পরীক্ষায় ফেল করেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ৬৫ শিক্ষার্থী
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৩, ০৭:৩৭ PM , আপডেট: ০৩ জুন ২০২৩, ০৭:৪৩ PM
সাধারণত শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হয়। এ পরীক্ষায় পাস নম্বর থাকে ৩০ কিংবা ৪০। কিন্তু এ নম্বরও তুলতে ব্যর্থ হন অনেক শিক্ষার্থী। তবে এরপরও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান অনেক শিক্ষার্থী। আর তাদের এ সুযোগ দেয় পোষ্য কোটা।
২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি তথ্য অনুযায়ী চার বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের তুলনায় কম নম্বরে পোষ্য কোটায় ভর্তির সুযোগ দেয়া হয়েছে। এই তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
এদের মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটায় ভর্তিকৃত ১২৭ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬০ জন ছিলেন অকৃতকার্য শিক্ষার্থী। ভর্তি পরীক্ষায় নূন্যতম ৪০ নম্বরও পাননি তারা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পোষ্য কোটায় আসন ফাঁকা থাকা সাপেক্ষে ন্যূনতম পাস নম্বর কমিয়ে ৩০ করা হয়ে।
আরো পড়ুন: গুচ্ছের ‘ক’ ইউনিটের ফল হতে পারে মঙ্গলবার
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটায় ২০ জন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এদের মধ্যে ৪ জনের নম্বর ছিল ৪০ শতাংশের নিচে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তির ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ নম্বরের বাধ্যবাধকতা থাকলেও ভর্তির পূর্বে মিটিংয়ের মাধ্যমে ২৫ শতাংশ নম্বরেই পোষ্য কোটায় ভর্তির সিদ্ধান্ত নেয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ শিক্ষাবর্ষে পোষ্য কোটায় মোট ১৫ জনকে ভর্তি করা হয় যাদের মধ্যে একজনের নাম্বার ছিল পাস নম্বর ৩০ এর নিচে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় আসন ফাঁকা থাকায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।
শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এভাবে পোষ্য কোটায় ভর্তির ফলে শিক্ষার মান নষ্ট হচ্ছে এবং বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। তাছাড়া পোষ্য কোটায় ভর্তিতে অনিয়মের অভিযোগও কম নয়। দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন বিতর্কিত কর্মকাণ্ড কাম্য নয়।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ভর্তি পরীক্ষায় ফেলকৃতরা যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পায়; তাহলে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের কোনো দরকার আছে বলে আমার মনে হয় না। যারা পোষ্য কোটায় শিক্ষার্থী ভর্তি করান, তাদের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে লোক দেখানো পরীক্ষা আয়োজনের কোনো মানে হয় না। সরাসরি শিক্ষার্থী ভর্তি করালেও পারে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কোষাধ্যক্ষ এবং ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মো. তাহের বলেন, কারা কোটার সুবিধা পাবেন সেটি উল্লেখ করা রয়েছে সংবিধানে। সেখানেতো পোষ্য কোটা নেই। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কিসের ভিত্তিতে কোটা রেখেছে? আমার মতে, এ কোটার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং ইউজিসির অপর এক সদস্য অধ্যাপক মো. আলমগীর বলেন, শিক্ষকদের সন্তানদের কোটা কেন লাগবে? তারা কি পিছিয়ে আছেন? নাকি শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনামূল্যে সেবা দিচ্ছেন? বিশ্ববিদ্যালয় সবাইকে সমান সুযোগ-সুবিধা দিতে বাধ্য। কিন্তু এ ধরনের কোটা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈষম্য। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে সুপারিশ করেছি, এ কোটা বন্ধ করার জন্য।
উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশে মোট ৪৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে ভর্তি কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এদের মধ্যে ২৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা রয়েছে। অবশিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা নেই।