ভাড়া ক্যাম্পাসে কার্যক্রম, তবুও স্থায়ী সনদ মিলল ড্যাফোডিলের

ইউজিসি ও ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির লোগো
ইউজিসি ও ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির লোগো  © ফাইল ফটো

দেশে বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্থায়ী সনদ অর্জনের অন্যতম শর্ত, স্থায়ী ক্যাম্পাসে সম্পূর্ণ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। তবে এ শর্ত পূরণ না করেই ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি স্থায়ী সনদ পেয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থায়ী ক্যাম্পাস থাকলেও শর্ত ভেঙে রাজধানীতে ভাড়া করা ভবনে কার্যক্রম চালাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। প্রতিষ্ঠার ২১ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও ভাড়া ক্যাম্পাসে আংশিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এরপরও স্থায়ী সনদ দেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে তদারকি সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।

ইউজিসি বলছে, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় তাদের সম্পূর্ণ শিক্ষা কার্যক্রম স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করার শর্তে স্থায়ী সনদ পেয়েছে। তারা ধানমন্ডিতে কেবল ভর্তির তথ্য দিতে পারবে। সেখানে টিউশন ফি, ভর্তি ফিসহ অন্যান্য ফি পরিশোধের কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ড্যফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির দুটি অস্থায়ী ক্যাম্পাস এখনও বলবৎ রয়েছে। একটি ক্যাম্পাসের অবস্থান ধানমন্ডি ৩২ এর শুক্রবাদে। আর অপরটির অবস্থান সোবহানবাগে। এ ক্যাম্পাসগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি থেকে শুরু করে ভর্তি ফি পরিশোধ করা, সেমিস্টার ফি, টিউশন ফি, সার্টিফিকেট উত্তোলন, সমাবর্তন ফি’সহ যাবতীয় ফি পরিশোধ করা যায়।

সরেজমিনে সোবহানবাগ ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, বিল্ডিংয়ের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ড্যাফোডিল এডুকেশন নেটওয়ার্ক। ভেতরে প্রবেশের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি থাকলেও শিক্ষার্থী ভর্তির কথা জানাতেই নিচ তলার বাম পাশে অবস্থিত অফিস দেখিয়ে দেওয়া হয়। এ স্থানটি ভর্তি তথ্য সহায়তা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত হলেও এখানে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির সব ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে। শিক্ষার্থীর অভিভাবক পরিচয় দিয়ে এখানে ভর্তি ফি পরিশোধ করা যাবে কিনা জানতে চাইলে দায়িত্বরতরা হ্যাঁ সম্বোধন করেন।

শুক্রবাদের ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, বাইরে একজন সিকিউরিটি গার্ড দাঁড়িয়ে আছেন। ভেতরে সহজে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। পরিচয় নিশ্চিত হলে তবেই ভেতরে প্রবেশের অনুমতি মেলে।

ভেতরে প্রবেশ করে দেখা যায়, দ্বিতীয় তলার ডান পাশের কর্ণারে দুটি রুম রয়েছে। একটি রুমে একজন কর্মকর্তা শিক্ষার্থীদের নানা ধরনের ফি জমা নিচ্ছেন। এ কর্মকর্তার কাছে এই প্রতিবেদক জানতে চান, এখানে ভর্তি হওয়া যাবে কি না? তিনি জানান, ভর্তি হওয়া যাবে। সেমিস্টার ফিও এখানে জমা দেওয়া যাবে।

একই বিল্ডিংয়ের চতুর্থ তলায় গিয়ে দেখা যায়, ৪০৪ নম্বর রুমে অনেক শিক্ষার্থীর জটলা। তারা সবাই সার্টিফিকেট উত্তোলনের জন্য এসেছেন। এ কক্ষে দুইজন ব্যক্তিতে দেখা গেছে। একজন শিক্ষার্থীদের কাগজপত্র চেক করছেন। আরেকজন শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট এবং মার্কশীট বের করে দিচ্ছেন। কারো কোনো ফি বকেয়া থাকলে সেটি একই বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলায় গিয়ে জমা দিয়ে রশিদ নিয়ে আসতে বলা হচ্ছে।

ভেতরে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্লাস কার্যক্রম সাভারের বিরুলিয়ার স্থায়ী ক্যাম্পাসে হচ্ছে। তবে শিক্ষার্থী ভর্তিসহ, অন্যান্য কার্যক্রম ধানমন্ডির দুটি ক্যাম্পাস থেকেই করা যাচ্ছে।

ধানমন্ডির ভাড়া ক্যাম্পাস থেকে সাবেক শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট উত্তোলনের বিষয়টি স্বীকার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ নাদির বিন আলী। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি বলেন, আমাদের সাবেক শিক্ষার্থীদের জন্য স্থায়ী ক্যাম্পাসে এসে সার্টিফিকেট উত্তোলন করা কষ্টকর। সেজন্য আমরা শুক্রাবাদে সাময়িকভাবে সার্টিফিকেট দেওয়ার ব্যবস্থা চালু রেখেছি।

ভর্তি ফি, টিউশন ফিসহ অন্যান্য ফি পরিশোধের বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, শুক্রাবাদ কিংবা সোবহানবাগ কোন স্থানেই টিউশন ফি, ভর্তি ফি কিংবা অন্যান্য ফি জমা নেওয়া হয় না। এটি সঠিক নয়। আমাদের সকল কার্যক্রম স্থায়ী ক্যাম্পাসে পরিচালিত হচ্ছে। সেজন্য আমাদের স্থায়ী সনদ দেওয়া হয়েছে। শুক্রাবাদের দ্বিতীয় তলায় টিউশন ফি ও ভর্তি ফি জমা নেওয়ার ভিডিও আছে বলা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্থায়ী সনদ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) ড. মো. ফরহাদ হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সবকিছু দেখভাল করে ইউজিসি। ইউজিসি আমাদের কাছে সুপারিশ করেছিল। এ সুপারিশের কারণে আমরা ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থায়ী সনদ দিয়েছি।

শর্ত পূরণ না করেও স্থায়ী সনদ পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসি সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা বিভিন্ন সময় ধানমন্ডি ও সোবহানবাগ ক্যাম্পাসে আামাদের প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছি। তারা সেখানে এ ধরনের কোনো কার্যক্রম দেখেননি। সেজন্য তাদের স্থায়ী সনদ দেওয়া হয়েছিল।

শর্ত পূরণ না করলে স্থায়ী সনদ ফিরিয়ে নেওয়ার সুপারিশ করা হবে জানিয়ে ইউজিসি সদস্য জানান, ভাড়া ক্যাম্পাসে টিউশন ফি কিংবা ভর্তি ফি কোনো কিছুই জমা নেওয়া যাবে না। তারা এ ধরনের কার্যক্রম এখানে পরিচালনার কথা আমাদের জানায়নি। এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালিত হলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। 


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence