ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
নারী যাত্রীর জন্য সিট ছাড়ার অনুরোধ করায় বাস ড্রাইভারকে মারধর ছাত্রলীগ নেতার
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৩, ০৯:৫৫ PM , আপডেট: ৩১ মে ২০২৩, ১০:৫৩ PM
কুষ্টিয়া-খুলনা রুটে চলাচলকারী গড়াই পরিবহনের একটি বাসের ড্রাইভার ও সুপারভাইজারকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি বনি আমিনসহ ৪/৫ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। বুধবার (৩১ মে) দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এ মারধরের ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে প্রায় দেড় ঘন্টা কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে বিক্ষুব্ধ বাস শ্রমিকরা। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের। ফলে দূর্ভোগে পড়েন যাত্রী ও পথচারীরা। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী বাস মালিক সমিতির শ্রমিকরা। ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এর আগে কুষ্টিয়া থেকে ছাত্রলীগ নেতা বনি বাসে আসছিলেন। কুষ্টিয়ার বটতৈল থেকে তিনটি মেয়ে খুলনা যাওয়ার জন্য বাসে উঠলে তাদের সিটে বসাতে ড্রাইভার বনিকে তার সিট ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন। তখন বনি বলেন, ধরে ধরে পথ থেকে লোক নিয়ে আসবেন আর আমরা সিট ছেড়ে দেব কেন? তখন এ নিয়ে উভয়ের মাঝে কথা কাটাকাটি হয়। এরপর বাস বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটের সামনে আসলে বনি ফোন করে আরও চার-পাঁচজনকে ডেকে আনে। এসময় তার বাস ড্রাইভারকে মারধর করেছেন।
পরে এ ঘটনার প্রতিবাদে শেখপাড়া বাজারে রাস্তায় আড়াআড়িভাবে বাস রেখে সড়ক অবরোধ করেন বিক্ষুব্ধ বাস মালিক সমিতির শ্রমিকরা। পরে শৈলকূপা ও ইবি থানার পুলিশের সহায়তায় বাস মালিক সমিতির নেতাদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সমঝোতায় প্রায় দেড় ঘন্টা পর অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী বাস চালক তোফাজ্জল হোসেন সবুজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। লিখিত অভিযোগে তিনি বলেন, বাস ক্যাম্পাস গেটের সামনে পৌঁছালে বনিসহ চার পাঁচজন বন্ধু মিলে বাটাম দিয়ে ড্রাইভারের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় এলোপাতাড়ি মারতে থাকে এবং তার পকেটে থাকা পনেরো হাজার টাকাও নিয়েছেন। এছাড়া গাড়ির সুপারভাইজার ও হেলপারদেরও বেধড়ক মারধর করারও অভিযোগ করেন তিনি।
ভুক্তভোগী তোফাজ্জল হোসেন সবুজ বলেন, আমি তাকে সুন্দর করে বলেছিলাম যে মেয়েটাকে সিটে বসতে দেওয়ার জন্য। পরে এটা নিয়ে ফোনে আরও চারজনকে ডেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেইটের সামনে সবাই মিলে আমাকে গরু মারার মতো মারলো। ফুটবলের মতো আমার মুখের দুইপাশে অনবরত লাথি মারছে তারা। শুরুতে দুই তিন বার বাটাম দিয়ে যেভাবে মেরেছিল, আমি যদি হাত দিয়ে না আটকাতাম তাহলে মাথায় লেগে আমি সেখানেই মারা যেতাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীদের দ্বারা এ ধরনের আচরণ কোনোভাবেই মানা যায় না। আমি তাদের উপযুক্ত বিচার চাই।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি বনি আমিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাসে আমার সিটে ড্রাইভার অন্য একজনকে বসাতে চায়। এটা নিয়ে তার সাথে কথা কাটাকাটি হয়। সে আমার সাথে বেয়াদবি করছিলো। পরে ক্যাম্পাসের সামনে আসলে ১মিনিট কথা বলার জন্য আমি ওনাকে নিচে নামতে বলি। কিন্তু তিনি নিচে নামতে রাজি না হয়ে উল্টো 'কেন নামবো, কি জন্য’ বলে চিল্লাচিল্লি শুরু করলে আশপাশে লোকজন জড়ো হয়ে যায়। তখন সেখান কিছু ছেলে ওনাকে মারধর করে। এ বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। আর ওনার সাথে তো আমার কোনো শত্রুতাও নেই।
আরেক অভিযুক্ত লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী জামিলের নিকট অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুপুরে ওই সময় আমি সেখনে ছিলাম না। আমি ক্লাসে ছিলাম। এ বিষয়ে আমি কিছু জানিনা।
এদিকে দোষীদের অতি দ্রুত শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনতে ছাত্র-উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরীনকে আহবায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এছাড়া কমিটিতে সদস্য হিসেবে সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম এবং সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা আবদুস সালাম। কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার বিষয়ে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, কেউ অপরাধ করলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। আর বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কখনো সন্ত্রাসের রাজনীতি শেখায় না। কেউ সংগঠনের নাম করে অপরাধ করলে এর দায় একান্ত তার। কেউ অপরাধ করলে প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, ভুক্তভোগী যারা রয়েছেন আমরা তাদের নিয়ে আলোচনায় বসেছিলাম। তাদের অভিযোগ শুনেছি। তারা মারধরকারী ৪/৫ জন ছিলো বলেছে। এর মধ্যে দুইজনের নাম বলেছে। আমরা প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করতে এবং তাদের অপরাধের মাত্রা নির্ধারণ করতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।