খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘নয়েজ ফ্যাক্টরির’ নিবন্ধন বাতিল

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) সাংস্কৃতিক সংগঠন 'নয়েজ ফ্যাক্টরি'র এর নিবন্ধন বাতিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সংগঠনটির বিরুদ্ধে মাদক সংশ্লিষ্টতা, ধর্ম অবমাননা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা সহ বেশ কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে গত এক বছর তদন্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেই তদন্তের প্রতিবেদন অনুযায়ী সংগঠনটির নিবন্ধন বাতিল করা হয়। গত ২৩ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক পরিচালকের দপ্তর থেকে প্রেরিত এ সংক্রান্ত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য গঠিত তদন্ত কমিটির বিস্তারিত প্রতিবেদন এবং সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে পাঠানো শোকজের জবাব বিস্তারিত আলোচনার পর সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত এবং শিক্ষার্থীদের মতামত জরিপের উপর ভিত্তি করেই শৃঙ্খলা বোর্ড সংগঠনটির নিবন্ধন বাতিল করেছে। এতে মাদক, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এবং অন্যান্য কয়েকটি সংগঠনকে হেয় প্রতিপন্ন করার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক পরিচালক মো. শরীফ হাসান লিমন জানান, বিভিন্ন সংগঠন ও শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে নয়েজ ফ্যাক্টরির বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের বিষয়ে অভিযোগ আসে। সেই সত্যতা যাচাইয়ে তদন্ত করা হয়। সংগঠনটির বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মতামত নেওয়া হয়। ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী সংগঠনটির কার্যক্রম বিতর্কিত বলেছে।

শিক্ষার্থীদের মতামতে মাদক সংশ্লিষ্টতা, ধর্ম অবমাননা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা সহ বেশ কিছু অভিযোগ উঠে আসে। এরই আলোকে শৃঙ্খলা বোর্ডের সভায় বিস্তারিত আলোচনার পর সর্বসম্মতিক্রমে তাদের নিবন্ধন ও কার্যক্রম বাতিল করা হয় বলে জানান ছাত্রবিষয়ক পরিচালক।

আরও পড়ুন: সিট পাওয়ার পরদিনই রাবি ছাত্রের বিছানাপত্র নামিয়ে দিয়েছে ছাত্রলীগ

ধর্ম অবমাননার বিষয়ে ছাত্রবিষয় পরিচালক বলেন,  শিক্ষার্থীদের মতামতে তাদের ব্যবহৃত বেশ কিছু সাইন, সিম্বল, ও রিচুয়ালে স্যাটানিক চর্চা ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কথা উঠে এসেছে। যা দেশের প্রচলিত প্রায় সকল ধর্মের সাথেই সাংঘর্ষিক।

এদিকে সংগঠনের নিবন্ধন বাতিলের খবরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের অনেকে ইতোমধ্যে এই নিষেধাজ্ঞার পক্ষে-বিপক্ষে সরব হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫টি সাংস্কৃতিক সংগঠনও তাদের ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়ে সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ করেছেন।

জানা যায়, এর আগেও ২০০৯ ও ২০১৭ সালে বিতর্কিত কার্যক্রমের জন্য সংগঠনটি নিষিদ্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সংগঠনটি আর বিতর্কিত কার্যক্রম না করা শর্তে ২০১৮ সাল থেকে আবার যাত্রা শুরু করে। কিন্তু সেই শর্ত ভঙ্গ করে আবার বিতর্কিত কার্যক্রমে জড়ায় বলে জানান ছাত্র বিষয়ক পরিচালক মো. শরীফ হাসান লিমন। এ নিয়ে সংগঠনটি তিনবার নিষিদ্ধ হল। এর আগের বারগুলোতে ছাত্র বিষয়ক পরিচালক দপ্তরের হস্তক্ষেপে নিষিদ্ধ হলেও এবার শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে শৃঙ্খলা বোর্ডে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সংগঠনটির সভাপতি (কমিটি স্থগিত) মঈন খান বলেন, এক বছরের অধিক সময় যাবত তদন্ত প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করা হলেও আমাদেরকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো শোকজ নোটিশ পাঠানো ছাড়াই নিবন্ধন বাতিলের ঘোষণা আসে এবং আমাদের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগসমূহের নির্দিষ্ট কোনো প্রমাণও দেখানো হয়নি। এছাড়া আমরা আশা করছি ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৯০’ ও শিক্ষার্থীদের আচরণ বিধি অধ্যাদেশের প্রতি কর্তৃপক্ষ শ্রদ্ধাশীল হবেন যেহেতু সেখানে শিক্ষার্থীকে শাস্তির বিধান থাকলেও সংগঠনের নিবন্ধন বাতিলের কোনো আইন নেই।'


সর্বশেষ সংবাদ