টিউশনির টাকা বাবা-মাকেও পাঠাতেন শাওন, স্বপ্ন ছিলো ভালো চাকরির
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৩, ০৯:০২ AM , আপডেট: ০৭ মে ২০২৩, ০৯:০২ AM
রাজধানীর ধূপখোলায় গ্যাসলাইন বিস্ফোরিত হয়ে দগ্ধ হওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্র মেহেদী হাসান শাওন (২১) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। নিহত শাওন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ সেশনের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি নাটোর জেলার বাগাতিপাড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের রহিমানপুর এলাকার আ. লতিফের ছেলে। টিউশনি করে নিজের খরচ চালিয়েও বাকি টাকা বাবা-মাকেও পাঠাতেন। শাওনের স্বপ্ন ছিল ভালো একটা চাকরির।
শনিবার (৬ মে) সকালে রাজধানীর শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাওন মারা যান। পরে রাত ১০টার দিকে তার নিজ গ্রামের বাড়ি নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার জামনগর ইউনিয়নের রহিমানপুর গ্রামে লাশ দাফন করা হয়।
নিহত মেহেদী হাসান শাওন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি মেসে থেকে চারটি টিউশনি করতেন। টিউশনির টাকায় নিজের খরচ চালিয়ে প্রতি মাসে বাবা-মাকেও পাঠাতেন। স্বপ্ন ছিল একদিন ভালো চাকরি করবেন। পরিবারের হাল ধরবেন। কিন্তু গ্যাসলাইন বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে সব স্বপ্ন শেষ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শাওনের।
গত সোমবার (১ মে ) পুরান ঢাকার ধূপখোলা বাজারে রাস্তার গ্যাসলাইন মেরামতের সময় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ওই সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী শাওন সহ আরো ৮ জন অগ্নিদগ্ধ হন। শাওনের গ্রামের বাড়ি নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার রহিমানপুর গ্রামে। বাবা আব্দুল লতিফ এলাকার একটি কলেজের কর্মচারী। রাজধানীর গেণ্ডারিয়া এলাকার একটি মেসে থাকতেন শাওন। ঘটনার দিন কাঁচাবাজার সেরে মেসে ফিরছিলেন তিনি।
পরবর্তীতে আহত অবস্থায় সবাইকে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউট ভর্তি করা হয়। শাওনের শরীরের ৩০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় মারা যান শাওন। তার মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
আরও পড়ুন: বিস্ফোরণে দগ্ধ জবি শিক্ষার্থী শাওনের লাশ দাফন
শাওনের সহপাঠী ও বন্ধু হাসান আলী ভূঁইয়া কালের বলেন, ‘গত ২৯ এপ্রিল বাড়ি থেকে ফিরেছে শাওন। পরদিন রাতে আমাকে সে জানায়, তার নামে আকিকা দেওয়া হয়নি। এবার কোরবানির ঈদে আকিকা দেওয়া হবে। এর জন্য বাবাকে সে ১০ হাজার টাকা পাঠাবে। কিন্তু বিস্ফোরণ শাওনের সব আকাঙ্ক্ষা চিরতরে মুছে দিল।’
হাসান আরো বলেন, ‘মা-বাবার সঙ্গে দুই ভাই-বোনের পরিবার ছিল শাওনের। সে ছিল বড়। ছোট বোন নবম শ্রেণিতে পড়ে। তার লেখাপড়ার খরচও শাওন জোগাত। বীভৎস ওই বিস্ফোরণে নিঃস্ব হয়ে গেল পরিবারটি।’
শাওনের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ। শাওনের এই অকাল মৃত্যুতে তার পিতা-মাতার পাগল প্রায় অবস্থা। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।