ্রাফি এন্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইনজামুল হক সজল এবং ইফফাত আরার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বিভগটির শিক্ষার্থীরা। এতে ইনজামুল হক সজলের বিরুদ্ধে সিনিয়র শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের এবং ইফফাত আরার বিরুদ্ধে ক্লাস নিয়ে স্বেচ্ছাচারিতা, ইন্টারনাল মার্ক টেম্পারিং এবং পরীক্ষার হল ও ভাইবা বোর্ডে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। 

শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন বিভাগের ২০১৯-২০, ২০২০-২১, ২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। 

ইনজামুল হকের বিরুদ্ধে দেওয়া অভিযোগপত্রে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, তার ল্যাব কোর্সের খাতা দেখেন ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের আবুল বাশার, আশিকুর রহমান রাব্বি ও অনিক হোসাইন। তারা পরীক্ষার ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশের আগেই কে কত মার্কস পেয়েছে, কে ফার্স্ট হয়েছে এই সংশ্লিষ্ট বিষয় প্রকাশের মাধ্যমে দাম্ভিকতা প্রকাশ ও ক্লাসে শিক্ষকদের মত আচরণ করেন তারা। আবুল বাশারের বিরুদ্ধে রয়েছে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ছাদে ডেকে হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনেরও অভিযোগও। এছাড়াও, এসাইন ল্যাব কোর্স (GIS ল্যাব, শিক্ষাবর্ষ: ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ এবং ফিজিক্যাল জিওগ্রাফি ল্যাব, শিক্ষাবর্ষ: ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ গুলোর খাতা ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের এই কতিপয় শিক্ষার্থীদের দিয়ে দেখানোর এবং এর সুযোগ নিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা বিভাগে একটি সুস্পষ্ট 'পাওয়ার প্র‍্যাক্টিস' চালান বলে উল্লেখ করেছে শিক্ষার্থীরা। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের কাছে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী অনিক হোসাইনের একটি অডিওবার্তাও রয়েছে বলে দাবি তাদের।

পৃথক অপর অভিযোগপত্রে সহকারী অধ্যাপক ইফফাত আরার বিরুদ্ধে কোর্স সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন না করা, ক্লাস না নেওয়া, নিয়ম বহির্ভূতভাবে ১১ মাস ছুটিতে থাকা, সভাপতির দায়িত্ব না নেওয়া, ইনকোর্স পরীক্ষা না নিয়েই ইচ্ছেমতো ইন্টারনাল মার্কস দেওয়া, পরীক্ষার হলে অত্যন্ত দুর্ব্যবহার এবং ভাইভাতে উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত ভাবে হয়রানি করার অভিযোগ তুলেছে শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও নবাগত ব্যাচ আসা মাত্রই কোর্স কন্টেন্ট না পড়িয়ে তিনি জিওগ্রাফি নিয়ে মগজধোলাইয়ে ব্যস্ত থাকা এবং পরীক্ষার হলে সামান্য বিষয় নিয়ে খাতা কেড়ে নিয়ে ৪০ মিনিট রেখে দেন বলেও অভিযোগ তাদের। 

এবিষয়ে সহকারী অধ্যাপক ইনজামুল হক সজল বলেন, আমি মনে করি এগুলো পরিপূর্ণ মিথ্যাচার। আমাদের এখানে ৩ জন মাত্র শিক্ষক নিয়ে বিভাগ চালাই, আমাদের পর্যাপ্ত স্টাফ নেই, ল্যাব এটেনডেন্ট নেই। আমরা প্রয়োজনের ক্ষেত্রে স্টুডেন্টদের সাহায্য নেই যেহেতু আমাদের যথেষ্ট এটেন্ডেন্ট নাই। এটাকে টেনে নিয়ে যদি তারা পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন পর্যন্ত নিয়ে যায় তাহলে আমার কিছু বলার নেই। প্রশাসন যদি তদন্ত কমিটি গঠন করে বা কোন পদক্ষেপ নেয় তাহলে আমি আমার অবস্থান জানাবো।

সহকারী অধ্যাপক ইফফাত আরা বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা প্রতিটি অভিযোগ মিথ্যাচার এবং প্রতিহিংসামূলক। বলা হচ্ছে আমি ইনকোর্স না নিয়েই নাম্বার দেই কিন্তু আমার এখানে উল্লেখ ই আছে যে আমরা ইনকোর্স/টিউটোরিয়াল অথবা প্রেজেন্টেশন অথবা এসাইনমেন্ট নিয়ে ইন্টার্নাল নাম্বার দিতে পারি। আমি ইনকোর্স না নিলেও প্রতিটি কোর্সেই এসাইনমেন্ট নেই এবং তার ভিত্তিতেই নাম্বার দেই। দ্বিতীয়ত, সভাপতির দায়িত্ব নেওয়াটা বাধ্যতামূলক না, সাবেক সভাপতি সজল স্যারের ঘটনা দেখে আমার মনে হয়েছে আমার দায়িত্ব না নেওয়াই ভালো হবে, তাই আমি দায়িত্ব নেইনি। 

ভাইভায় দুর্ব্যবহার এবং পরীক্ষার হলে খাতা নিয়ে ৪০ মিনিট রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, পরীক্ষার হলের একটি শৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনা আছে। কেউ যদি শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে তাহলে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের স্বার্থে আমাকে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হয়। যিনি অভিযোগ দিয়েছেন তিনি বারবার অন্যের খাতা দেখছিলেন বা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করছিলেন, তাই আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি। এছাড়া, ভাইভা বোর্ডে কোন প্রশ্নের উত্তর না পারার দায়ভার তো ওই শিক্ষার্থীর। আর একইসাথে ৪টি ব্যাচের সাথেই আমি দুর্ব্যবহার করলাম, এটা ত বাস্তবসম্মত না। প্রশাসন আমার কাছে জবাব চাইলে আমি আমার পক্ষ থেকে যা বলার বলব।


সর্বশেষ সংবাদ