বিইউবিটির উদ্ভাবন

স্বাভাবিক নাকি যৌন স্পর্শ— চিহ্নিত করবে স্মার্ট ডিভাইস

পোশাকে লাগানো স্মার্ট ডিভাইস ও বিইউবিটি লোগো
পোশাকে লাগানো স্মার্ট ডিভাইস ও বিইউবিটি লোগো  © টিডিসি ফটো

রাজধানীর ইডেন কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী তাসনিয়া (ছদ্মনাম)। হলে সিট না পাওয়ায় মিরপুরের শেওড়াপাড়ায় বোনের বাসায় থাকেন। মিরপুর থেকে ক্যাম্পাসে যেতে গণপরিবহন ব্যবহার করতে হয় তাকে। ক্যাম্পাসে যাওয়া-আসার পথে বাসে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হওয়ার আতঙ্ক বিরাজ করে তার মধ্যে। এছাড়া রাতে বাসায় ফেরার পথে কোনো বিপদ হলে কী করবেন তা নিয়ে সব সময় দুশ্চিন্তায় থাকেন। 

বাংলামোটরের রূপায়ন টাওয়ারে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন অনন্যা। ওই এলাকার বাসা ভাড়া বেশি হওয়ায় থাকেন বৌদ্ধ মন্দির এলাকায়। অফিসে যাওয়া-আসার জন্য ব্যবহার করেন গণপরিবহন। বাসে মাঝে মাঝেই হয়রানির ঘটনা দেখেন। নিজেও একাধিকবার ছোটখাটো হয়রানির শিকার হয়েছেন। তবে নিজের সম্মান ও প্রতিকার হবে না ভেবে এড়িয়ে গেছেন।

রিয়াজুল ইসলামের উদ্ভাবিত ডিভাইসটি পোশাকের মধ্যে সেট করতে হয়। এটি মানুষের স্পর্শের তারতম্য নির্ণয় করে যৌন হয়রানিমূলক স্পর্শ চিহ্নিত করে। হয়রানির শিকার ব্যক্তি ও ঘটনাস্থল সম্পর্কে স্থানীয় প্রশাসন ও হয়রানির শিকার নারীর আত্মীয়দের স্বয়ংক্রিয়ভাবে জানিয়ে দেবে। ডিভাইসটি নিয়ন্ত্রণ হবে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে।

শুধু তাসনিয়া কিংবা অনন্যা নয়; গণপরিবহন ব্যবহারকারী অধিকাংশ নারীই যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার আশঙ্কায় থাকেন। অনেকে হয়রানির শিকার হলেও আত্মসম্মানের ভয়ে বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেন না। এই অবস্থায় নারীদের গণপরিবহনে চলাচল নির্বিঘ্ন করতে স্মার্ট ডিভাইস উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজি (বিইউবিটি)। বিইউবিটির উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ ফৈয়াজ খানের তত্ত্বাবধানে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক মো. রিয়াজুল ইসলাম ডিভাইসটি তৈরি করেছে। এতে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছেন উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আলী নূর এবং সিএসই বিভাগের চেয়ারম্যান মো. সাইফুর রহমান। 

জানা গেছে, রিয়াজুল ইসলামের উদ্ভাবিত ডিভাইসটি পোশাকের মধ্যে সেট করতে হয়। এটি মানুষের স্পর্শের তারতম্য নির্ণয় করে যৌন হয়রানিমূলক স্পর্শ চিহ্নিত করে। হয়রানির শিকার ব্যক্তি ও ঘটনাস্থল সম্পর্কে স্থানীয় প্রশাসন ও হয়রানির শিকার নারীর আত্মীয়দের স্বয়ংক্রিয়ভাবে জানিয়ে দেবে। ডিভাইসটি নিয়ন্ত্রণ হবে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে।

রিয়াজুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, একটি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপের মাধ্যমে আমাদের ডিভাইসটি নিয়ন্ত্রিত হয়। যখন কারো মনে হবে যে, সে ডেঞ্জার-জোনের মধ্যে আছেন, তখন তিনি ডিভাইসটি অন করে দেবেন। এটি ফোন থেকেই করা যাবে। ডিভাইস অন হয়ে গেলে এর মধ্যে থাকা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স হয়রানিমূলক স্পর্শ নাকি স্বাভাবিক স্পর্শ সেটি শনাক্ত করবে। হয়রানিমূলক স্পর্শ হলে সঙ্গে সঙ্গে আত্মীয়-স্বজন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে একটি বার্তা চলে যবে। সেই সঙ্গে যাবে ভুক্তভোগীর লোকেশনও।

“এটি জনসাধারণের ব্যবহার উপযোগী করতে হলে এর বাণিজ্যিক উৎপাদন দরকার। আর এজন্য সরকার এবং সমাজের বিত্তশালীদের এগিয়ে আসতে হবে— অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফৈয়াজ খান, উপাচার্য, বিইউবিটি

তিনি আরও বলেন, ডিভাইসটির প্রোটোটাইপ তৈরির কাজ প্রাথমিক পর্যায়ে সম্পন্ন হয়েছে। তবে এটি জনসাধারণের ব্যবহার উপযোগী করে তুলতে এবং বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের জন্য সরকারের পাশাপাশি বিত্তশালী এবং সচেতন সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। 

বিইউবিটির উপ উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আলী নূর বলেন, কোনো ঘটনা প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ করা উত্তম। সেই চিন্তা থেকে আমাদের শিক্ষক গণপরিবহনে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে একটি যন্ত্র উদ্ভাবন করেছেন। তবে এটি বিইউবিটির জন্য তৈরি করা হয়নি। সাধারণ মানুষ ব্যবহার করলেই এর সার্থকতা পাওয়া যাবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের এই আইডিয়ার দিকে সরকারের দৃষ্টি পড়া দরকার। এ ছাড়া সমাজের যারা বিত্তশালী রয়েছে তাদেরও এগিয়ে আসতে হবে। তবেই আমাদের উদ্ভাবিত এই যন্ত্রটি জনসাধারণের ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা যাবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফৈয়াজ খান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, রিয়াজুল ইসলামকে আমি এমন একটি যন্ত্র তৈরি করতে বলেছিলাম; যার মাধ্যমে এমন একটি তরঙ্গ তৈরি হবে যেটি অযাচিত স্পর্শ শনাক্ত করতে পারবে। এছাড়া ওই তরঙ্গ ভিকটিমের অবস্থা জানিয়ে দেবে। আমরা যেটি পরিকল্পনা করেছিলাম সেটি বাস্তবায়ন করতে পেরেছি। তবে এটি জনসাধারণের ব্যবহার উপযোগী করতে হলে এর বাণিজ্যিক উৎপাদন দরকার। আর এজন্য সরকার এবং সমাজের বিত্তশালীদের এগিয়ে আসতে হবে।


সর্বশেষ সংবাদ