মীনা দিবস আজ

রাজুদের চেয়ে এখন এগিয়ে মীনারা

মীনা কার্টুনের একটি দৃশ্য
মীনা কার্টুনের একটি দৃশ্য  © ফাইল ছবি

ছোট ভাই রাজু স্কুলে যেতে পারলেও ঘরের কাজের জন্য স্কুলে যাওয়ার অধিকার ছিল না মীনার। স্কুলের জানালায় উঁকি দিয়ে মীনা শুনে নিত শিক্ষকের পাঠ। ‘দুই একে দুই, দুই দুগুণে চার, তিন দুগুণে ছয়’ পোষা টিয়া পাখি মিঠুর মাধ্যমে নামতা শিখে একদিন মুরগি চোর ধরতে পেরেছিল মীনা। এ ঘটনার পরই স্কুলবঞ্চিত মীনাকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন তার মা-বাবা।

মেয়েদের স্কুলে পাঠানোকে উৎসাহিত করতে ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রথম প্রচারিত হয় মীনা কার্টুনের ওই পর্বটি। তবে ৩০ বছর পরের চিত্র জানান দিচ্ছে, এই মীনা তথা নারীদেরদের জয়জয়কার। দেশের প্রাথমিক শিক্ষায় অংশগ্রহণে এখন রাজুদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে মীনারা।

মীনা দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন ভাষায় নির্মিত একটি জনপ্রিয় টিভি কার্টুন। হিন্দি-বাংলাসহ মোট ২৯টি ভাষায় তৈরি হয়েছে কার্টুনটি। জাতিসংঘ শিশু তহবিল বা ইউনিসেফ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মেয়েদের শিক্ষাসহ সব ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টিতে নব্বই দশকে ‘মীনা’ নামের ধারাবাহিক কার্টুন চলচ্চিত্র তৈরি করে।

মীনা এই ধারাবাহিকের কেন্দ্রীয় চরিত্র। ৯ বছরের একটি মেয়ে মীনা, যে শিক্ষার অধিকার চায়, সব ধরনের প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে লড়াই করে। মীনার জন্ম ১৯৯২ সালে। দেখতে দেখতে ৩১ বছর পার হলেও মীনা আটকে আছে সেই ৯ বছরেই।

এখন প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এর মানে হলো প্রাথমিক যত শিক্ষার্থী ভর্তি হয়, তাদের মধ্যে ৮৬ শতাংশই এখন প্রাথমিক শিক্ষা (পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত) সম্পন্ন করতে পারছে। করোনাকালে ২০২১ সালে এই হার ছিল ১৪ শতাংশের বেশি।

বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) ২০১০ থেকে সর্বশেষ ২০২২ সালের তথ্য অনুসারে, এই এক দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশের প্রাক্‌–প্রাথমিক ও প্রাথমিকে ভর্তি, ঝরে পড়া, টিকে থাকা, প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনার একটি চক্র পূরণ করা এবং একই ক্লাসে আবার পড়া (পরীক্ষায় পাস না করা বা অন্য কোনো কারণে) এই পাঁচ সূচকের প্রতিটিতে মেয়েরা এগিয়ে। করোনা পরবর্তী স্কুল থেকে ঝরে পড়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাকে সামনে নিয়ে আবার এসেছে ‘মীনা দিবস’।

১৯৯৮ সাল থেকে প্রতিবছর ২৪ সেপ্টেম্বর ‘মীনা দিবস’ হিসেবে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা ও ইস্ট-এশিয়ার দেশসমূহে পালন করা হয়। তবে এ বছর ২৪ সেপ্টেম্বর রবিবার হওয়ায় শ্রেণি কার্যক্রম ও দাপ্তরিক কাজের বিঘ্ন না ঘটার সুবিধার্থে ২৩ সেপ্টেম্বর দেশে শনিবার’ মীনা দিবস-২০২৩ উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

প্রতিবছর নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর মীনা দিবস পালন করে। এবারও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এ উপলক্ষ্যে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন প্রধান অতিথি এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করবেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত।

এছাড়াও দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে—গল্প বলার আসর, বিশেষ ব্যক্তিত্ব কর্তৃক শিশুদের উদ্দেশ্যে প্রেরণামূলক বক্তব্য, পাপেট শো ও মাপেট শো, স্টল প্রদর্শনী, রচনা প্রতিযোগিতা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, যেমন খুশি তেমন সাজো ও মীনা বিষয়ক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে জাতীয় কর্মসূচির সাথে মিল রেখে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে।

সূচকে এগিয়ে মেয়েশিশুরা:
এক দশকের বেশি সময় ধরে প্রাথমিকে মেয়েশিশু ভর্তি ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। প্রাক্‌–প্রাথমিক ও প্রাথমিকে ২০১০ সালে মোট ভর্তি হয়েছিল ১ কোটি ৮২ লাখ ৫৯ হাজার ৬৯১ শিশু শিক্ষার্থী। এর মধ্যে মেয়ে ছিল ৯১ লাখ ৫৮ হাজার ২১০ জন, যা ছেলেদের তুলনায় অর্ধলাখের বেশি। সর্বশেষ ২০২২ সালে ২ কোটি ১০ লাখ ৯৭২টি শিশু ভর্তির মধ্যে মেয়ে ছিল ৯৯ লাখ ৫৮ হাজার ৪৭৪ জন, যা ছেলেদের তুলনায় প্রায় কাছাকাছি। তবে ২০২১ সালে ছেলেদের তুলনায় মেয়ে সোয়া ৪ লাখের চেয়ে বেশি ছিল। 

৯ বছরের একটি মেয়ে মীনা, যে শিক্ষার অধিকার চায়, সব ধরনের প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে লড়াই করে। মীনার জন্ম ১৯৯২ সালে। দেখতে দেখতে ৩১ বছর পার হলেও মীনা আটকে আছে সেই ৯ বছরেই।

এ সময়ে মেয়েদের ঝরে পড়ার হার কমেছে তিন গুণ, ছেলেদের তিন গুণের বেশি। স্কুলের প্রাথমিক শিক্ষায় মেয়েদের টিকে থাকার হার বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশের মতো, তার কিছুটা কম ছেলেদের। তবে তুলনামূলক বিচারে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের টিকে থাকার হার বেশি।

পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত চক্র পূরণ করার হার বেড়েছে মেয়েদের ২৬ এবং ছেলেদের ২৫ শতাংশ। একই শ্রেণিতে একাধিকবার পড়ার হার কমেছে প্রায় ১২ শতাংশ। এ ক্ষেত্রেও ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা ভালো অবস্থানে। এ সময়ে মেয়েদের দক্ষতার মূল্যায়ন বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ, আর ছেলেদের ২২ শতাংশের বেশি। 

কমেছে ঝরে পড়ার হার:
একটি সময় দেশে প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার ছিল অনেক বেশি। ২০১০ সালেও প্রাথমিকে ভর্তি হওয়ার পরও প্রায় ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষা শেষ না করেই ঝরে পড়ত। তবে এখন ধারাবাহিকভাবে ঝরে পড়ার হার কমছে। 

সর্বশেষ তথ্য বলছে, এখন প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এর মানে হলো প্রাথমিক যত শিক্ষার্থী ভর্তি হয়, তাদের মধ্যে ৮৬ শতাংশই এখন প্রাথমিক শিক্ষা (পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত) সম্পন্ন করতে পারছে। করোনাকালে ২০২১ সালে এই হার ছিল ১৪ শতাংশের বেশি।

এছাড়া প্রায় ৯৭ শতাংশ বিদ্যালয় গমনোপযোগী শিশু বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের করা ২০২২ সালের বার্ষিক প্রাথমিক বিদ্যালয় শুমারিতে (এপিএসসি) এই তথ্য উঠে এসেছে। গত মাসে এই শুমারির প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে অধিদপ্তর। 


সর্বশেষ সংবাদ