ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীদের ভাবনায় নারী দিবস

  © টিডিসি ফটো

জাতিসংঘের উদ্যোগে প্রতি বছর ৮ মার্চ পালিত হয়ে আসছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। বিশেষ এই দিনটি পালন করা শুরু হয়েছিল সমাজে নারীদের গুরুত্ব ও অবদানের কথা স্মরণ করিয়ে দিতেই। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে জাতিসংঘের এবারের থিম হলো ‘প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে লিঙ্গসাম্য প্রতিষ্ঠা’ করা। নারী দিবস নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে আলাপে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) কয়েকজন ছাত্রী তাদের ভাবনার কথা জানিয়েছেন।

নারীকে চার দেয়ালে বন্দি না রেখে, তাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ না করে বরং যদি তাদের প্রতি সহযোগিতা ও সহমর্মিতা প্রদশন করা হয়। তাদের যদি সকল ক্ষেত্রে যথাযথ নিরাপত্তা ও সম্মান প্রদর্শন করা হয় তাহলে হয়তো সমাজের উন্নয়ন-অগ্রগতি আরও দ্রুত হবে বলে মনে করেন এসব নারী শিক্ষার্থীরা।

আরও পড়ুন: নারীরা ভয় পাবে কেন?

এই প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবা হ্যাপি বলেন, নারী শিক্ষার্থীদের পদচারণায়, নিরাপত্তায় মুখরিত হবে ক্যাম্পাস। কিন্তু বিভিন্ন সময় দেখি আবাসন সংকট থেকে শুরু করে নিরাপত্তার অভাব। ফলশ্রুতিতে অনেক নারী শিক্ষার্থী হল সিট থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। হল সিট না পেয়ে ক্যাম্পাসের বাহিরে মেসে থাকছেন কিন্তু সেখানে একটা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে থাকেন তারা।

তিনি আরও বলেন, যদি হলে আবাসন বৃদ্ধিসহ শিক্ষার্থীদের জন্য সিট নিশ্চিত করা হয় এবং হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয় তারা অনায়াসে নিরাপত্তার সাথে থাকতে পারবে। পাশাপাশি, পরিবার থেকে তাদের ভরসার জায়গা থাকবে বাবা-মা যে উদ্দেশ্য তাদের পাঠিয়েছেন সেটি সফলভাবে তারা করতে পারবেন। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে, সেজন্য ক্যাম্পাসে নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অতীব জরুরি। ক্যাম্পাসে কোনো নারী যেন নারী নির্যাতনের শিকার না হন সেদিকে প্রশাসনের লক্ষ্য রাখতে হবে। সর্বোপরি, ক্যাম্পাসের সুনাম অর্জনে নারী শিক্ষার্থী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন তাদের নিরাপত্তা সুষ্ঠুভাবে নিশ্চিত করা হলে।

নারী দিবস নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সাথে কথা বলেছেন বর্তমান সময়ের বহুল আলোচিত ও অন্যায়ের প্রতিবাদে বলিষ্ঠ কন্ঠের প্রতীক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুন। তিনি বলেন, নারীদের অধিকার, অন্যায়, অবিচার এগুলোর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর ও সামনের দিকে অগ্রসর হওয়াটাই আন্তর্জাতিক নারী দিবস। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেই হবে। নারীরা কেন ভয় পাবে? ভয় পেয়ে পেয়ে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তারা যদি ভয় পায় আর প্রতিবাদ না করে, তাহলে সারা জীবন হেয় প্রতিপন্ন হতে হবে।

“আমার কথা যদি বলি, আমি যদি চুপ করে থাকতাম তাহলে আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পাঁচটা বছরের বারোটা বেজে যেত। আমি পুরোপুরি নিরাপদ নই তবে আমি অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি। এটাতেই যদি মৃত্যু হয় তাহলে আমার কোন সমস্যা নাই। ছেলে হোক, মেয়ে হোক অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে এটাই প্রত্যাশা করি।”

নূরজাহান আক্তার যুথী নামে আকে ছাত্রী অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, নারী দিবসে বিশেষ করে একটা কথায় মনে আসছে সেটা হলো নারী পুরুষের সমতা বা সমান অধিকার।  বৈষম্য, নির্যাতন নারী নিপীড়নের মতো খারাপ কাজগুলোর প্রতিকার।সেটা কি আদৌও বাস্তবায়ন হয়েছে? প্রশ্ন থেকেই যায়। সাধারণ একজন নারী হয়ে আমরা কতটুকু নিরাপত্তায় থাকতে পারছি। প্রতিনিয়ত ই রাস্তায়, বাসে যেখানেই যায় নারীদের উত্যক্ততার শিকার হতে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, মনে হয় যেন নারীদের কোথাও নিরাপত্তা নেই। ঘরে বসে থাকলেই ভালো হয়। এমনকি ডিজিটাল যোগাযোগ মাধ্যমেও নিপীড়নের শিকার হতে হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উচ্চ বিদ্যাপীঠে পড়াশোনা করার পরেও কিছু মানুষের রুচি এতো নিচে নেমে গিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া নারী শিক্ষার্থীকে হুমকি, হেনস্তা, নিপীড়নের মতো কাজ করে যাচ্ছে। সমাধান কোথায়?  নারী দিবসে একটাই চাওয়া নারীদের নিরাপত্তা বাস্তবায়ন করা হোক। প্রত্যকের উচিত নিজের মানসিকতা পরিবর্তন করা এই নারীই তো কারো মা কারো বোন। তাহলে নিপীড়ন কেন। সম্মানের দৃষ্টিতে তাদের দেখি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ভাষা ও সাহিত্যের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাসের অন্যতম নারী সাংবাদিক ফারহানা নওশিন তিতলী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় এমন একটি পরিসর, যেখানে সব স্তর থেকে আগত শিক্ষার্থীদের চিন্তা ও জ্ঞানের প্রাণোচ্ছল যোগাযোগে একটি জীবন্ত স্রোতোধারা সৃষ্টি হবে। সেখানে চেতনা ও বুদ্ধিমত্তার নিরাপদ পদচারণ নিশ্চিত হবে। জ্ঞানের সঙ্গে জ্ঞানের, চিন্তার সঙ্গে চিন্তার, ধারণার সঙ্গে ধারণার দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীর আগ্রহ ও অনুসন্ধিৎসা উজ্জীবিত হবে। সেখানে নারী অধিকার বা নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কথা বলাটা নিতান্তই বেমানান ও লজ্জাস্করও বটে। নারী কে কেন মানুষ হিসেবে গণ্য না করে নারী হিসেবে বিশেষায়িত করা হবে!

তিনি আরও বলেন, যদি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কথায় আসি তবে যে বিষয়টি প্রথমেই চোখে পড়ে সেটি হলো এখানে সান্ধ্য আইনের দোহাই দিয়ে দিনের আলো শেষ হতে না হতেই মেয়েদেরকে চার দেওয়ালের মধ্যে বন্দী হয়ে থাকতে হয়। যা নিঃসন্দেহে এক প্রকার বৈষম্য। নিরাপত্তার দোহাই যদি দেওয়া হয় তবে এখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নিজেদের ব্যর্থতাকে স্বীকার করে নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় আমাদেরকে কি শিক্ষা দিচ্ছে? এখান থেকেও যদি বৈষম্যের শিক্ষা নিয়ে যেতে হয় তাহলে এর থেকে আর লজ্জাস্কর কিছু হতে পারেনা। বিশ্ববিদ্যালয় হোক উন্মুক্ত যেখানে স্বাধীন ভাবে জ্ঞানচর্চা ও আশেপাশের সকল কালিমাকে মুছে দিয়ে সুস্থ একটি সমাজ বিনির্মানে সহায়তা করবে।


সর্বশেষ সংবাদ