বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভিসি কে হচ্ছেন

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

আগামী ৫ নভেম্বর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন মেয়াদ শেষ হচ্ছে। দক্ষিণ বঙ্গের বাতিঘর খ্যাত এই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দ্বিতীয়বার উপাচার্যের দায়িত্ব পাচ্ছেন অধ্যাপক আরেফিন, নাকি নতুন উপাচার্য বেছে নেওয়া হবে— সেই আলোচনা এখন ক্যাম্পাসজুড়ে। শিক্ষার্থীদের চায়ের আড্ডা থেকে ক্লাসের বিরতি, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের কাজের ফাঁকে, এমনকি ক্যাম্পাস ছাড়িয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও শহরেও— সব জায়গায় একই আলোচন, কে  হচ্ছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী উপাচার্য।

২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের তৎকালীন অধ্যাপক ড. মো. ছাদেকুল আরেফিনকে ৪ বছরের জন্য বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরে তিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন।

শিক্ষার্থীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক সংকট, শ্রেণিকক্ষের সংকট, ল্যাব সংকট, শিক্ষক সংকটসহ সকল ধরনের সংকট ও সেশনজট নিরসনে কাজ করবে এমন কাউকে দেখতে চান তারা। সর্বোপরি উপাচার্য  শিক্ষার্থীবান্ধব কাজ করবেন এমন প্রত্যাশা তাদের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, বেশ কিছুদিন থেকে বর্তমান উপাচার্যের অনুসারী ও উপাচার্য বিরোধী শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। প্রশাসনের মাঝেও এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ এই নিয়ে। কে কোন দলের সবাই সেটা প্রকাশ না করলেও বোঝা যাচ্ছে অনেক কিছুই। সেই দিক থেকে উপাচার্য বিরোধীদের দলই ভারি। তারা চায় না বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন আবার পুনরায় দায়িত্বে আসুক। 

জানা যায়, উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক, কর্মকর্তারা তিন দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। প্রথম দলের দাবি বর্তমান উপাচার্য এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব লাভ করতে যাচ্ছেন। উপাচার্য বিরোধী পক্ষ বলছে নতুন কাউকে দায়িত্ব দেয়া হতে পারে দক্ষিণাঞ্চলের সর্বোচ্চ এই বিদ্যাপীঠে। আবার অন্য একটি গ্রুপ মনে করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিন্ন দায়িত্ব পালন করা বর্তমান বা সাবেক কোনো শিক্ষক পেতে পারেন উপাচার্যের দায়িত্ব।

অবশ্য স্থানীয় সুশীল সমাজ দাবি করছে, যেই দায়িত্বে আসুক না কেন সে যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে মনোযোগী হয়। শিক্ষকদের দ্বিতীয় দলটির সূত্র মোতাবেক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অথবা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষককে এবার দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে সেখানে। তেমনটাই নাকি শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে খবর পেয়েছেন তারা। আর প্রথম দলটির দাবি বর্তমান উপাচার্যের আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কর্মকাণ্ডে সরকার বিব্রত হয়নি। এছাড়া সামনেই রয়েছে জাতীয় নির্বাচন। সার্বিক দিক বিবেচনায় এই মুহূর্তে উপাচার্য পদে কোন রদবদল করবে না সরকার।

তবে একটি পক্ষ দাবি করছেন, বর্তমান উপাচার্য নতুন মেয়াদে দায়িত্ব লাভ করবেন না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে বিগত দিনে কোনো উচ্চপদে দায়িত্ব পালন করেছেন কিংবা বর্তমানে করছেন এমন কাউকে উপাচার্য করা হতে পারে।

কানাঘুষা চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ট্রেজারার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভুঁইয়া উপাচার্য হওয়ার প্রত্যাশায় উপরমহলে বেশ দৌড়ঝাঁপ করছেন। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি অত্যন্ত বিচক্ষণ ব্যক্তি। তাঁরা যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকে দায়িত্ব দিবেন। আমরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নেওয়ার কাজ করে যাবো।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির বর্তমান সভাপতি মো. আরিফ হোসেন জানান, যোগ্যতা অনুযায়ী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকেই এখানকার উপাচার্য হওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু আমি কারো নাম গণমাধ্যমে প্রকাশ করবো না। এছাড়া বর্তমান উপাচার্য মহোদয়কে সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব দিলে তিনি তা পালন করবেন। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী যাকেই দায়িত্ব দিবেন আমরা তাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো।

তবে শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ড. মো. আবদুল কাইয়ুম বলেন, বর্তমান উপাচার্য তার মেয়াদে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত কোনো উন্নয়নই করেননি এবং প্রশাসনিক পর্যায়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে রেখেছেন। সেশনজটের ব্যাপারেও ছিল উদাসীনতা। তার অনিয়ম ও অদক্ষতার কারণে ভুক্তভোগী হতে হয়েছে অনেকেরই। আমরা কোনোভাবেই এই উপাচার্যকে চাই না।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে উন্নয়ন ও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন হোক এমন উপাচার্য নিয়োগ দিবেন বলে আশা রাখি। তাই, কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের বিশেষ অনুরোধ থাকবে একজন দক্ষ এবং বিজ্ঞ শিক্ষক যেন এখানকার উপাচার্য পদে নিয়োগ পান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপপ্রধান প্রকৌশলী মো. মুরশিদ আবেদিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসেবে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী যাকে উপযুক্ত মনে করেন, তিনি হবেন। এগুলো নিয়ে আমরা মাথা ঘামাই না। যিনি আসবেন তাকে সর্বোচ্চটা দিয়ে সহযোগিতা করব।

এদিকে, স্থানীয় ব্যক্তিবর্গও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে খোঁজ-খবর রাখছেন। বরিশাল নগর উন্নয়ন ফোরামের সমন্বয়কারী কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, উপাচার্যের চেয়ারে যিনিই বসবেন তিনি যেন চেয়ারটিকে ব্যক্তিগত উন্নয়নের চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণগত মানোন্নয়নে কাজে লাগান; সেই প্রত্যাশা থাকবে। প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরীণ সংকট নিরসনে ভূমিকা রাখতে পারবে এমন একজনকেই সেখানে দায়িত্ব দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence