ইবির খালেদা জিয়া হলে বারবার বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা, আতঙ্কে অজ্ঞান চার ছাত্রী
- ইবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৫৬ PM , আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:১২ PM
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) খালেদা জিয়া হলের বারবার বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। কয়েকদফায় ঠিক করার পরও সমস্যা কাটছে না। ফলে গতকাল রাতে হঠাৎ বিদ্যুৎ বন্ধ হলে আতঙ্কে চার ছাত্রী অজ্ঞান হয়ে যায়। দ্রুত সংস্কারের দাবি হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের।
বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১২টার দিকে অজ্ঞান হওয়ার ঘটনা ঘটে। এদিকে প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত হলের শিক্ষার্থী ও হাউজ টিউটরদের সঙ্গে আলোচনা চলমান ছিল। সেখানে তাদের বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করছেন বলে জানা গেছে।
জান যায়, গত ৭ জুলাই আনুমানিক রাত ১০ টার সময় হলে শর্ট সার্কিট কারণে আগুন লাগে। পুরো ২ ঘন্টা ধরে কাজ করে তারা সমাধান দিয়ে যান আর কোনো সমস্যা হবে না বলে জানান তারা। ঠিক তার পরের দিন সকাল সাড়ে ৬ টায় আবারও ভয়াবহ আগুন লাগে হলে যখন প্রায় সব শিক্ষার্থীরাই ঘুমে কিংবা অর্ধঘুমে।
এরপর গত ১০ জুলাই আবারও সমস্যা সৃষ্টি হয়। এরপর বিদুৎ অফ করে দেওয়া হয় এবং সেই রাত সম্পূর্ণই বিদুৎ বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছিলো। এরপর ১৭ জুলাই পর্যন্ত তারা কাজ করে ঠিক করেন। দীর্ঘ দেড় মাস পর কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী হলে আসতেই গত ২ সেপ্টেম্বর আবারও হলে শর্ট সার্কিট এর সমস্যা এবং পোড়া গন্ধ, অনুসন্ধান করে জানা যায় তারা লুজ রেখেই চলে গিয়েছিল। ফলে গত ৫ সেপ্টেম্বর আবার একই সমস্যা দেখা দেয় হলে।
এ ঘটনার পর ছাত্রীদের ঝুঁকির কথা বলে অন্য স্থানে থাকতে বলেছে কর্তৃপক্ষ। তবে থাকার ব্যবস্থা না হওয়ায় বৈদ্যুতিক সংযোগ সাময়িক মেরামত করে ছাত্রীদের ঝুঁকি নিয়েই হলে থাকতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেখানে আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থী ধারণক্ষমতা হলেও বর্তমানে প্রায় দেড়শো ছাত্রী থাকছেন বলে জনা গেছে। হলের আবাসিক শিক্ষক ও ডিনদের সঙ্গে কথা বলেন ছাত্রীরা। গত মঙ্গলবার ও বুধবার দুই দফায় সাক্ষাৎ করেন। ছাত্রীরা ডিনদের সাথে সাক্ষাতের সময় চার দফা দাবিও উপস্থাপন করেছে।
তাদের দাবিগুলো হলো, দুইজন ইলেকট্রেনেশিয়ান সব সময় হলে অবস্থান করা, বর্তমানে যে সমস্যা চলছে তা দুই ঘন্টার ভিতরে সাময়িক ভাবে ঠিক করা, হলের কোথায় কোন বাজেট কোথায় ব্যয় হয় তা শিক্ষার্থীদের মাঝে স্বচ্ছ হিসাব পেশ করা এবং বর্তমানে যে সমস্যা চলছে তা স্থায়ী ভাবে ঠিক করতে কত টাকা লাগবে এবং কত সময় লাগবে তা শনিবারের মধ্যে উপস্থাপন করা। এছাড়া শনিবারের মধ্যে সকল দাবি মানা না হলে অনশনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ছাত্রীরা।
ছাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, খালেদা জিয়া হলের পুরোনো ব্লকে প্রায়ই ছোট-বড় বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে বড় দুর্ঘটনা ঘটে। সেসময় হলের তিনতলা পর্যন্ত বৈদ্যুতিক সংযোগ মেরামত করার কথা থাকলেও দুই তলা পর্যন্ত করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় মেরামতের নামে শুধু জোড়াতালি দেওয়া হয়েছে। আর তাদের থাকার বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়েই ঝুঁকি নিয়ে হলে অবস্থান করতে হচ্ছে তাদের।
হলের কয়েকজন ছাত্রী বলেন, ২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় হঠাৎ সন্ধ্যার হলের লাইট বন্ধ হয়ে যায়। নিচ থেকে শব্দও হচ্ছিল। এর আগের দুর্ঘটনার কারণে কেউ আর সাহস করেনি সেখানে যাওয়ার। পরে হলের নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে জানানো হয়। একজন ইলেকট্রিশিয়ান এসে ঠিক করে দিয়ে যায়। কিন্তু এটা তো স্থায়ী সমাধান না। আমরা ডিনদের সাথে কথা বলতে গেছিলাম। প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা স্যার আমাদের বলছিল তিনি জরুরি দায়িত্বে আছেন শুধু। জীবনের চেয়ে আর জরুরি কিছু কি আছে? আমাদের জীবনের কি কোনো দাম নেই? এই বিষয়টির স্থায়ী সমাধান করা হোক এমনটাই দাবি করেছেন তারা।
হলের আবাসিক শিক্ষার্থী তাসলিমা আরেফিন অথি বলেন, আমাদের সাথে এই দুটো মাস ধরে মশকরা করা হচ্ছে, প্রভোস্ট আগেই হল থেকে বিদায় নিয়েছেন যাতে তাকে প্রশ্ন না করা যায়।
আমাদের জীবনের মূল্য কি এতই তুচ্ছ, মেয়েরা আতঙ্কে রাতে ঘুমাতে পারে না। বিদুৎ চলে গেলে চারজন অজ্ঞান হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বারবার আগুন লাগলেও ইবি প্রশাসনের কোনো মাথা ব্যথা নেই। ভালোভাবে হলের ইলেকট্রিকাল কাজ করে দিয়ে যান যাতে মেয়েরা নিশ্চিন্তে রুমে থাকতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দফতর ও হল প্রশাসন সূত্রে, খালেদা জিয়া হলের পুরোনো ব্লকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমদিকের ভবন। এই হলটার বয়স প্রায় ৩০ বছরের মতো হবে। সেখানে যে ধরণের লোড পরে লাইনগুলো তেমন শক্তিশালী নয়। তাছাড়া লাইনগুলো অনেক পুরোনো হওয়ার কারণে বারবার এমন ঘটনা ঘটছে। সেখানে পুরো লাইন মেরামত করা জরুরি। এর জন্য বড় বাজেট প্রয়োজন।
হলটির আবাসিক শিক্ষক এরশাদুল হক বলেন, হলে সার্বক্ষণিক একজন ইলেকট্রিশিয়ান থাকবেন। ঝুঁকি আছে কি নেই এ ব্যাপারে আমি মন্তব্য করবো না। ইঞ্জিনিয়াররাই এটা ভালো বুঝবেন বলে দাবি তার।
এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) এ কে এম শরীফ উদ্দিন বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। একটা তারের লুস কানেকশনের জন্য এই ঘটনার সূত্রপাত হয়। ছাত্রীদের দাবি অনুযায়ী হলে সার্বক্ষণিক একজন ইলেকট্রিশিয়ান থাকবে। আপাতত ভয়ের কিছু নাই। তাছাড়া আমরা স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে কত টাকা লাগতে পারে এই নিয়ে একটা ইস্টিমেট করছি। ইস্টিমেট কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হবে। আর্থিক অনুমোদন পাওয়ার পর কাজ শুরু করা হবে বলে জানান তিনি।
এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক ড. আ ব ম ছিদ্দিকুর রহমান আশ্রাফী জানান, সার্ভিসিং করতে কেমন বাজেট লাগবে সেটা জানানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলীদের বলা হয়েছে। খুব দ্রুতই স্থায়ী সমাধান হবে বলে আশা করছি।