ঢাকা কলেজ

আসন সংকট, গ্রন্থাগারের সামনে থেকে ফিরে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা

ঢাকা কলেজের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার
ঢাকা কলেজের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার  © টিডিসি ফটো

কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে আসন সংকট থাকায় পড়তে এসে দরজা থেকেই ফিরে যেতে হচ্ছে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের। তারা বলছেন, এটি এখন নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। কলেজ প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ১৮২ বছরেও গ্রন্থাগারের এমন পরিস্থিতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন শিক্ষার্থীরা। দ্রুত আধুনিক গ্রন্থাগারের ব্যবস্থা করে এ সংকট সমাধানের দাবি তাদের।

জানা গেছে, বর্তমানে ঢাকা কলেজে চালু রয়েছে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির পাঠদান। কিন্তু এই বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থীর বিপরীতে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে আসন রয়েছে মাত্র ৬০টি। অবশ্য তার পাশের দুটি কক্ষে বেঞ্চে গাদাগাদি করে বসতে পারেন আরও ১১০-১২০ জন শিক্ষার্থী। সবমিলিয়ে ২৫ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীর বিপরীতে গ্রন্থাগারে মোট আসন রয়েছে ১৭০-১৮০টি।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, ঢাকা কলেজে আবাসিকের তুলনায় অনাবাসিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। কিন্তু সে তুলনায় গ্রন্থাগারে পড়াশোনার সুবিধা খুবই কম। আবার সবগুলো আবাসিক ছাত্রাবাসেও রিডিং রুমের সুবিধা শিক্ষার্থীর তুলনায় অপ্রতুল।

চাকরির বাজারে নিজকে এগিয়ে রাখতে বর্তমান সময়ে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই গ্রন্থাগারমুখী হয়েছেন। তবে পড়াশোনার জন্য গ্রন্থাগারে পর্যাপ্ত জায়গা পাচ্ছেন না তারা। দিনদিন এই সংকট আরও বেড়েই চলেছে বলে অভিযোগ তাদের।

বর্তমানে ঢাকা কলেজে চালু রয়েছে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির পাঠদান। কিন্তু এই বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থীর বিপরীতে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে আসন রয়েছে মাত্র ৬০টি।

তথ্যমতে, সবশেষ ২০১৩-১৪ সালের দিকে কলেজের সাবেক ছাত্র মো. মোজাম্মেল হক ভূঁইয়ার সহযোগীতায় ‘মারুফ-শারমিন স্মৃতি গ্রন্থাগার’ নামে আধুনিক গ্রন্থাগার করা হয়। তবে সে গ্রন্থাকারে আর লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া। সময়ের সাথে সাথে শিক্ষার্থীর পরিমাণ বাড়লেও বাড়ানো হয়নি গ্রন্থাগারের আসন সংখ্যাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা। 

ঢাকা কলেজের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের গ্রন্থাগারিক পরিমল কুমার বিশ্বাস জানান, শিক্ষার্থীরা সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সপ্তাহে ৫দিন গ্রন্থাগারে বসে পড়াশোনা করতে পারেন। শিক্ষার্থীর তুলনায় জায়গা সংকট কিছুটা রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করি; যাতে করে গ্রন্থাগারে পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা সুন্দরভাবে পড়াশোনা করতে পারেন।

দীর্ঘদিনেও গ্রন্থাগারের এমন সংকট নিরসন না হওয়ায় ক্ষোভ রয়েছে শিক্ষার্থীদের। নাহিদ হাসান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ঢাকা কলেজের মত পুরনো একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত একটি লাইব্রেরি আরো আগেই হওয়া উচিত ছিলো। ১৫-২০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য এক-দুটি কক্ষ যথেষ্ট নয়। গ্রন্থাগারের জন্য আলাদা ভবনের চিন্তা করা দরকার।

আরও পড়ুন: ভাষা আন্দোলনে বড় ভূমিকা রয়েছে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের: অধ্যক্ষ

নাহিদ হাসান বলেন, কলেজের অনেক শিক্ষার্থী একসাথে পড়তে পারেন, এরকম লাইব্রেরী হওয়া উচিত। কেননা ঢাকা কলেজে জ্ঞানপিপাসু অনেক ছাত্রের কাছেই একটি মানসম্মত আধুনিক গ্রন্থাগার বহুল কাঙ্খিত। আশা করছি খুব শিগগিরই কলেজ প্রশাসন শিক্ষার্থীদের দাবি বিবেচনায় নেবেন।

কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ছাড়াও কলেজের আবাসিক হলগুলোর রিডিং রুমেও রয়েছে আসন সংকট। আবাসিক শিক্ষার্থীরা বলছেন, হলগুলোর পাঠকক্ষেও শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার করার মতো পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই।

নতুন ভবনে আগের তুলনায় বৃহৎ পরিসরে গ্রন্থাগার সাজানো হয়েছে। আর আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য শহীদ ফরহাদ হোসেন ছাত্রাবাসের তৃতীয় তলায় নতুন করে পাঠকক্ষ নির্মাণের একটি পরিকল্পনা হয়েছে। -অধ্যাপক এ. টি. এম. মইনুল হোসেন, উপাধ্যক্ষ

মাহমুদুল হাসান নামের এক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের মতো হলেও মানসম্মত পাঠকক্ষ নেই। এসব বিষয় কলেজ প্রশাসনের উদ্যোগী হয়ে ভূমিকা পালন করতে হবে। তারা যদি শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা তৈরি করে দিতে পারেন, তাহলে আমাদের যাওয়ার কোন জায়গা নেই।

সংকটের বিষয়ে ঢাকা কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক এ. টি. এম. মইনুল হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, নতুন ভবনে আগের তুলনায় বৃহৎ পরিসরে গ্রন্থাগার সাজানো হয়েছে। আর আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য শহীদ ফরহাদ হোসেন ছাত্রাবাসের তৃতীয় তলায় নতুন করে পাঠকক্ষ নির্মাণের একটি পরিকল্পনা হয়েছে। যা শিগগিরই বাস্তবায়ন করা হবে।

গ্রন্থাগারের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে অধ্যাপক মইনুল হোসেন বলেন, আবাসিক হলে পাঠকক্ষ নিশ্চিত করা গেলে এসব সমস্যা অনেকাংশেই কেটে যাবে।


সর্বশেষ সংবাদ