মাদ্রাসায় এমফিল-পিএইচডি ডিগ্রি চালু হচ্ছে
- খাঁন মুহাম্মদ মামুন
- প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২৪, ০৬:৪২ PM , আপডেট: ১৩ জুন ২০২৪, ০৭:১৪ PM
এবার দেশের ইসলাম ধর্মভিত্তিক কয়েক হাজার উচ্চশিক্ষালয়ের তদারক প্রতিষ্ঠান ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের (আইএইউ) অধীনে এমফিল এবং ডক্টর অব ফিলোসফি (পিএইচডি) চালু হচ্ছে। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি প্রবিধান প্রণয়ন করেছে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের (আইএইউ) উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ আব্দুর রশীদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের ১৪তম সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলে বিগত বছরের ২৩ জুলাই এ প্রবিধান প্রণয়ন করা হয়।
ফলে এখন থেকে সারাদেশে ইসলাম ধর্মীয় আবহে পরিচালিত মাদ্রাসা ও ধর্মীয় শিক্ষালয়গুলোর শিক্ষক এবং গবেষণায় আগ্রহী শিক্ষার্থী বা সংশ্লিষ্ট যে কেউই চাইলে প্রবিধান মেনে গবেষণা করার সুযোগ পাবেন। পরবর্তীতে এ গবেষণা মূল্যায়ন এবং প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই শেষে তার ভিত্তিতে সনদ প্রদান করবে প্রতিষ্ঠানগুলোর তদারক উচ্চশিক্ষালয় ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় (আইএইউ) কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে আইএইউ ‘র অধীনে দেশের প্রায় ১ হাজার ৭০০ এরও বেশি মাদ্রাসা পরিচালিত হচ্ছে।
আমরা প্রবিধানে গবেষণা সংক্রান্ত বিস্তারিত বিষয়াদি তুলে ধরেছি। এসব বিষয়ে গবেষণা এবং উদ্ভাবনের ফলে আরও বেশি সময়োপযোগী এবং বাস্তবমুখী উদ্ভাবন আমাদের জীবনকে ধর্মীয় আবহে আরও সহজ করবে—অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ আব্দুর রশীদ, উপাচার্য, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়।
‘ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় জার্নাল প্রবিধান (নীতিমালা) ২০২৩’ নামে এ প্রবিধানে গবেষণা বিষয়বস্তু সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। গবেষণার বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে—আল-কুরআন, তাফসীর, হাদিস, ফিকহ, সিরাত, ইতিহাস, ইসলামি অর্থনীতি, ইসলামি রাষ্ট্রনীতি, আকাঈদ, তাসাউফ, ইসলামি দর্শন ও ইসলামের অন্যান্য বিষয়ে গবেষণা, পর্যালোচনা, মূল্যায়নের মতো বিষয়াদি। এছাড়াও কুরআন-সুন্নাহর দর্পনে সমসাময়িক জীবন সমস্যার অন্তর্নিহিত দিক অনুসন্ধান, যৌক্তিক বিশ্লেষণ ও উত্তরণের উপায় উন্মোচন নিয়েও গবেষণার সুযোগ পাবেন গবেষকরা।
ইসলামি জীবন ব্যবস্থা সম্পর্কে অ্যাকাডেমিক পর্যালোচনার মাধ্যমে সঠিক বিষয় উদ্ঘাটন, বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে গবেষণা এবং ইসলামি মূল্যবোধের আলোকে দেশপ্রেম ও স্বাধীনতার চেতনা জাগ্রত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের ইতিহাস- ঐতিহ্য ও কৃষ্টি-কালচার বিষয়ে গবেষণাও করার সুযোগ রাখা হয়েছে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ নীতিমালায়।
আরও পড়ুন: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রি চালু হচ্ছে
এছাড়াও মুসলিম শাসনামলের ইসলামি আইন ও বিচার, সমাজনীতি, অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতি ইত্যাদি বিষয়ের প্রায়োগিক চিত্র তুলে ধরা, ইসলামের আলোকে প্রায়োগিক বিষয়াদির যৌক্তিক ব্যাখ্যা প্রদান, মাদ্রাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী ও বিশ্বমানে উন্নীত করার লক্ষ্যে উচ্চতর গবেষণা পরিচালনা, ইসলামের আলোকে জ্ঞান সঞ্চারণ, নতুন জ্ঞানের উদ্ভাবন ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার মতো সময়োপযোগী এবং বাস্তবমুখী বিষয়গুলোও গুরুত্ব পেয়েছে ধর্মীয় আবহে পরিচালিত এ উচ্চশিক্ষালয়ের তত্ত্বাবধানে।
একইসাথে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-উগ্রবাদ বিষয়ে অপব্যাখ্যার সঠিক ব্যাখ্যা প্রদান, আরবি ভাষা ও সাহিত্যসহ বিভিন্ন ভাষার ইসলামি সাহিত্যের পর্যালোচনা, গবেষণা ও মূল্যায়ন এবং ইসলামের প্রকৃত মর্মার্থ ও মানবিক মূল্যবোধ বিস্তারের মাধ্যমে সুষম ও ভারসাম্যপূর্ণ জীবনব্যবস্থার উৎকর্ষ সাধনে অবদান রাখা নিয়েও গবেষণা করতে পারবেন আগ্রহী শিক্ষার্থীরা।
ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ আব্দুর রশীদ। ছবি: টিডিসি ফটো।
‘ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় জার্নাল প্রবিধান (নীতিমালা) ২০২৩’ নামে এ প্রবিধানে গবেষণার ভাষা, বানানরীতি, উদ্ধৃতি, রচনা কাঠামো, প্রবন্ধ নির্বাচন পদ্ধতি, উপদেষ্টা ও সম্পাদনা পরিষদ, সম্পাদনা পরিষদের কার্যপরিধি নিয়ে সবিস্তারে জানানো হয়েছে। এছাড়াও একই প্রবিধানে প্রয়োজনীয় করনীয়ও ঠিক করে দিয়েছে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে কথা হয় ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের (আইএইউ) উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ আব্দুর রশীদের সাথে। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা সময়োপযোগী এবং বাস্তবমুখী গবেষণাকর্মের মাধ্যমে মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নতি করতে চাই। এজন্য আমাদের গবেষণা এবং উদ্ভাবন বাড়ানো জরুরি। তাই আমরা এ প্রবিধান করেছি। আশা করছি, এখন থেকে দেশের মাদ্রাসাগুলোয় মানসম্মত উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি ভালো মানের গবেষণা এবং উদ্ভাবন হবে।
আরও পড়ুন: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি চালু করতে ছয় সদস্যের কমিটি
অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ আব্দুর রশীদ বলেন, ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা হিসেবে সব ধরনের ভালো কাজকে উৎসাহিত করে। এখানে মানব কল্যাণে কাজের বিষয়ে বেশি উৎসাহিত করা হয়েছে। আমরা প্রবিধানে গবেষণা সংক্রান্ত বিস্তারিত বিষয়াদি তুলে ধরেছি। এসব বিষয়ে গবেষণা এবং উদ্ভাবনের ফলে আরও বেশি সময়োপযোগী এবং বাস্তবমুখী উদ্ভাবন আমাদের জীবনকে ধর্মীয় আবহে আরও সহজ করবে। এটি অনেক বেশি প্রয়োজনীয় বলেও মনে করেন উচ্চশিক্ষালয়টির এ শীর্ষ কর্তা।