এপ্রিলের আগেই আসছে সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের রূপরেখা

স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে আন্দোলনে সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা
স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে আন্দোলনে সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা  © সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সঙ্গে সাত কলেজের প্রায় ৮ বছরের ‘অমসৃণ’ যাত্রা শেষ হতে যাচ্ছে। এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। প্রাথমিকভাবে সাত কলেজকে ঢাবি থেকে পৃথক করে এ কলেজগুলোর সমন্বয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সমকক্ষ একটি স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর রূপরেখা প্রণয়ন করা হবে। এ লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজকে সভাপতি করে চার সদস্যের উচ্চপর্যায়ের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ কমিটি আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে তাদের কাজ সম্পন্ন করবে।

সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা ঢাবির অধীনে তাদের অ্যাকাডেমিক পাঠদানে সমন্বয়হীনতা, পরীক্ষার খাতার অবমূল্যায়ন ও ফল বিপর্যয়সহ নানা ধরনের অসঙ্গতির কথা উল্লেখ করে অধিভুক্তি বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছেন। তাদের দাবি, ঢাবি অধিভুক্তি বাতিল করে সাত কলেজের সমন্বয়ে একটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরাও সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিল চাচ্ছেন। দুপক্ষের শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে গত ২০ নভেম্বর ঢাকা কলেজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

আমাদের অনেক লম্বা সময় দেওয়া হয়েছে, তবে আমরা কোনো সময় নষ্ট না করে এগিয়ে যাবো। আমার মনে হয়, এ সময়ের আগেই আমরা কাজ শেষ করতে পারবো। শিক্ষার্থীদের আর দীর্ঘ অপেক্ষার মধ্যে রাখতে চাই না। -ইউজিসি চেয়ারম্যান ও কমিটির সভাপতি

ঢাকা কলেজে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেছেন, ‘অপরিকল্পিতভাবে সাত কলেজকে ঢাবি অধিভুক্ত করা হয়। এরপর থেকে কলেজগুলো নানা সমস্যায় ও সংকটে রয়েছে। এজন্য আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর বলেছিলাম, সাত কলেজকে আলাদা করে স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। স্বতন্ত্র পরিচয়ের জন্য আমরা একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করতে যাচ্ছি।’

শিক্ষা উপদেষ্টার এমন আশ্বাসের দেড় মাসেরও কম সময়ের মধ্যে এবার গঠিত হলো সেই কমিটি। সাত কলেজের স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর রূপরেখা প্রণয়নে গত রোববার (২৯ ডিসেম্বর) চার সদস্যের উচ্চপর্যায়ের এ বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গঠনের কথা জানিয়ে ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্টদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠি পাওয়ার কথা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে নিশ্চিত করেছেন ইউজিসি চেয়ারম্যান ও কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ। তার আশা, শিক্ষার্থীদের আর দীর্ঘ অপেক্ষায় না রেখে নির্ধারিত সময়ের আগেই তারা কাজ শেষ করতে পারবেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নব গঠিত ‍উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটিকে স্বাগত জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

কমিটির সদস্যরা হলেন- শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খালেদা আক্তার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ–উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ ও ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক তানজিমউদ্দিন খান। কমিটি গঠনের আদেশে বলা হয়েছে, ইউজিসির উপরে এ কমিটির সাচিবিক দায়িত্ব ন্যস্ত থাকবে। তা ছাড়া প্রয়োজন অনুযায়ী উচ্চশিক্ষার প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বিশেষজ্ঞকে কমিটিতে সদস্য হিসেবে সংযোজন করতে পারবে।

কমিটির কার্যাবলিতে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার ফলে উদ্ভূত সমস্যাবলির বিষয়ে ২৪ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটির মতামত ও সংগৃহীত তথ্যাবলি পর্যালোচনা করা; সাত কলেজের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি বাতিল করে কলেজগুলোর স্বতন্ত্র স্বত্ত্বা বজায় রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমকক্ষ একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে রূপান্তরের প্রক্রিয়া নির্ধারণ ও বিকল্পসমূহ বিবেচনা করা;

উপরোক্ত প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর জন্য প্রয়োজনীয় খসড়া সংবিধি প্রণয়ন করা; কমিটির সুপারিশে এইচএসসি থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত শিক্ষার মানোন্নয়নকে সর্বোপরি প্রধান লক্ষ্য হিসাবে বিবেচনা করা; কমিটি তার কার্যক্রমে সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে এবং ছাত্র-শিক্ষক প্রতিনিধি ও অন্যান্য অংশীজনকে সম্পৃক্ত করবে।

সাত কলেজ নিয়ে নবগঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটিকে স্বাগত জানাচ্ছি। রাষ্ট্র আমাদের শিক্ষাবৈষম্য দূর করে মানসম্মত উচ্চশিক্ষা বাস্তবায়নের যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তা শিক্ষার্থীরা ইতিবাচকভাবে নিয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা কমিটি পর্যালোচনা করে কিছু বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে দীর্ঘ মেয়াদকাল নিয়ে তাদের মাঝে অসন্তোষ রয়েছে। -আনিকা, ছাত্রী, ইডেন কলেজ

এদিকে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নব গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটিকে স্বাগত জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ কমিটির বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে আজ বুধবার (০১ জানুয়ারি) ঢাকা কলেজে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন তারা। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ও আন্দোলনের প্রতিনিধি জাকারিয়া বারী সাগর। তিনি বলেন, সাত কলেজের সমন্বয়ে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া আমাদের শিক্ষার্থীরা বিকল্প কোনো সমাধান চায় না। আরও সহজ ভাষায় বললে এর বাইরে কোনো কার্যকর বা উপযুক্ত সমাধানও নেই।

তিনি বলেন, এখন যে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠিত হয়েছে, এ কমিটির সদিচ্ছা থাকলে আগামী এক মাসের মধ্যে একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা জাতির সামনে তুলে ধরা সম্ভব। আর যদি এক মাসের বেশি সময় নেওয়া হয়, তাহলে শিক্ষার্থীরা এ ধীরগতিকে কালক্ষেপণ হিসেবে ধরে নেবে। আমরা আর নতুন কোনো ধরনের ছলচাতুরি দেখতে চাই না, এ কমিটির মাধ্যমে যদি আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন না ঘটে, আমরা ফের পড়ার টেবিল ছেড়ে রাজপথে নেবে আসতে বাধ্য হবো।

দীর্ঘদিন থেকে ঢাবি অধিভুক্তি বাতিল করে সাত কলেজের সমন্বয়ে একটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আন্দোলনে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। কলেজগুলো হলো- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ ও মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজ। অধিভুক্তির ফলে এসব কলেজে ভর্তি পরীক্ষা, পাঠ্যসূচি ও পরীক্ষা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিচালিত হয়ে আসছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা না করেই ঐতিহ্যবাহী এই সাত কলেজকে অনেকটা তড়িঘড়ি করে ঢাবি অধিভুক্ত করে বিগত সরকার। ফলে অধিভুক্তির পর থেকেই প্রশাসনিক ও অ্যাকাডেমিক বিভিন্ন সমস্যা সামনে আসে। কলেজগুলোর অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার না থাকা, সিলেবাস নিয়ে ধোঁয়াশা, ফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রতা, ত্রুটিযুক্ত ফল, রেকর্ড সংখ্যক শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। এসব নিয়ে কয়েক বছর ধরেই রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা।

সর্বশেষ, ক্ষমতায় পালাবদলের পর এই সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। আনন্দোলকারী শিক্ষার্থীরা বলেছেন, তারা স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়হীনতায় ভুগছেন। শিক্ষার্থীরা নিজেদের পরিচয় দিতে গিয়ে নানান সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষার্থীদের দাবি যাচাইয়ে একটি কমিটি গঠন করে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তাতেও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এরপর গত ৬ নভেম্বর শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা চলমান আন্দোলন সাময়িক স্থগিত ঘোষণা করে।

এরপর গত ২০ নভেম্বর ঢাকা কলেজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘আমরা একটা বিশেষজ্ঞ কমিটি করতে যাচ্ছি। এ কমিটি একত্রিত প্রতিষ্ঠানিক রূপ তৈরি করে সেখানে কলেজগুলোকে আরও কীভাবে স্বায়ত্তশাসন দেওয়া যায়, তাদের সুযোগ সুবিধা, অবকাঠামো কীভাবে বাড়ানো যায় এবং সেগুলোতে সমন্বিতভাবে একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া যায়, সে লক্ষে কমিটি কাজ করবে। আর সাত কলেজের স্বতন্ত্র পরিচয়ের নাম সবার সঙ্গে আলোচনা করে দেওয়া হবে।’

আমরা আর নতুন কোনো ধরনের ছলচাতুরি দেখতে চাই না, এ কমিটির মাধ্যমে যদি আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন না ঘটে, আমরা ফের পড়ার টেবিল ছেড়ে রাজপথে নেবে আসতে বাধ্য হবো। -জাকারিয়া, ছাত্র, কবি নজরুল সরকারি কলেজ

কমিটি নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া
বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে ছাত্রী জাফরিন আক্তার বলেন, আমরা দেখছি, বিশেষজ্ঞ কমিটিকে চার মাস সময় দেওয়া হয়েছে। যদিও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, তবে এই দীর্ঘ সময়সীমাটি যৌক্তিকতার দিক থেকে প্রশ্নবিদ্ধ। বিগত চার মাসে সরকারের বিভিন্ন মহলে সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিল করে একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে এই কলেজগুলোর সাতটি পৃথক ক্যাম্পাসে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ফলে এখানে নতুন অবকাঠামো তৈরির জন্য অতিরিক্তি যে সময় ও আর্থিক ব্যায়ের প্রয়োজন ছিল, সেটা একেবারেই লাগছে না। আমরা মনে করি, সকলের সদিচ্ছা থাকলে বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদন দিতে কোনো ক্রমেই এত দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন নেই। আমাদের দাবি থাকবে, বিশেষজ্ঞ কমিটি সর্বোচ্চ ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের কার্য সম্পন্ন করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও বাস্তবায়নযোগ্য হয়, এমন একটি প্রতিবেদন দেবে।

সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিল করে একটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে গত ২১ অক্টোবর বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেছেন শিক্ষার্থীরা।

ইডেন কলেজের ছাত্রী আনিকা বলেন, সাত কলেজ নিয়ে নবগঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটিকে স্বাগত জানাচ্ছি। রাষ্ট্র আমাদের শিক্ষাবৈষম্য দূর করে মানসম্মত উচ্চশিক্ষা বাস্তবায়নের যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তা শিক্ষার্থীরা ইতিবাচকভাবে নিয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা কমিটি পর্যালোচনা করে কিছু বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে দীর্ঘ মেয়াদকাল নিয়ে তাদের মাঝে অসন্তোষ রয়েছে। এ ছাড়া কমিটিতে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি যুক্ত করার সুযোগের কথা উল্লেখ থাকলেও এর প্রক্রিয়া সম্পর্কে আমরা স্পষ্ট নই। আমাদের দাবি থাকবে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি ছাড়াও যদি আরও কোনো বিশিষ্টজন যুক্ত করার দরকার হয়, প্রয়োজন সাপেক্ষে সেটা করতে হবে। আমরা শিক্ষার্থীরা এই কমিটিকে ঢাবি থেকে মুক্তির সনদ হিসেবেই দেখছি। আশা করছি, শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের চাওয়া স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় আমরা খুব শিগগিরই পাবো।

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও আন্দোলনের প্রতিনিধি মো. আব্দুর রহমান বলেন, শিক্ষা উপদেষ্টা মহোদয়ের প্রতি সাত কলেজের প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। উচ্চশিক্ষায় পৃথিবীর ইতিহাসে পরিচয়হীনতার নজির নেই। শুধুমাত্র সাত কলেজের ক্ষেত্রেই এমনটা রয়েছে। তবে তিনি এবার শিক্ষার্থীদের পরিচয় নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নিয়েছেন। ঢাবির অধীনে সাত কলেজের একটা অমসৃণ যাত্রা চলমান রয়েছে। অধিভুক্তির পর থেকে বছরের পর বছর ধরে শিক্ষার্থীরা সাত কলেজের সংস্কারের দাবি জানিয়ে আন্দোলন-কর্মসূচি করে আসছেন। তবে আমরা এবার আর সংষ্কারের দাবি তুলিনি। বরং কীভাবে চূড়ান্ত মুক্তি ও উচ্চশিক্ষার মান নিশ্চিত করা যায়, সে লক্ষ্যে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছি। শিক্ষা উপদেষ্টা একজন উঁচু মানের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিক্ষক। তিনি আমাদের লাখ লাখ শিক্ষার্থীর চাওয়া অনুধাবন করে পদক্ষেপ নিয়েছেন। আমরা বিশ্বাস করি শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ স্যারের মাধ্যমেই আমরা চূড়ান্ত মুক্তি পাবো।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী এম আমিনুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে সাত কলেজের সমস্যা সমাধানে উচ্চপর্যায়ের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। কমিটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাদের কাজ শেষ করবেন। আশা করছি, এরমধ্যেই শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ‍উপযুক্ত সমাধান বেরিয়ে আসবে।

বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদন দিতে কোনো ক্রমেই এত দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন নেই। আমাদের দাবি থাকবে, কমিটি সর্বোচ্চ ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও বাস্তবায়নযোগ্য হয়, এমন একটি প্রতিবেদন দেবে। -জাফরিন আক্তার, ছাত্রী, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান ও কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের জন্য একটি স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর রূপরেখা প্রণয়নে কমিটি গঠন করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি আমরা পেয়েছি। আমরা শিগগিরই এ কমিটির কার্যক্রম শুরু করবো।

তিনি বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে কমিটিতে যে সদস্যরা রয়েছেন, তাদের সঙ্গে বসে আমরা আমাদের করণীয় ঠিক করবো। যদিও আমাদের অনেক লম্বা সময় দেওয়া হয়েছে, তবে আমরা কোনো সময় নষ্ট না করে এগিয়ে যাবো। আমার মনে হয়, এ সময়ের আগেই আমরা কাজ শেষ করতে পারবো। শিক্ষার্থীদের আর দীর্ঘ অপেক্ষার মধ্যে রাখতে চাই না। আমরা সরকার, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষার্থী এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সকলের সঙ্গে আলোচনা করে যেটা মঙ্গলজনক হবে... শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে যেটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে– এমন সমাধান বের করে নিয়ে আসার চেষ্টা করবো।


সর্বশেষ সংবাদ