সোনালি কাবিনের কবি আল মাহমুদের জন্মদিন কাল

কবি আল মাহমুদ
কবি আল মাহমুদ  © সংগৃহীত

আগামীকাল ১১ জুলাই (মঙ্গলবার)। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান ও মৌলিক কবি তথা ‘সোনালি কাবিন’র কবি আল মাহমুদের ৮৮তম জন্মদিন। ১৯৩৬ সালের এই দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মৌড়াইল গ্রামের মোল্লাবাড়িতে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রবাদপ্রতিম এই কবি জন্মগ্রহণ করেন। 

তার পিতার নাম আব্দুর রব মীর ও মা রৌশন আরা বেগম। আল মাহমুদের প্রকৃত নাম মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ। তিনি কুমিল্লার দাউকান্দির সাধনা হাই স্কুল এবং পরে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড হাই স্কুলে পড়াশোনা করেন। মূলত এই সময় থেকেই তার লেখালেখির শুরু। আল মাহমুদ বেড়ে উঠেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। 

আল মাহমুদ শুধু একজন কবি ছিলেন, তা নয়। তিনি কবিতা, কাব্য রচনার পাশাপাশি ছড়া, গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধ রচনায় পারদর্শী ছিলেন। কথা শিল্পে তিনি তার স্বাতন্ত্র্য শিল্পমন্ডিত। তার কথা শিল্পের সেরা ও সর্বশেষ নিদর্শন হচ্ছে ‘পোড়া মাটির জোড়া হাঁস’ উপন্যাস।

সংবাদপত্রে লেখালেখির সূত্র ধরে ১৯৫৪ সালে আল মাহমুদ ঢাকায় আসেন। শুরুতে তিনি কবি আব্দুর রশীদ ওয়াসেকপুরী সম্পাদিত সাপ্তাহিক ‘কাফেলা’য় লেখালেখি শুরু করেন। পাশাপাশি ‘দৈনিক মিল্লাত’ পত্রিকায় প্রুফ রিডার হিসেবে সাংবাদিকতার জগতে প্রবেশ করেন। ১৯৫৫ সাল কবি আব্দুর রশীদ ওয়াসেকপুরী ‘কাফেলা’র চাকরি ছেড়ে দিলে তিনি সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধের পরে ‘দৈনিক গণকণ্ঠ’ পত্রিকার সম্পাদক হন আল মাহমুদ। সম্পাদক থাকাকালীন সরকারের বিরুদ্ধে লেখার কারণে এক বছরের জন্য কারাবরণ করতে হয় তাকে। 

মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি গল্প লেখার দিকে মনোযোগী হন। ১৯৭৫ সালে তার প্রথম ছোটগল্প গ্রন্থ ‘পানকৌড়ির রক্ত’ প্রকাশিত হয়। পরে ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে শিল্পকলা একাডেমির গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের সহ-পরিচালক পদে নিয়োগ দেন। ১৯৯৩ সালে পরিচালক হিসেবে শিল্পকলা একাডেমি থেকে অবসর নেন বরেণ্য এই কবি।

১৮ বছর বয়স থেকে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় আল মাহমুদের কবিতা প্রকাশিত হতে থাকে। সিকান্দার আবু জাফর সম্পাদিত ‘সমকাল’ পত্রিকা এবং কলকাতায় কবি বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত ‘কবিতা’, ‘নতুন সাহিত্য’, ‘চতুষ্কোণ’, ‘ময়ূখ’ ও ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকায় লেখালেখির সুবাদে ঢাকা ও কলকাতার পাঠকদের কাছে সুপরিচিত হয়ে ওঠেন তিনি। ১৯৬৩ সালে প্রকাশিত হয় আল মাহমুদের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘লোক লোকান্তর’, যেটি তাকে স্বনামধন্য কবিদের সারিতে জায়গা করে দেয়। এরপর কালের কলস (১৯৬৬), সোনালি কাবিন (১৯৬৬), মায়াবী পর্দা দুলে উঠো (১৯৬৯)- এভাবে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ কাব্যগ্রন্থ তাকে প্রথম সারির কবি হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করে। 

১৯৯৩ সালে বের হয় আল মাহমুদের প্রথম উপন্যাস ‘কবি ও কোলাহল’। তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে - ‘অদৃষ্টবাদীদের রান্নাবান্না’, ‘মিথ্যাবাদী রাখাল’, ‘আমি দূরগামী’, ‘দ্বিতীয় ভাঙন’, ‘উড়ালকাব্য’ ইত্যাদি। ‘কাবিলের বোন’, ‘উপমহাদেশ’, ‘ডাহুকি’, ‘আগুনের মেয়ে’, ‘চতুরঙ্গ’ ইত্যাদি তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। ‘পানকৌড়ির রক্ত’সহ বেশকিছু উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থ লিখে গল্পেও কিংবদন্তী হয়ে ওঠেন তিনি। এছাড়া ‘যেভাবে বেড়ে উঠি’ ও ‘বিচূর্ণ আয়নায় কবির মুখ’ তার উল্লেখযোগ্য আত্মজীবনীগ্রন্থ।

আল মাহমুদের প্রকৃত নাম মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি সৈয়দা নাদিরা বেগমের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এ দম্পতির পাঁচ পুত্র ও তিন কন্যা রয়েছে। মৃত্যুর বছর কয়েক আগে সৈয়দা নাদিরা বেগম মারা যান। এরপর থেকে তিনি মগবাজারের বাসায় নিভৃতেই বসবাস করতেন। ২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি  ৮৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ আল মাহমুদ একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, জয় বাংলা পুরস্কার, হুমায়ুন কবীর স্মৃতি পুরস্কার, জীবনানন্দ স্মৃতি পুরস্কার, কাজী মোতাহার হোসেন সাহিত্য পুরস্কার, কবি জসীম উদ্দিন পুরস্কার, ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার, নাসির উদ্দিন স্বর্ণপদকসহ বহু সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।


সর্বশেষ সংবাদ