সেশনজটের কবলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২০ লাখ শিক্ষার্থী
- ফাতেমা-তুজ-জিনিয়া
- প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৩, ০২:০৮ PM , আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৩, ১২:৩২ PM
একসময় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে সবচেয়ে বড় সংকট ছিলো সেশনজট। চার বছরের স্নাতক শেষ করতে পার হতো ৬ থেকে ৭ বছরও। ২০১৫ সালের পরবর্তী সময়ে সেই সেশনজট অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছিলো বিশ্ববিদ্যালয়টি। তবে ২০২০ সালে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর আবারও সেশনজটে পড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রায় ২০ লাখ শিক্ষার্থীকে।
একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়টির ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ২০২১ সালের ডিসেম্বরে এবং ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ২০২২ সালের ডিসেম্বরে স্নাতক সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু ২০২৩ সালের এপ্রিল পার হলেও ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষার তারিখ এখন পর্যন্ত ঘোষণা হয়নি। এছাড়া, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষাও এখনও অনুষ্ঠিত হয়নি। এর ফলে সেশনজটের কবলে পড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রায় ২০ লাখ শিক্ষার্থীর।
তথ্যমতে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে ডিগ্রি পাস ও অনার্স মিলিয়ে প্রথম বর্ষে ভর্তির আসন ছিল মোট ১৯ লাখ ১৪ হাজার। আর ২০১৭ সালে এসব আসনের বিপরীতে ভর্তি হয় ছয় লাখ ৩১ হাজার শিক্ষার্থী, ২০১৮ সালে ৬ লাখ ২৮ হাজার এবং ২০১৯ সালে প্রায় ৬ লাখ ৫২ হাজার। এই তিন সেশনে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা এখন সেশনজটে পড়ছেন।
আরো পড়ুন: করোনাকালীন সেশনজট কাটাতে ব্যর্থ ১৬ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়
বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী ফারহানা বলেন, আমার বেড়ে ওঠা মধ্যবিত্ত পরিবারে। ইচ্ছে ছিলো পড়ালেখা শেষে চাকরি করে স্বাবলম্বী হবো। কিন্তু মধ্যবিত্ত পরিবারের একটা মেয়ের স্নাতকোত্তর পর্যন্ত পড়ালেখা চালিয়ে নিতে অনেক পারিপার্শ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। আর যখন দিনের পর দিন পরীক্ষা আটকে থাকে তখন বিষয়টা আরো কঠিন হয়ে ওঠে। প্রায়ই পরিবার এবং আত্মীয়-স্বজনের কথা শুনতে হয়। সবকিছু মিলিয়ে মাঝেমধ্যেই হতাশা কাজ করে।
সাব্বির হোসেন নামে নীলফামারী সরকারি কলেজের এক শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, স্নাতক শেষ হওয়ার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে হতাশার শেষ সীমায় পৌঁছে গেছি। দেড় বছর পর যে রুটিন প্রকাশ করলো সেখানেও তারিখ সম্ভাব্য। অথচ বাবা-মাকে এক বছর ধরে বলে আসছি আর কয়েকদিনের অপেক্ষা মাত্র। এখন তাদের সামনে যেতেও লজ্জা হয়। অন্তত পরীক্ষার সুনির্দিষ্টি তারিখ ঘোষণা করলেও স্বস্তি পেতাম।
আলমগীর হোসেন নামে অপর এক শিক্ষার্থী বলেন, পড়ালেখা শেষে সবারই স্বপ্ন থাকে একটা ভালো চাকরি। এ বছর মোটামুটি সব সরকারি প্রতিষ্ঠানেই বড় আকারের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছিলো এবং সামনেই নির্বাচন হওয়ায় এ ধরনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি আগামী বছরে হয়ার সম্ভাবনা কম। তাই এই বছরে স্নাতক সম্পন্ন না হওয়ায় আমরা যারা সরকারি চাকরিপ্রত্যাশী রয়েছি তাদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে বলা যায়।
আরো পড়ুন: সারাদেশে তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে, বিভিন্ন জায়গায় লোডশেডিং
এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, করোনাভাইরাস আক্রমণের পূর্বে আমরা সেশনজট অনেকটাই কমিয়ে এনেছিলাম, বর্তমানে যে সেশনজট সেটি করোনার কারণে সৃষ্টি হয়েছে। আমরা এই সেশনজটও কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করছি। ছুটির দিনে ক্লাস নেয়া, ক্রাশ প্রোগ্রামসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের কথা আমরা ভেবেছিলাম। কিন্তু বিসিএস ক্যাডাররা (কলেহ শিক্ষকরা) ছুটির দিনে ক্লাস নিতে বা ক্রাশ প্রোগ্রামে যেতে রাজি হচ্ছেন না। তারা বলছেন ইতোমধ্যেই তারা অনেক পরীক্ষা নিয়েছেন।
এ সময় তিনি আরও বলেন, আমাদের এই মুহূর্তে ক্রাশ প্রোগ্রামে যাওয়ার পরিকল্পনা নেই। তবে আমরা যদি দেখি সেশনজট অসহনীয় মাত্রায় পৌঁছেছে তাহলে আবারও ক্রাশ প্রোগ্রাম গ্রহণ করবো। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে শুধুমাত্র পরীক্ষা গ্রহণের জন্য শিক্ষকদের একটি পৃথক টিম গঠন করবো।