আনন্দবাজারের বিশ্লেষণ

শেখ হাসিনা বাদ, পরিচ্ছন্নদের দিয়ে আ. লীগ পুনর্গঠন

শেখ হাসিনা
শেখ হাসিনা  © সংগৃহীত

ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে দল পুনর্গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছে  ‘পরিচ্ছন্ন আওয়ামী লীগ’। বাংলাদেশে এই প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই বেশ এগিয়ে গেছে বলে জানা গেছে। তবে আওয়ামী লীগের মূল অংশ এই উদ্যোগকে ‘প্রতারণা’ ও ‘দল ধ্বংসের গভীর চক্রান্ত’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের এই পুনর্গঠন ভারতের জন্য সুখকর হবে না বলে মত দিয়েছেন দেশটির একাধিক কূটনীতিক। তাঁদের মতে, আওয়ামী লীগ ঐতিহাসিকভাবে ভারতের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক শক্তি, এবং এর নেতৃত্ব যদি পাকিস্তানপন্থিদের হাতে চলে যায়, তাহলে তা ভারতের জন্য বিরাট বিপর্যয় হয়ে উঠতে পারে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘পরিচ্ছন্ন’ হিসেবে যাঁদের নাম আসছে, তাঁদের মধ্যে অনেকেই অতীতে পাকিস্তান ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন, এবং তাঁদের ভাবমূর্তি আদৌ পরিচ্ছন্ন নয়।

এই নতুন উদ্যোগ ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা শুরু হয় জাতীয় নাগরিক দলের (এনসিপি) নেতা হাসনাত আবদুল্লা-র একটি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে। পোস্টে তিনি দাবি করেন, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান একান্ত বৈঠকে তাঁদের বলেছেন, যদি প্রাক্তন স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী, ঢাকার সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, এবং প্রাক্তন সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী-র মতো নেতাদের দিয়ে নতুন একটি আওয়ামী লীগ (রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ) গঠন করে নির্বাচনে অংশ নেয়া হয়, তবে সেনাবাহিনী তাদের গ্রহণ করবে।

হাসনাত আরও লেখেন, তাঁদের বলা হয়েছে এই নেতারা আগামী এপ্রিল-মে মাসের মধ্যে শেখ পরিবারের ‘অপরাধ’ স্বীকার করবেন, শেখ হাসিনাকে অস্বীকার করবেন এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শে একটি ‘নতুন আওয়ামী লীগ’ গড়ার প্রতিশ্রুতি দেবেন।

আওয়ামী লীগের এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জানান, “হাসনাতের পোস্টের আগেই আমরা এই ষড়যন্ত্রের খবর পেয়েছি। যাদের নাম এসেছে, তারা নতুন কেউ নয়। এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য হচ্ছে—দেখানো যে নির্বাচনে আওয়ামী লীগও অংশ নিয়েছে, অথচ সেটি হবে প্রতারণামূলক। জনগণকে এভাবে ধোঁকা দেওয়া যায় না।”

তিনি আরও বলেন, “২০০৬ সালেও সেনা-সমর্থিত সরকার শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের বিকল্প নেতৃত্ব দাঁড় করাতে চেয়েছিল। সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। এবারও তাই হবে। যেমন ভারতের কংগ্রেস গান্ধী পরিবার ছাড়া কল্পনা করা যায় না, তেমনি বাংলাদেশের আওয়ামী লীগও শেখ মুজিব পরিবারের বাইরে ভাবা কঠিন।”

এই নেতা আরও বলেন, “রাহুল গান্ধী যেমন ঠাকুমা ও বাবাকে হারিয়েছেন, শেখ হাসিনা তাঁর বাবা-মা, ভাইসহ গোটা পরিবারকে হারিয়েছেন। এই দুই পরিবারের ত্যাগ অগণন কর্মী-সমর্থকের হৃদয়ে গভীরভাবে স্থান করে নিয়েছে।”

কলকাতায় আত্মগোপনে থাকা এক আওয়ামী লীগ নেতা জানান, এই ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ পরিকল্পনাই বর্তমানে তাঁদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ। বিভিন্ন এলাকার নেতাদের প্রলোভন দেখানো হচ্ছে—শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে নিরাপত্তা ও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে, নচেৎ ভবিষ্যৎ অন্ধকার। কয়েকজন বিএনপি নেতা এবং সেনা-ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা ফোনে এই ধরনের প্রস্তাব দিচ্ছেন বলেও তিনি জানান।

তিনি বলেন, “যাঁদের পরিচ্ছন্ন বলা হচ্ছে, তাঁদের কেউই সত্যিকারের পরিচ্ছন্ন নন। অনেকেই পাকিস্তান বা চীনের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক বজায় রাখেন। সেই স্বার্থ রক্ষা করতেই তাঁরা দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে নেমেছেন।”

এদিকে আওয়ামী লীগ জেলায় জেলায় ভার্চুয়াল মিটিং আয়োজন করছে। এসব বৈঠকে শেখ হাসিনা নিজে যুক্ত হচ্ছেন এবং কর্মীদের বক্তব্য শুনছেন। তিনি বলছেন, “আমি দেশ ছাড়তে চাইনি, ইস্তফাও দিইনি। আমাকে জোর করে বিমানে তুলে দেশছাড়া করা হয়েছে। চক্রান্ত করে আমার সরকার ফেলা হয়েছে। এর শেষ দেখে ছাড়ব।”

এখন পর্যন্ত ৬৪ জেলার মধ্যে ২৩টি জেলার কর্মীদের সঙ্গে এই বৈঠক শেষ হয়েছে। তিনি বারবার আশ্বস্ত করছেন, “আমি বেঁচে রয়েছি, খুব শিগগিরই ফিরব। আমার কর্মীদের উপর হওয়া প্রতিটি নির্যাতনের বিচার করব। এদের দিন ফুরিয়ে আসছে।”


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence