দেশব্যাপী ৩১টি কর্মশালার আয়োজন

বদলে যাচ্ছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলাম

দ্রুত কর্মসংস্থানমুখী একটি কারিকুলাম তৈরি করতে যাচ্ছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
দ্রুত কর্মসংস্থানমুখী একটি কারিকুলাম তৈরি করতে যাচ্ছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়  © প্রতীকী ছবি

বদলে যাচ্ছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলাম। গতানুগতিক ধারা পরিবর্তন করে দক্ষতাভিত্তিক, কর্মমুখী এবং বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশের সঙ্গে মিল রেখে দ্রুত কর্মসংস্থানমুখী একটি কারিকুলাম তৈরি করতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অনার্স, মাস্টার্স এবং ডিগ্রি পর্যায় থেকে শুরু করে অধিভুক্ত সকল স্তরের কারিকুলাম পরিমার্জন করে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। এ লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সম্মান পর্যায়ের কারিকুলাম পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করতে মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। 

অনার্স পর্যায়ের ৩১টি বিষয়ের কারিকুলাম উন্নয়নে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৩১টি স্বনামধন্য কলেজে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ এবং দক্ষ শিক্ষকমণ্ডলীর সমন্বয়ে টিম গঠন করে কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এই কর্মশালাগুলোর তদারকি ও সমন্বয়ের জন্য টিম পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কলেজ শিক্ষকদের ক্লাস রুমে পাঠদান অভিজ্ঞতা এবং কি রূপ কারিকুলাম শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত হতে পারে, কিভাবে শিক্ষকরা যথোপযুক্তভাবে ক্লাসে পাঠদান করাতে পারে সে বিষয়ে সম্মক ধারণাজ্ঞান এবং তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রত্যেকটি কলেজে দিনব্যাপী কর্মশালার আয়োজন করেছে কর্তৃপক্ষ। 

এসব বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, নতুন এ উদ্যোগের মধ্যদিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নতুন কারিকুলামে পাঠদানের দীর্ঘদিনের যে আকাক্সক্ষা সেটি পূরণ হবে। একইসঙ্গে একটি পৃথক লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এলএমএস) চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে ডিপিপি প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এই কারিকুলামে ইন্ডাস্ট্রি এবং অ্যাকাডেমিয়ার মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটি কার্যকর করা সম্ভব হলে দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এছাড়া কারিকুলাম উন্নয়নের কাজ যথাযথভাবে সম্পন্ন করে নতুন কারিকুলামের ভিত্তিতেই পৃথক এলএমএস ডেভেলপমেন্ট করে একটি সফটওয়্যার এবং এর কনটেন্ট তৈরি করা হবে। এতে প্রযুক্তিভিত্তিক এলএমএস তৈরি হবে। শিক্ষার্থীরা তাদের ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে অনলাইনে বিভিন্ন বিষয়ে পাঠের রিসোর্সগুলো সহজেই পাবে। ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে লার্নিং ম্যানেজমেন্টে নতুন দিগন্তের উন্মোচন ঘটবে।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন, বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল এবং বিএনকিউএফ এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নতুন সিলেবাস হবে প্রতিটি বিষয়ে কমপক্ষে ১৩২ ক্রেডিটের। নতুন সিলেবাসে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস, ইংরেজি, আইসিটি, সফ্টস্কিল সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য অবশ্যপাঠ্য করা হয়েছে। ২০টি শর্টকোর্স বাছাই করা হয়েছে, যা থেকে ২/১টি বিষয়ভিত্তিক অন্তর্ভুক্ত হবে।

এ লক্ষ্যে তৃণমূল পর্যায়ের শিক্ষকদের মতামত নেয়ার জন্য ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নির্দিষ্ট একটি কলেজে ওই এলাকার একই বিষয়ে অনার্সে পাঠদানকারী ১০ জন অভিজ্ঞ ও দক্ষ শিক্ষক কর্মশালায় অংশগ্রহণ করছেন, যা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ভিত্তিক একজন শিক্ষক সমন্বয় করে থাকেন। একেকটি কর্মশালা তদারকি করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি পাঠানো হয়। 

গত রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজশাহী কলেজে ইসলামের ইতিহাস, রাজশাহী নিউ গভ কলেজে ব্যবস্থাপনা ও প্রাণিবিজ্ঞান বিষয়ে কর্মশালা হয়েছে। এই কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান। উপাচার্য সকলের মতামত শুনে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন। 

তিনি বলেন, মানসম্মত, আধুনিক ও কর্মমুখী কারিকুলামই আমাদের দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এছাড়া গতকাল সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) টুঙ্গীপাড়া শেখ মুজিবুর রহমান কলেজে সংস্কৃত বিষয়ে কর্মশালা হয়েছে। আগামী ২৪ সেপ্টেম্বরসিলেট এমসি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। এ কর্মশালায়ও প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মশিউর রহমান।  

এদিকে গত ২৭ আগস্ট খুলনা ব্রজলাল (বিএল) কলেজে ইংরেজি এবং আজম খান কমার্স কলেজে হিসাব বিজ্ঞান বিষয়ে প্রথম কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এ দুটি বিষয়ে তদারকির দায়িত্ব পালন করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর আবদুস সালাম হাওলাদার। 

২৮ আগস্ট বরিশাল ব্রজমোহন (বিএম) কলেজে ইতিহাস, ময়মনসিংহে আনন্দ মোহন কলেজে উদ্ভিদ বিজ্ঞান, ঢাকায় শেখ বোরহানুদ্দীন কলেজে সমাজকর্ম বিষয়ে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। ১০ সেপ্টেম্বর বগুড়া আজিজুল হক কলেজে অর্থনীতি এবং রংপুর কারমাইকেল কলেজে রসায়ন ও আরবি বিষয়ে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। ১২ সেপ্টেম্বর ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে বাংলা, ১৩ সেপ্টেম্বর  কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে গণিত, নোয়াখালী সরকারি কলেজে ইসলাম শিক্ষা, ঢাকার তেজগাঁও কলেজে ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিষয়ে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকার তেজগাঁও কলেজে কর্মশালা তদারকিতে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. নিজামউদ্দিন আহমেদ। ১৬ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদপুর মহিলা কলেজে মনোবিজ্ঞান, আলহাজ মকবুল হোসেন কলেজে ভূগোল বিষয়ে কর্মশালা হয়েছে। 

এসব কলেজে সরাসরি গিয়ে অভিজ্ঞ শিক্ষকদের নিয়ে দিনব্যাপী কর্মশালার আয়োজন হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক প্রেরিত প্রতিনিধিবৃন্দ অভিজ্ঞ শিক্ষকদের মতামত গ্রহণ করছেন এবং সবিস্তার আলোচনা করে করণীয় নির্ধারণ করছেন। এটি সম্পন্ন করে বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় পর্যায়ে আরও কয়েকটি কর্মশালার আয়োজন করবে। এরপর পুনরায় বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যদের মতামত ও পরামর্শ গ্রহণ করে চূড়ান্ত করা হবে সিলেবাস উন্নয়নের কার্যক্রম। এরপর এটি পুস্তক আকারে বের করে তা শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেয়া হবে। 


সর্বশেষ সংবাদ