ত্রিপুরাদের ভাষায় অসমাপ্ত আত্মজীবনী অনুবাদ কুবি শিক্ষার্থীর
- কুবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২২, ০৯:২৪ PM , আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২২, ০৯:২৯ PM
'পাইথাকয়া লাংমা’, যার বাংলা অর্থ করলে দাড়ায় ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’। কথাটা বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম নৃগোষ্ঠী ত্রিপুরা জাতির 'ককবরক' ভাষার। কক অর্থ মানুষ আর বরক অর্থ ভাষা। চিনের ইয়াংসি ও হোয়াংহো নদীর উৎসস্থলে জন্ম নেয়া এ ভাষায় বর্তমানে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ৩৬ টি গোত্রের ভাবপ্রকাশের মাধ্যম। এছাড়াও গারো, কোচ, হাজং ইত্যাদি জনগোষ্ঠীর ভাষাও একই শ্রেণিভুক্ত বলে জানা যায়।
আর এ ভাষাতেই দীর্ঘ দুইবছরের প্রচেষ্টায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী অনুবাদ করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৭ম ব্যাচের শিক্ষার্থী যুবরাজ দেববর্মা। যুবরাজের জন্ম সিলেট জেলার শ্রীমঙ্গলের ডলুছড়া ত্রিপুরাপল্লীতে।
আরও পড়ুন: জবি ভর্তিতে থাকতে পারে জিপিএ নম্বর
ত্রিপুরা ভাষায় জাতির জনকের জীবনীগ্রন্থটি অনুবাদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "প্রধানমন্ত্রী যখন ২০২০ সালকে মুজিব শতবর্ষ ঘোষণা করেন সেসময় থেকেই আমার মধ্যে নিজের জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে কিছু করার ইচ্ছা জাগে, তাই অনুবাদের পথটি বেছে নেই। যেন একসাথে নিজেদের ভাষাকেও উপস্থাপন করতে পারি পাশাপাশি যে মানুষটা মহান স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন তার আদর্শটাও একটু ভিন্নভাবে ছড়িয়ে দিতে পারি। এছাড়াও বর্তমানে 'ককবরক' একটি বিলুপ্তপ্রায় ভাষা। আমাদের পরের প্রজন্ম হয়তো আর এভাষার অনেক অর্থই জানবেনা। তাই নিজেদের ভাষাটাকে বাঁচিয়ে রাখার ক্ষুদ্র প্রয়াসও বলা যায় এটাকে।"
দেববর্মার কাছে তার অনুবাদ করার দুইবছরের দীর্ঘ যাত্রার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,"সদ্য গ্রাজুয়েশন শেষে একজন ছাত্রের পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিকভাবে কিরকম চাপ থাকে তা আপনারা জানেন। এতকিছু সামলে কাজটা করার মূহুর্তগুলো বলে বুঝাতে পারবোনা। একটা সময় মনে হয়েছিল হাল ছেড়ে দেই, আমার পক্ষে সম্ভবনা। কিন্তু কিছু মানুষের অনুপ্রেরণা আমাকে পুরো পাণ্ডুলিপিটি অনুবাদ করতে সাহস যুগিয়েছে।"
পাণ্ডুলিপিটি গ্রন্থাকারে প্রকাশের বিষয়ে জানতে চাইলে দেববর্মা বলেন,"বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কিউরেটর, সাবেক শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খানের সাথে ওনার সহকারির মাধ্যমে যোগাযোগ করেছি। তারা বলেছেন, আমাকে জানাবে। বাকিটা স্যারের সাথে কথা বলার পর বলতে পারবো।"
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কিউরেটর নজরুল ইসলাম খানের কাছে প্রতিলিপিটি ছাপানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,"আমাদের পক্ষ থেকে তাকে 'ককবরক' ভাষায় পারদর্শী তৃতীয় কাউকে দিয়ে চেক করানোর কথা বলা হয়েছে। তিনি চেক করালে আমরা দায়িত্ব নিয়ে ছাপিয়ে দিবো কিন্তু কোনো আর্থিক সহায়তা দিতে পারবোনা।"
নৃবিজ্ঞান বিভাগের সদ্য সাবেক এই শিক্ষার্থীর পাণ্ডুলিপিটির স্বীকৃতির বিষয়ে বিভাগের শিক্ষক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন এন এম রবিউল আউয়াল চৌধুরীর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, "বিভাগের শিক্ষার্থী থাকাকালীন সবসময়ই সে একটু ভিন্নধর্মী চিন্তা করতো, তারই একটা রেপ্লিকেশন বলা যায় এটা। আর বঙ্গবন্ধু চিন্তাভাবনা আমরা যতবেশি মানুষকে জানাতে পারবো ততোই কল্যাণ। আর এটা যেহেতু সে তাদের ভাষায় করেছে সেহেতু তাদের জাতিগোষ্ঠীর জন্যও বঙ্গবন্ধুকে জানতে সহজ হবে।"
অনুষদ অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,"এই বিষয়গুলো বর্তমানে রাষ্ট্রীয়ভাবেই দেখা হয়। সে যদি চায় প্রয়োজনে আমরাও তাকে সহায়তা করবো। একদমই কোনো উপায় না থাকলে প্রয়োজনে আমরা বিভাগ কিংবা ডিন অফিস থেকে সহায়তা করবো।"
প্রসঙ্গত, ত্রিপুরারা ভারতীয় উপমহাদেশের এক প্রাচীন জাতি। পাহাড়, বন ও প্রকৃতিকে আঁকড়ে বসবাস করা এ নৃগোষ্ঠীটি বাংলাদেশের তিন পার্বত্য অঞ্চল ছাড়াও সমতল এলাকার কুমিল্লা, সিলেট, চাঁদপুর, রাজবাড়ী ও ফরিদপুর অঞ্চলে বসবাস করে। ২০০১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী দেশে প্রায় দুই লক্ষাধিক ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। ত্রিপুরা রাজাদের ১৩৬৮ বছরের শাসনামলে রাষ্ট্রের অন্যতম ভাষা হলেও ভারতীয় ইউনিয়নে যোগদানের পর এভাষা অবহেলার শিকার হয়। তবে ১৯৭৯ সালে 'ককবরক' আবার ত্রিপুরা রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা লাভ করে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো পর্যন্ত সরকারি ভাবে পড়ালেখার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়নি।
এদিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নানাভাবে সহায়তা করেছিল গোষ্ঠীটি। তাছাড়া বর্তমান মহানগরী কুমিল্লার 'চাকলা রোসনাবাদ' (ত্রিপুরা রাজ্যের সাবেক রাজধানী) অনেক স্থাপনাতেই ত্রিপুরা রাজাদের হাতের ছোয়া লেগে আছে। এছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মহারাজা হামতরফার কথা বলা হয়েছে। চিটাগং ডিস্ট্রিক্ট গেজেটিয়ারে তথ্যমতে, "কিং বীরা রাজা অব টিপ্পেরা (ত্রিপুরা) ওয়াজ দ্যা ফাউন্ডার ফাদার অব চিটাগং হিল ট্রাক্টস ইন ৫৯০"