বেরোবি উপাচার্য হলেন নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি মামলার আসামি

অধ্যাপক ড. মো. শওকত আলী
অধ্যাপক ড. মো. শওকত আলী  © টিডিসি ফটো

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফলিত গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শওকত আলী। আজ বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

গত বছরের জুন মাসে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়োগ পরীক্ষায় আড়াই হাজার খাতা সৃজন, টেম্পারিং ও জালিয়াতির অভিযোগে এই অধ্যাপকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ড. মো. শওকত আলী তখন বিভাগটির চেয়ারম্যান ছিলেন। এমন ব্যক্তিকে কীভাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে সরকার নিয়োগ দিয়েছে, তা নিয়ে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। 

আরও পড়ুন: নিয়োগ জালিয়াতি: ঢাবি অধ্যাপকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের দু’জন শিক্ষকের কাছ থেকে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস নিশ্চিত হয়েছে, অধ্যাপক ড. মো. শওকত আলী তাদের দলের শিক্ষক হিসেবেই পরিচিত। তিনিও সভায়ও যেতেন, তবে কোনো পদ-পদবীতে ছিলেন না। তাছাড়া বিএনপি কিংবা সাদা দলের পক্ষ থেকে তার নিয়োগের জন্য (বেরোবি উপাচার্য) সুপারিশ করা হয়নি বলে তারা জানিয়েছেন।

সূত্রের তথ্য, গত বছরের ১৫ জুন দুদকের করা মামলায ড. শাওকত আলী ছাড়াও আরও কয়েকজনকে আসামী করা হয়। তারা হলেন- স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির নিয়োগসংক্রান্ত কমিটির সভাপতি ও সাবেক পরিচালক মো. হাসান ইমাম, সদস্যসচিব আ খ ম আখতার হোসেন ও খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক মো. হারুনুর রশিদ।

মামলার এজাহারে আসামিদের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে খাতা প্রণয়ন এবং অফিশিয়ালি সরবরাহ করা উত্তরপত্র বর্তমানে থাকা উত্তরপত্র দ্বারা কোনো একপর্যায়ে প্রতিস্থাপিত করার অভিযোগ আনা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ৪০৯/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৪৭৭ (ক) ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। 

ওই এজাহারে বলা হয়েছিল, কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে জরুরি ভিত্তিতে বিভিন্ন হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জন্য মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ১ হাজার ২০০টি, মেডিকেল টেকনিশিয়ান ১ হাজার ৬৫০টি এবং কার্ডিওগ্রাফারসহ ২ হাজার ৭৯৮টি শূন্য পদে জনবল নিয়োগের ছাড়পত্র প্রদান করে সরকার। ২০২০ সালের ৩০ জুন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় তিনটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আবেদনের শেষ সময় ছিল ২০ জুলাই। বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে মোট ৭২ হাজার ৬১৫ প্রার্থী আবেদন করেন। লিখিত পরীক্ষা গ্রহণের দায়িত্ব পায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগ। নিয়োগ পরীক্ষার মধ্যে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পদে ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর, মেডিকেল টেকনিশিয়ান (ইসিজি) পদে ওই বছরের ১৮ ডিসেম্বর, মেডিকেল টেকনিশিয়ান (অ্যানেসথেসিয়া, ডায়ালাইসিস, কার্ডিওগ্রাফার, বায়োমেডিক্যাল, ইটিটি, পারফিউশনিস্ট, সিমুলেটর, অর্থোপেডিকস, ইকো) পদে ১৯ ডিসেম্বর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা শেষে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা কেন্দ্র থেকে খাতা বুঝে নেন। নিয়মানুযায়ী নিয়োগ কমিটির সদস্যসচিব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক আ খ ম আক্তার হোসেনের নিকট তা জমা হয়। এরপর মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও মেডিকেল টেকনিশিয়ান (ইসিজি) সংশ্লিষ্ট খাতা মূল্যায়নের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান মো. শাওকত আলীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। 

আরও পড়ুন: বেরোবির নতুন ভিসি ঢাবি অধ্যাপক শওকত আলী

অন্যদিকে মেডিকেল টেকনিশিয়ান (অন্যান্য) পদের লিখিত খাতা মূল্যায়নের জন্য খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক মো. হারুনুর রশিদের কাছে জমা দেওয়া হয়। লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর রাতে কতিপয় সিন্ডিকেট চক্র পুনরায় নতুন খাতায় প্রশ্নের উত্তর লিখে প্রতিস্থাপন করেন। খাতার কাভার পেজে একাধিকবার স্ট্যাপলিং করা ছিদ্র কিন্তু মূল খাতায় একবার স্ট্যাপলিং এবং উত্তরপত্রের বিভিন্ন স্থানে পেনসিলে লেখা অস্পষ্ট সংকেতের প্রমাণ মেলে। 

উত্তীর্ণ ৪ হাজার ৪৫৩টি খাতা, টেবুলেশন শিট ও অন্যান্য উপকরণ পরীক্ষার পর ২ হাজার ৪১১টি উত্তরপত্রে একাধিক স্ট্যাপলিং করা ছিদ্র এবং পেনসিলে লেখা বিভিন্ন ধরনের সংকেতের প্রমাণ পান দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা। এর আগে গত ২ জুন নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করার অনুমোদন দেয় দুদক।

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. মো. শওকত আলী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমি ওই সময় বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলাম। তবে ওই মামলা সর্ম্পকে কিছু জানি না এবং মামলার কোনো কপি আমার কাছে আসেনি। তাছাড়া তিনি আওয়ামী লীগও করতেন না বলে জানান।

মামলার বিষয়ে ঢাবির সাদা দলের এক নেতা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরাও জানি তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। তবে আমাদের কারও সুপারিশে তিনি উপচার্য হিসেবে নিয়োগ পাননি। এমনকি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগের জন্য আমাদের থেকে কোনো সুপারিশও নেওয়া হয়নি।

ঢাবির সাদা দলের এক অধ্যাপক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, গত ১৫ বছর ধরে ড. মো. শওকত আলী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ (সিলেকশন) বোর্ডে সদস্য হিসেবে থাকতেন। তিনি তখন আওয়ামী লীগ থেকে এবং এখন আবার বিএনপির কাছ থেকে সুবিধা নিচ্ছেন।

অধ্যাপক শওকতের এক বন্ধু দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর স্বামী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার ও শওকতের বাড়ি একই গ্রামে। রংপুরের পীরগঞ্জে। সে হিসেবে তাদের মধ্যে বেশ সখ্যতা ছিল। 

তৎকালীন ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত সাবেক এক নেতার দাবি, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার তিন বছর পর ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে সখ্যতা গড়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় এসেছিলেন ড. শওকত। তাকে কখনও ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হতে দেখেননি বলে দাবি তার।

জীবনী থেকে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৮৯-৯০ সেশনের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন ড. মো. শওকত আলী। থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ মুজিবুর রহমান হলে। ১৯৯৯ সালের ১৫ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় যোগদান করেন তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence