চীন ও ভারতের সাথে সম্পর্ককে আমরা কখনোই জিরো-সাম গেমের সম্পর্ক হিসেবে দেখি না: ড. খলিলুর রহমান

  © সংগৃহীত

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (এসআইপিজি) আজ ‘বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়ন: প্রধান উপদেষ্টার ঐতিহাসিক সফর’ শীর্ষক এক সেমিনারের আয়োজন করে। আজ রবিবার (১৩ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট হলে এ মন্তব্য করেন তিনি।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. খলিলুর রহমান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা বিষয়ক উচ্চ প্রতিনিধি। সেশনটি সভাপতিত্ব করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হান্নান চৌধুরী এবং সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চীনের রাষ্ট্রদূত হি. ই. মি. ইয়াও ওয়েন। এ ছাড়াও সেমিনারে কূটনীতিক, গবেষক, মিডিয়া প্রতিনিধি এবং নীতিনির্ধারকেরা অংশগ্রহণ করেন। 

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, ড. মোহাম্মদ নুরুজ্জামান, পলিটিক্যাল সায়েন্স ও সোসিওলজি বিভাগের অধ্যাপক, এনএসইউ। তিনি বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে একটি কৌশলগত পুনর্গঠন পরিলক্ষিত হচ্ছে, যেখানে চীনের সাথে সম্পর্ক একটি নতুন মাত্রা লাভ করছে।” এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের টানাপোড়ন কিভাবে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ককে প্রভাবিত করছে সে বিষয়ে আলোকপাত করেন। 

ড. খলিলুর রহমান তাঁর বক্তব্যে এই সফরকে “ঐতিহাসিক মাইলফলক” হিসেবে অভিহিত করেন এবং জানান, “বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি এখন একান্তভাবেই বাংলাদেশের। অন্য কোন দেশের উপর আমরা এ ব্যাপারে নির্ভরশীল নই। এটি আমাদের কৌশলগত স্বাধীনতার প্রতিফলন।” তিনি চিকিৎসা খাতে নতুন অংশীদারিত্বের কথা বলেন, যার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের রোগীরা ভবিষ্যতে চীনের কুনমিংয়ে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ পাবেন এবং বাংলাদেশে চীনা হাসপাতাল স্থাপনের পরিকল্পনাও রয়েছে। 

তিনি বলেন, “চীন ও ভারতের সাথে সম্পর্ককে আমরা কখনোই জিরো-সাম গেমের সম্পর্ক হিসেবে দেখি না; বরং উভয়ের সাথে গুরুত্বের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখাই আমাদের লক্ষ্য।” রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, “এই সফর আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিত্তিকে আরও দৃঢ় করেছে। এটি শুধুমাত্র সরকার নয়, জনগণের সম্পর্ককেও প্রতিফলিত করে।” 

তিনি শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং শ্রমবাজারে সহযোগিতা বৃদ্ধির ঘোষণা দেন। ড. লিউ জংই, সিনিয়র রিসার্চ ফেলো, সাংহাই ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (SIIS), বলেন চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক কেবল অর্থনৈতিক নয়, সাংস্কৃতিক ও কৌশলগত দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। ড. লিউ বলেন, “বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণের প্রেক্ষাপটে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (BRI)- এর মাধ্যমে চীন দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারিতে আগ্রহী।"

মোহাম্মদ সুফিউর রহমান, সিনিয়র রিসার্চ ফেলো, এসআইপিজি, ভবিষ্যৎ অংশীদারত্বের ক্ষেত্রে আন্তঃসীমান্ত পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, কৃষি, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণকে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি উল্লেখ করেন, “বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরেই প্রত্যাশা করে আসছে যে, চীন কেবল সরকারী প্রেক্ষাপটে নয়, জনগণের সাথে জনগণের সম্পর্ককে কেন্দ্র করে একটি কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।” তিনি আরও বলেন, “রাখাইন অঞ্চলে স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণ এবং সেখানে নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নয়নের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য একটি সহায়ক পরিবেশ গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি।” পররাষ্ট্র বিশ্লেষক সৈয়দ শেহনাওয়াজ মহসিন বলেন, “এই সফরকে একক কোনো সফলতা

বা ব্যর্থতা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া, যার অংশ হিসেবে আমাদের পররাষ্ট্রনীতির অগ্রাধিকার নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত হচ্ছে।”
এসআইপিজির পরিচালক এবং এ অনুষ্ঠানের সঞ্চালক অধ্যাপক শেখ তৌফিক এম. হক বলেন, “এই সফর আমাদের পররাষ্ট্রনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করে। এসআইপিজি ভবিষ্যতেও এই ধরনের গঠনমূলক আলোচনা অব্যাহত রাখবে।” নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর আবদুল হান্নান চৌধুরী তাঁর সমাপনী বক্তব্যে বলেন, “চীনের সঙ্গে স্বাক্ষরিত এমওইউগুলো (MOU) বিনিয়োগ, প্রযুক্তি এবং স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের যুবসমাজের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। এই সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও বিস্তৃত হবে বলে আমি আশাবাদী।”


সর্বশেষ সংবাদ