প্রতিষ্ঠার এক যুগেও সমাবর্তন হয়নি ৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে

সমাবর্তন
সমাবর্তন  © ফাইল ফটো

স্নাতক সম্পন্ন করার পর সমাবর্তনের মাধ্যমেই আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হয় মূল সনদপত্র। একারণে প্রতিটি শিক্ষার্থীর জীবনে সমাবর্তন বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।  সমাবর্তনে কালো গাউন পড়ে আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। তবে এখন অবধি এই সমাবর্তনে অংশগ্রহণের সুযোগ মেলেনি দেশের সরকারি ৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের।

প্রতিষ্ঠার পর প্রায় এক দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনও একটি সমাবর্তনও আয়োজন করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। সমাবর্তন আয়োজন করতে না পারা এই ৪টি বিশ্ববিদ্যালয় হলো- পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পাবিপ্রবি), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি), বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব টেক্সটাইলস (বুটেক্স) এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি)।

আরো পড়ুন: গভীর রাতে রেললাইন অবরোধ রাবি শিক্ষার্থীদের, আটকা ট্রেন

এদের মধ্যে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ২০০৮ সাল থেকে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। বিশ্ববিদ্যালয়টি থেকে এখন পর্যন্ত স্নাতক সম্পন্ন করেছেন প্রায় চার হাজার শিক্ষার্থী।

সমাবর্তনের বিষয়ে নাজমুল হোসেন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমার প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া বন্ধুরাও আরও কয়েকবছর আগেই সমাবর্তনে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছে। অথচ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনও সমাবর্তন আয়োজনের কোনো উদ্যোগই নেই। এর ফলে স্নাতক শেষ করার ৪ বছর পার হলেও এখনও মূল সনদপত্র পাইনি। প্রবেশনারি সার্টিফিকেট দিয়ে হয়ত অধিকাংশ কাজ চলছে।

সমাবর্তন না হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী সমস্যায় পড়ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা স্কলারশিপ নিয়ে দেশের বাইরে যাচ্ছে তাদের অনেকসময় সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তাছাড়া সমাবর্তন শিক্ষার্থীদের অধিকার। প্রশাসনের উচিত এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

সমাবর্তন আয়োজনের বিষয়ে জানতে চাইলে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, তিনি যোগদানের পর বেশকিছু কাজ করেছেন। এ সমাবর্তন আয়োজনের বিষয়টিও তাদের পরিকল্পনায়  রয়েছে।

২০১১ সালে শিক্ষাকার্যক্রম শুরু করা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক সম্পন্নকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার। এই বিশ্ববিদ্যালয়টিও এখন পর্যন্ত কোনো সমাবর্তন আয়োজন করেনি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির ষষ্ঠ ব্যাচের শিক্ষার্থী উম্মে কুলসুম হেনা বলেন, সমাবর্তন এমন একটা উপলক্ষ যেইদিন শুধুমাত্র একজন শিক্ষার্থী নয় তার বাবা-মাও সম্মানিত বোধ করে। আমার অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বন্ধুদের যখন দেখি তারা সমাবর্তনে তাদের বাবা-মাকে নিয়ে আসছে, সহপাঠীদের সাথে গাউন পড়ে উচ্ছ্বাস করছে, নিজের জীবনের অন্যতম সেরা মুহূর্তকে ফ্রেমবন্দী করে স্মৃতি সংরক্ষণ করছে তখন নিজের মাঝে একধরনের আক্ষেপ কাজ করে। আমরা প্রত্যাশা করবো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ও দ্রুত সমাবর্তন আয়োজন করে আমাদেরও বাবা-মা, সহপাঠীদের সাথে এমন একটি সম্মানজনক মুহূর্ত উদযাপনের সুযোগ দিবে।

আরো পড়ুন: পুলিশের টিয়ার শেল-রাবার বুলেটে আহত ১৫ শিক্ষার্থী, আইসিইউতে একজন

একই অবস্থা ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব টেক্সটাইলস এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়েরও। বুটেক্স থেকে স্নাতক সম্পন্নকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার, অপরদিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার।

বুটেক্স শিক্ষার্থী মো. মেহেদী হাসান বলেন, সমাবর্তন প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর প্রাণের দাবি। আর টেক্সটাইল প্রকৌশল বিষয়ে বাংলাদেশের একমাত্র এবং প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বুটেক্স। ২০১০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হলেও এখন পর্যন্ত কোনো সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়নি। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চাঁপা ক্ষোভ রয়েছে। মূলত প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাব এবং সমাবর্তন নিয়ে সুস্পষ্ট পরিকল্পনা না থাকাতেই এতদিনেও সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়নি। 

এই শিক্ষার্থী আরো বলেন, ২০১৮ তে বুটেক্সে একবার সমাবর্তনের উদ্যোগ নেয়া হলেও পরে আর তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। এমনকি শিক্ষার্থীদের নিবন্ধনের জন্য নেয়া অর্থও ফেরৎ দেয়া হয়নি। তৎকালীন প্রশাসন বলেছিল রাষ্ট্রপতির শিডিউল না পাওয়ায় সমাবর্তন আয়োজন করা সম্ভব হয়নি এবং পরবর্তীতে সমাবর্তনের সময় এই অর্থ সমন্বয় করা হবে। আমরা চাই প্রশাসন দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করুক এবং সমাবর্তন আয়োজনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হাতে মূল সনদপত্র তুলে দিক।

আরো পড়ুন: শিক্ষা সফরে গিয়ে মারধরের শিকার তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা, ছাত্রীসহ আহত ২০

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া প্রতিটি শিক্ষার্থীরই স্বপ্ন থাকে গ্রাজুয়েশন শেষে সমাবর্তনের মাধ্যমে সনদ গ্রহণের। কিন্তু নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থা এমন যে তারা কোনোমতে শিক্ষার্থীদের একটা ডিগ্রি দিয়ে চাকরির বাজারে পাঠাতে পারলেই হলো। তারা ধরেই নেয় যে নতুন হওয়ায় তাদের কোনো কিছুই ঠিকঠাক সময়ে হবে না।

তিনি আরো বলেন, কয়েকদিন আগে আমাদের এক শিক্ষককে সমাবর্তনের বিষয় বলেছিলাম। তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, পুরানো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেই যেখানে বছরের পর বছর সমাবর্তন হয় না সেখানে আমাদের নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়ে এত দ্রুত সমাবর্তন আশা না করাই ভালো। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় এই ধরনের চিন্তা থেকে বের হয়ে আসুক এবং দ্রুত সমাবর্তন আয়োজন করুক।

আরো পড়ুন: পবিপ্রবিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ৩ জন

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ছাদেকুল আরেফিন বলেন, আমরা সম্প্রতি রাষ্ট্রপতির সাথে দেখা করার আবেদন করেছি। দেখা করার অনুমতি পেলে আমরা বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলবো। আপাতত এটুকু বলতে পারি আমদের সমাবর্তন আয়োজনের চিন্তাভাবনা রয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. আবু তাহের দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এটি সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দায়িত্ব। তারা এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতির দপ্তরে চিঠি পাঠাবেন, পরবর্তীতে সেখান থেকে একটি তারিখ দেয় হবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence