দাবি পূরণ না হলে ডিম-মুরগির উৎপাদন ১ মে থেকে বন্ধ ঘোষণা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০১:২৯ PM , আপডেট: ২৮ জুন ২০২৫, ০৬:২৩ PM

সারা দেশের প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম নিশ্চিতের পাশাপাশি করপোরেট কোম্পানির সিন্ডিকেট বন্ধ করাসহ ১০ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)। এসব দাবি পূরণ না হলে ১ মে থেকে সারা দেশের প্রান্তিক পোলট্রি খামারে ডিম ও মুরগির উৎপাদন বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) বেলা ১১টায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে।
এতে সংগঠনটির সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার অভিযোগ করেন, দেশজুড়ে প্রান্তিক ডিম ও মুরগি খামারিদের মধ্যে হাহাকার দেখা দিয়েছে। গত দুই মাসে তারা প্রায় ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকার লোকসানের মুখে পড়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে পোলট্রি খাত ধ্বংসের মুখে পড়লেও সরকারের নীরব ভূমিকা পালন করছে।
তিনি বলেন, রমজান ও ঈদ মৌসুমেও ভয়াবহ লোকসান দিয়ে প্রান্তিক খামারিরা প্রতিদিন ২০ লাখ কেজি মুরগি উৎপাদন করেছেন। প্রতি কেজিতে ৩০ টাকা লোকসানে, এক মাসে লোকসান হয়েছে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া দৈনিক ৪ কোটি ডিমের মধ্যে প্রান্তিক খামারিরা উৎপাদন করেন ৩ কোটি ডিম। প্রতি ডিমে ২ টাকা করে লোকসানে, দুই মাসে ডিমে লোকসান হয়েছে ৩৬০ কোটি টাকা। মোট দুই মাসে ডিম ও মুরগির খাতে লোকসান দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। কিন্তু এমন অবস্থায় সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর নীরবতায় কিছু করপোরেট কোম্পানি পুরো পোল্ট্রি শিল্প দখলের ষড়যন্ত্রে নেমেছে। তারা শুধু ফিড, বাচ্চা ও ওষুধ নয়-ডিম ও মুরগির বাজারও নিয়ন্ত্রণ করছে। কৃত্রিম সংকট তৈরি করে প্রান্তিক খামারিদের ঠেলে দিচ্ছে ‘কন্ট্রাক্ট ফার্মিং’ এর দাসত্বে।
তিনি আরও বলেন, আমরা করপোরেট দাসত্ব মানব না। আগামী ১ মে থেকে সারা দেশে প্রান্তিক খামারিরা খামার বন্ধ রাখবেন। এই কর্মসূচি চলবে যতক্ষণ না সরকার সিন্ডিকেট ভাঙতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
কারচুপি ও করপোরেট শোষণের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ঈদের আগে ২৮ থেকে ৩০ টাকায় উৎপাদিত বাচ্চা করপোরেট কোম্পানিগুলো ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করে। এখন সেই বাচ্চাই ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি ব্রয়লারের উৎপাদন খরচ ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা, অথচ কর্পোরেটরা বাজারে বিক্রি করছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকায়। ফলে লোকসানে খামারিরা। আবার ডিমের উৎপাদন খরচ ১০ থেকে ১০ দশমিক ৫০ টাকা, অথচ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮ থেকে ৮ দশমিক ৫০ টাকায়। বাজার মূলত করপোরেটের হাতে। তারা দাম নির্ধারণ করে। আর খামারিদের বাধ্য করা হয় মানতে।
বিবৃতিতে তিনি বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ১০ দফা দাবি জানান। সেগুলো হচ্ছে,
১. পোলট্রি পণ্যের জন্য জাতীয় মূল্যনিয়ন্ত্রণ নীতিমালা ও নির্ধারণ কমিটি গঠন করতে হবে।
২. কন্ট্রাক্ট ফার্মিং নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইন করে এটি নিষিদ্ধ করতে হবে।
৩. পোলট্রি বাজার রেগুলেটরি অথরিটি গঠন করতে হবে।
৪. ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের জন্য সরকারের পুনর্বাসন প্যাকেজ দিতে হবে।
৫. খামারিদের রেজিস্ট্রেশন ও আইডি কার্ড দিতে হবে।
৬. কোম্পানিকে কেবল কাঁচামাল উৎপাদনে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।
৭. কন্ট্রাক্ট ফার্মিং ও কোম্পানির খামার নিষিদ্ধ করতে হবে।
৮. কেজি ভিত্তিক ডিম ও মুরগি বিক্রির নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
৯. ডিম-মুরগির রপ্তানির সুযোগ বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ নিতে হবে।
১০. এবং পূর্ণাঙ্গ ‘পোলট্রি উন্নয়ন বোর্ড’ গঠন করতে হবে।
বিবৃতিতে এসব দাবি মানা না হলে কঠোর কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলেও জানানো হয়েছে।