আবরারের মতো পিটিয়ে মারার হুমকি দেয়া হয় বদরুন্নেসাছাত্রী কলিকে

বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ
বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ  © ফাইল ছবি

‘‘আমি অন্যরুম থেকে সাড়ে বারোটার দিকে আমার রুমে গেলে আমার বেডমেট মহুয়া আপু ও সাংগঠনিক সম্পাদক খাদিজা আপু আমার ফোন কেড়ে নিয়ে দরজা আটকে লাইট বন্ধ করে দেন। তারা আমাকে বুয়েটের আবরার ফাহাদের মেরে ফেলার হুমমি দেন। এরপরেই তাদের কিল-ঘুষি, চড়থাপ্পড় ও চুল টানায় আমি অচেতন হয়ে পড়ি। পরে অন্য সিনিয়র আপুরা আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।’’

এভাবেই ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের ভুক্তভোগী ছাত্রী মাহমুদা আক্তার কলি। গত বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) মধ্যরাতে রুমের আলো নিভিয়ে কলিকে এভাবেই মারাধর করেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খাদিজা ইসলাম ও তার অনুসারীরা।

ছাত্রলীগ নেত্রীদের মারধরের শিকার বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীর নাম মাহমুদা আক্তার কলি। তিনি কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। কলি কলেজের পুরোনো হোস্টেলের ৩০৭ নম্বর কক্ষে থাকেন। নিজ কক্ষেই মারধরের শিকার হন কলি।

যেখান থেকে বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনার সূত্রপাত

ভুক্তভোগী ছাত্র মাহমুদা আক্তার কলি বলেন, সভাপতি পক্ষের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থীর সঙ্গে তাদের কক্ষে গিয়ে আড্ডা দিয়ে কক্ষে ফেরার পরই খাদিজা ও তার অনুসারী মহুয়া আক্তার কক্ষের আলো নিভিয়ে আমাকে মারধর করেন। আমি ও খাদিজা একই কক্ষে (৩০৭) থাকি। গতকাল রাতে আমি অন্য কক্ষে সিনিয়র আপুদের সঙ্গে আড্ডা দিই। আড্ডা শেষে কক্ষে ফেরামাত্রই ছাত্রলীগ কর্মী মহুয়া আক্তার আমার মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে মারধর শুরু করেন।

আরও পড়ুন: বদরুন্নেসা কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতির হামলায় ছাত্রী আহত

ছাত্রলীগ নেত্রীদের কাছে চিহ্নিত ছিলেন কলি

কলি বলেন, আমি কলেজে ভর্তি হওয়ার পরে ঢাকায় কোথাও থাকার জায়গা না থাকায় আপুদের সঙ্গে কথা বলে পলিটিক্যাল কক্ষে। তবে আমি প্রায় অসুস্থ থাকায় ছাত্রলীগের প্রোগ্রামে যেতে পারতাম না। মাঝখানে একদিন আমাকে জোরপূর্বক তাদের প্রোগ্রামে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়ি। পরে আমি হাঁটতে না পারায় সিএনজিতে করে হলে নিয়ে আসা হয়েছে। আমি নিয়মিত তাদের প্রোগ্রামে যেতে না পেরে কেন রাজনৈতিক কক্ষে থাকি—সেজন্য আগে থেকেই তাদের টার্গেটে ছিলাম।

অভিযোগ অস্বীকার ছাত্রলীগের

অভিযুক্ত খাদিজা ইসলাম বলেন, বদরুন্নেসা কলেজের পুরোনো হোস্টেলের কয়েকজন ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল রাতে ৩০৭ নম্বর কক্ষ থেকে চিৎকার ও কান্নার শব্দ শুনে অন্য কক্ষের ছাত্রীরা সেখানে যান। তখন মাহমুদা আক্তার জ্ঞান হারিয়ে মেঝেতে পড়েছিলেন। তারা মাহমুদাকে উদ্ধার করে প্রথমে অন্য কক্ষে নিয়ে যান। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর বাইরে যা বলা হচ্ছে সেগুলো মিথ্যা ও নাটক।

বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি সেলিনা আক্তার বলেন, বদরুন্নেসা কলেজ ছাত্রলীগ সাংগঠনিকভাবে ঐক্যবদ্ধ। ব্যক্তিগতভাবে আমার দিক থেকে কারও প্রতি কোনো বিদ্বেষ নেই। আমার দিক থেকে গতকাল রাতের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে কোনো আপত্তি নেই।

শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবা আক্তার বলেন, (বৃহস্পতিবার রাতে) কাউকে মারধর করা হয়নি বলে জানতে পেরেছি। ওই শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। বদরুন্নেসা কলেজ ছাত্রলীগ ঐক্যবদ্ধ আছে।

তদন্ত কমিটি গঠন

বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ সাবিকুন নাহার বলেন, বৃহস্পতিবার রাত থেকেই ঘটনার সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছিলাম। দুই পক্ষকে ডেকে কথা বলেছি এবং একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


সর্বশেষ সংবাদ