বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে ডাক পাননি জমিদার জগন্নাথের বংশধররা
- সাগর হোসেন
- প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৩, ০৯:১০ AM , আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২৩, ০৯:১৯ AM
ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংহতির ধারক-বাহক পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে গড়ে উঠা একসময়ের পাঠশালাটি আজ দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠানটি ২০০৫ সালের ২০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি পায়। আগামী শুক্রবার (২০ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৮ পেরিয়ে ১৯তম বছরে পদার্পণ করছে।
তবে এবছর ২০ অক্টোবর শুক্রবার হওয়ায় একদিন আগে অর্থাৎ আজ বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা হবে। দেশের অন্যতম সেরা এ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জমি দানকারী জমিদার জগন্নাথ রায় চৌধুরীর বংশধরদের কাউকেই বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে নিমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এমনটিই পরিবারটির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে ‘তাদের দাওয়াত করা হয়েছে’ বলে দাবি করা হয়।
জানা যায়, রাজধানীর রায়ের বাজারে থাকেন জগন্নাথ রায়ের শেষ বংশধর কালিশঙ্কর রায় চৌধুরী। তিনি জগন্নাথ রায়ের ছেলে কিশোরীলাল রায়ের নাতির ছেলে। কথা হয় কালিশঙ্কর রায়ের স্ত্রী ভারতী রায় চৌধুরীর সঙ্গে।
তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে আমাদেরকে ডাকা হয়নি। আমার জামাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী। তাকেও কোনো নিমন্ত্রণ জানানো হয়নি। অথচ আমার স্বামীর দাদার বাবা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে জমি দান করেছিলেন। আমরা ছাড়া ঢাকায় জমিদারের বংশের কেউ নেই। শুধু এ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী না, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অনুষ্ঠানে আমাদের বর্তমানে ডাকা হয় না।
সর্বশেষ ২০১৯ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে জমিদারের বংশধর হিসেবে বিশেষ মর্যাদা না পেলেও শুধুমাত্র ডাক পান কালিশঙ্কর ও তার স্ত্রী। তারা সমাবর্তনে যান। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তাদের ডেকেছিলেন কথা বলার জন্য। কিন্তু অসুস্থতার জন্য দ্রুত পৌঁছাতে পারেনি বলে আক্ষেপ করেন কালিশঙ্করের স্ত্রী ভারতী রায়। তবে ১৯৯২ সালে জগন্নাথ কলেজের শতবর্ষ পূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে পরিবারসহ ডাক পান কালিশঙ্কর রায় চৌধুরী। দেয়া হয় বিশেষ মর্যাদা।
আরও পড়ুন: একদিন আগেই আজ উদযাপিত হবে জবির ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
এদিকে, একসময়ের প্রতাপশালী জমিদারের বংশধর কালিশঙ্কর রায়ের জীবন কাটছে দুর্দশায়। এ দেশের শিক্ষা বিস্তারে নিঃস্বার্থে কিশোরীলাল নিজের নামে কিশোরীলাল জুবিলি স্কুল ও তার বাবা জগন্নাথ রায়ের নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (তৎকালীণ স্কুল) জমি দেন।
অথচ জীবন জীবিকার টানে বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েই চতুর্থ শেণির কর্মচারী হিসেবে কাজ করছেন কিশোরীলালের বংশধরের জামাতা। ছেলে না থাকায় সংসার চালানোর একমাত্র অবলম্বন বৃদ্ধ কালিশঙ্করের জামাতা বিপ্লব সাহা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে নিয়োজিত। তবুও সে চাকরী অস্থায়ী।
কালিশঙ্করের স্ত্রী ভারতী রায় চৌধুরী বলেন, আমরা অর্থ সম্পদ চাই না। শুধু সম্মানটুকু চাই। জগন্নাথ কলেজ আমলে আমাদের ডাকা হতো। জুবিলি স্কুল থেকেও ডাকা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দিবসে আমাদের ডাকলে ভালো লাগবে। এছাড়া আমার জামাতার চাকরি স্থায়ী হয়ে গেলে আমরা বৃদ্ধ বয়সে শান্তি পাব।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, বালিয়াটির এক সময়ের প্রতাপশালী জমিদার ও ব্রিটিশ সরকার থেকে রায় খেতাপপ্রাপ্ত কিশোরীলাল রায় চৌধুরী এ দেশের শিক্ষা বিস্তারের জন্য ১৮৬৮ সালে তার বাবা জগন্নাথ রায়ের নামে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর কলেজ, তারপর ২০০৫ সালে আইন পাশের মাধ্যমে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ নেয়।
১৮ বছরের যৌবন পার হতে চলা এই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ১৬ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী ও প্রায় ৮০০ শিক্ষক রয়েছেন। বিসিএস, ব্যাংক, জুডিশিয়ারি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ প্রতিটি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এগিয়ে থাকেন। নানা গবেষণায়ও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কৃতিত্ব দেখাচ্ছেন।
জানতে চাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ বলেন, আমি পিআরওকে জানিয়ে দিয়েছি এই ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য৷ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপনের প্রচারণা কমিটির আহ্বায়ক মিল্টন স্যারকেও বলা হয়েছে উনাদেরকে অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেওয়ার জন্য ৷ এতক্ষণে হয়তো দাওয়াত দেওয়া হয়ে গেছে।