কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

ব্যক্তিগত বিকাশ অ্যাকাউন্টে টিউশন ফি নিচ্ছে মালিকপক্ষ!

লোগো
লোগো

টিউশন ফিসহ সব ধরনের বকেয়া পরিশোধের জন্য শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ ও তা নিয়ম বহির্ভূত উপায়ে আদায়ের অভিযোগ উঠেছে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (সিবিআইইউ) বিরুদ্ধে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও বিভাগের শিক্ষকরা দফায় দফায় কল করে ও মেসেজ পাঠিয়ে টাকা জমা দেয়ার জন্য নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করছেন। এমনকি ফি আংশিক পরিশোধের অনুরোধ জানিয়েও পার পাচ্ছেন না আর্থিক সংকটে থাকা শিক্ষার্থীরা।

অন্যদিকে টিউশন ফি দিলেও মিলছে না পরিশোধের রশিদ। বিওটি সেক্রেটারি তথা মালিকপক্ষের নির্দেশে ফি-বেতনের টাকা নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ব্যক্তিগত (আনঅফিসিয়াল) বিকাশ অ্যাকাউন্টে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশনা রয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি সংক্রান্ত সব ধরনের লেনদেন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে হতে হবে।

এছাড়া ইউজিসির সাম্প্রতিক নির্দেশনা অনুযায়ী, টিউশন ফি আদায়ে শিক্ষার্থীদের ওপর কোনো ধরনের চাপ প্রয়োগ করতে পারবে না বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া ফি জমা দেয়ার ক্ষেত্রে ইনস্টলমেন্ট সুবিধা রাখার নির্দেশও দিয়েছে তদারক সংস্থাটি।

তবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ফি জমা দেয়ার এ কড়া নির্দেশ দিয়েছেন খোদ ট্রাস্টি বোর্ডের সেক্রেটারি লায়ন মো. মুজিবুর রহমান। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির একজন বিভাগীয় প্রধান বলেন, “আসলে আমরা নিরুপায়। অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার আগে আমাদের নিয়ে মিটিং করে বোর্ডের একজন সদস্য ফি আদায়ের কড়া নির্দেশ দিলেন। এখন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তো শিক্ষকদের খুব বেশি কিছু করার থাকে না।”

বিশ্ববিদ্যালয়টির বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে ফি পরিশোধের চাপ প্রয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এমনকি টাকা পরিশোধের জন্য দেয়া কঠোর নির্দেশনা সংবলিত মেসেজের স্ক্রিনশটও দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের কাছে পাঠিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। 

এক শিক্ষার্থীর ভাষ্যে, “বিশ্বজুড়েই করোনার আতংক। এর মধ্যে কক্সবাজারেও দিন দিন বেড়েই চলেছে আক্রান্তের সংখ্যা। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে সেমিস্টার ফি আদায়ে বরাবরই চাপ দিয়ে আসছে। ফি আদায়ের উদ্দেশ্যে কোনো রকম নামে মাত্র পরীক্ষার আয়োজন করা হয়েছে।”

আর শিক্ষকরা বলছেন, কর্তৃপক্ষের কঠোর নির্দেশনার কারণেই শিক্ষার্থীদের চাপ দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষক বলেন, “সেমিস্টার ফি আদায়ের উদ্দেশ্যে হঠাৎ করেই পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিক্ষকদের স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছে যেভাবেই হোক শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। এমনকি আমাদের তিন মাস ধরে বেতন দেয়া হচ্ছে না। বলা হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফি আদায় করে দিলে আমাদের বেতন পরিশোধ করা হবে। সবমিলে এক ধরনের অমানবিক পরিবেশ এখানে। কেউ চাকরি হারানোর ভয়ে মুখ খুলছে না।

এদিকে ফি জমা দেয়ার ক্ষেত্রে (আনঅফিসিয়াল পার্সোনাল নম্বরে) বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর নির্দেশনায়ও বেকায়দায় পড়েছে শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, সম্পূর্ণ আনঅফিসিয়ালি টাকা জমা দিতে হচ্ছে। জমা দেয়ার পর কোনো ধরনের রিসিট বা প্রমাণপত্র পাওয়া যাচ্ছে না। নিয়ম বহির্ভূত উপায়ে নেয়া এ অর্থ আত্মসাৎ হওয়ার আশঙ্কার কথাও জানিয়েছেন অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী।

বিওটি সেক্রেটারির এ ধরনের নির্দেশকে অনৈতিক বলে মন্তব্য করছেন খোদ সিবিআইইউ ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন আহামদ। তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে বোর্ড সেক্রেটারির বিষয়ে কিছু অভিযোগ শুনেছি। এরপর সেটি অ্যাকাউন্টসসহ বিভিন্ন বিভাগে খোঁজ নিয়ে সত্যতাও পেয়েছি। সে এটা কোনোভাবেই ঠিক করেনি। আমি তাঁকে ফোন করে এ ধরনের কাজ করতে নিষেধও করেছি। তারপরও কিছু বিভাগের শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বিকাশে টাকা আদায় করেছে। এটা সম্পূর্ণ অনৈতিক। এ ধরনের দুর্যোগের সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করতে হবে। এটা তো বিশ্ববিদ্যালয়; কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নয়।

সার্বিক বিষয়ে ইউজিসির চেয়ার‌ম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমাদের নির্দেশনা দেয়ার পরও কোনো বিশ্ববিদ্যালয় যদি শিক্ষার্থীদের ফি আদায়ে চাপ প্রদান করে, সেটি খুবই দুঃখজনক। শিক্ষার্থীরা আমাদের কাছে লিখিতভাবে জানালে খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেব। 

তবে অভিযোগ বিষয়ে জানতে ট্রাস্টি বোর্ডের সেক্রেটারি লায়ন মো. মুজিবুর রহমানকে সেলফোনে বারবার কল করেও পাওয়া যায়নি।


সর্বশেষ সংবাদ