মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের পদত্যাগ
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১২:১৭ PM , আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০১:০৪ PM
মালয়েশিয়ায় প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করলেন ড. মাহাথির মোহাম্মদ। আজ দেশটির রাজার নিকট পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। আল জাজিরা ও বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।
বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক ৯৪ বছর বয়সী এই প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় আসেন। তার পদত্যাগের ব্যাপারে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে শিগগিরই এ ব্যাপারে বিবৃতি জারি করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
নতুন সরকার গঠন নিয়ে বিরোধী দলগুলোর দফায় দফায় বৈঠক ও ক্ষমতাসীন জোটে ভাঙনের জোরালো গুঞ্জন ঘিরে তৈরি হওয়া রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মাঝে পদত্যাগ করলেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ।
২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ের পর পাকাতান হারাপান জোটের প্রধান হিসেবে শপথ নেন মাহাথির মোহাম্মদ। বারিসান ন্যাশনাল দলের নেতা হিসেবে টানা প্রায় ২২ বছর দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে ২০০৩ সালে ক্ষমতা ছাড়েন তিনি।
গত কয়েকদিন ধরে মালয়েশিয়ার ক্ষমতাসীন পাকাতান হারাপান জোটের নেতারা দফায় দফায় বৈঠক করায় জোট ভেঙে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়। পাকাতান হারাপান জোটে ভাঙনের আশঙ্কা জোরালো হওয়ায় বিরোধী দল উমনো অ্যান্ড পার্টি ইসলাম সে-মালয়েশিয়ার (পিএএস) নেতৃত্বে শিগগিরই নতুন সরকার আসতে পারে বলে দেশটির রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জানান।
এর আগে, রোববার ক্ষমতাসীন পাকাতান হারাপান জোটের শীর্ষস্থানীয় নেতারা দফায় দফায় বৈঠক করায় নতুন সরকার গঠনের আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ হয়। প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল পার্টি প্রিবুমি বারসাতু মালয়েশিয়ার (পিপিবিএম) এমপি ও নেতারা রোববার সকালে পেটালিং জায়ায় দলটির প্রধান কার্যালয়ে ছয় ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন।
তবে অন্য একটি বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ, দলের প্রেসিডেন্ট মুহিদ্দিন ইয়াসিন, দলটির ছাত্র সংগঠনের প্রধান সৈয়দ সিদ্দিক আব্দুল রহমান ও অন্যান্য দলের সাংসদদেরও রোববার ওই কার্যালয়ে দেখা যায়।
মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে বেশ পরিচিত দুই নেতা মাহাথির মোহাম্মদ ও আনোয়ার ইব্রাহীম (৭২)। রোববার রাতে জোট নেতাদের ওই বৈঠকে দেশটিতে নতুন সরকার গঠনের পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে গুঞ্জন ছড়ায়। প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ দুই বছর আগে ক্ষমতায় আসার সময় তার জোটসঙ্গী বহু বর্ণের রাজনৈতিক দল পিকেআরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার ইব্রাহীমের সঙ্গে সমঝোতা করেন। সেই সময় তিনি জানান, ক্ষমতার মেয়াদ পূর্ণ করার আগেই সরে যাবেন এবং আনোয়ার ইব্রাহীমের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।
কিছুদিন আগে মালয়েশিয়ার এই প্রধানমন্ত্রী জানান, তিনি আগামী নভেম্বরে দেশটিতে অনুষ্ঠেয় অ্যাপেকের শীর্ষ সম্মেলনের পরপরই পদত্যাগ করে আনোয়ার ইব্রাহীমকে তার স্থলাভিষিক্ত করবেন। কিন্তু চারদলীয় পাকাতান হারাপান জোটের অন্য নেতারা আনোয়ার ইব্রাহীমের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে মাহাথিরের পরিকল্পনা মেনে নিতে পারছেন না। যে কারণে গত কয়েকদিন জোটের অন্য রাজনৈতিক দলের নেতারা দফায় দফায় বৈঠক করে আনোয়ার ইব্রাহীমকে ঠেকাতে নতুন জোট গড়ার পরিকল্পনা করেন।
সম্প্রতি দেশটির পাঁচটি উপ-নির্বাচনে ক্ষমতাসীন জোটের মনোনীত প্রার্থীদের হেরে যাওয়ার পর এই জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়। এমনকি আনোয়ার ইব্রাহীমের সঙ্গে জোট সরকারের অর্থমন্ত্রী মোহাম্মদ আজমিন আলীর বিভেদ দেখা দেয়। আজমিন ঘনিষ্ঠরা মাহাথিরের পিপিবিএম ছেড়ে পিকেআরের সঙ্গে জোট গড়ার পরিকল্পনা শুরু করেন। সংসদে এই দলটির সর্বোচ্চ ৫০ জন এমপি রয়েছেন। তারা বলছেন, সংসদে মাত্র ২৬ এমপি রয়েছে পিপিবিএমের। এই দলটিও পাকাতান হারাপান জোট ছাড়ার ইঙ্গিত দেয়।
১৯৮১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন মাহাথির মোহাম্মদের ডেপুটি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আনোয়ার ইব্রাহীম। কিন্তু দেশটিতে উদ্ভূত অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবিলার কৌশল নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়ায় ১৯৯৮ সালে আনোয়ার ইব্রাহীমকে বরখাস্ত করেন মাহাথির মোহাম্মদ। পরে সমকামীতার অভিযোগ এনে আনোয়ারকে কারাগারে পাঠানো হয়।
১৯২৫ সালের ১০ জুলাই ব্রিটিশ কলোনিভুক্ত মালয়ের কেদাহ অঞ্চলের সেতার নামক গ্রামে সাধারণ এক স্কুলশিক্ষকের ঘরে জন্ম নেন মাহাথির। তার আগে যে তিনজন প্রধানমন্ত্রী মালয়েশিয়া শাসন করেছেন তারা সবাই ছিলেন সমাজের অভিজাত শ্রেণির। সেই হিসেবে মাহাথির বেশ সাধারণ ঘর থেকেই উঠে এসেছেন।
শিক্ষাজীবনের শুরুতে মালয়ের একটি ইংরেজিমাধ্যম স্কুলে ভর্তি হন তিনি। বরবরই প্রথম স্থান অধিকার করে এগিয়ে নেন শিক্ষাজীবন। ইংরেজির শিক্ষক বাবার সংস্পর্শে থেকেই কিনা এই ভাষায় জাদুকরি দক্ষতা অর্জন করেছেন তিনি।
স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে ভর্তি হন মেডিকেল কলেজে। ১৯৪৭ তিনি সিঙ্গাপুরের কিং অ্যাডওয়ার্ড সেভেন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। মাহাথিরসহ মাত্র ৭ জন মালয় শিক্ষার্থী তখন সেখানে পড়াশোনা করছিলেন।
এমবিবিএস পাসের পর মালয়েশিয়ার একটি সরকারি হাসপাতালে যোগ দেন মাহাথির। সরকারি বিধিনিষেধের ওপর বিরক্ত হয়েই কিনা, কিছুদিন পর নিজেই খুলে বসেন প্রাইভেট ক্লিনিক। মালয় বংশোদ্ভূত কোনো ব্যক্তির মালিকানাধীন একমাত্র হাসপাতাল ছিল এটি।
অনেকে মনে করেন, শুধু রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্যই সরকারি চাকরি ছেড়ে দেন মাহাথির। রাজনৈতিক দল ইউএমএনও থেকে মালয় প্রাদেশিক রাজ্যের শীর্ষ পদে নিয়োগ পান।
চিকিৎসক হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান মাহাথির। বাড়তে থাকে তার গণসম্পৃক্ততা। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরও সাধারণ মানুষের একদম কাছাকাছি থাকতেন এই নেতা। এই বিশেষ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণেই কিনা ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার পরও তার জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি।
মাহাথিরের শাসনে উন্নয়ন: শিল্পোন্নত দেশ হিসেবে মালয়েশিয়ার আবির্ভাব ঘটে ১৯৮০ দশকেই। একসময় বিশ্বের ১৭ নম্বর ধনী দেশ বলে পরিচিত ছিল। মাহাথির যেদিন মালয়েশিয়ার চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন, সেদিন দেশটি ছিল বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র রাষ্ট্র। তখন তার মাথাপিছু আয় ছিল ১৩০ ডলার। জনসংখ্যার ৩৫ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করত। মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল ২৫ শতাংশ। শিক্ষিতের হার ছিল ২০ শতাংশ। জনসংখ্যার ৩৩ শতাংশ ছিল শহরবাসী ও শিল্পনির্ভর। মাহাথির যেদিন ক্ষমতা ছাড়েন, সেদিন দেশটির মাথাপিছু আয় ছিল ৩ হাজার ৩৩০ ডলার। শিক্ষিতের হার ৯৯ শতাংশ। পুরুষদের গড় আয়ু ৭১ বছর, নারীদের ৭৬ বছর। কিন্তু তাঁর এই উন্নয়ন সমালোচনার বাইরে ছিল না। মালয়েশিয়ার রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা নব্বইয়ের দশকেই মনে করেন, সেখানে সরকার অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিস্বার্থ বিবেচনায়। সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে কর্তৃত্বকারী দল ও কর্তৃত্বকারী রাজনৈতিক জোটের সমর্থকসহ সব রাজনৈতিক দলের স্বার্থে ব্যবহার করা হয়। এটা রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা, স্বজনপ্রীতি এবং তহবিল আত্মসাৎ—এসবের প্রচুর সুযোগ সৃষ্টি করে। ব্যাপক উন্নয়নের পাশাপাশি সৃষ্টি হতে থাকে ব্যাপক অর্থনৈতিক বৈষম্য।
মাহাথিরের সময়ের উন্নয়নের সঙ্গে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি যুক্ত ছিল, কথাটি সত্য। মাহাথির সর্বদাই চেয়েছেন মালয়েশিয়াকে রাষ্ট্র হিসেবে দ্রুত একটি সম্মানজনক এবং অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী জায়গায় নিয়ে যেতে। তিনি সে জন্য সব সময় যোগ্য লোকদের খুঁজে নিয়েছেন। তিনি ১৯৮৪ সালে দাইম জয়নুদ্দিনকে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন। তিনি দাইমের কর্মদক্ষতা সম্পর্কে জানতেন। দাইম মাহাথিরের ভগ্নিপতির বন্ধু ছিলেন। ফলে মাহাথির দাইমকে অর্থমন্ত্রী করে স্বজনপ্রীতি করেছেন, এ রকম অভিযোগও উঠতে পারে। দাইম অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার আগে মালয়েশিয়ার অর্থনীতি ছিল খুবই দুর্বল, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই মালয়েশিয়ার অর্থনীতির অগ্রগতি শুরু হয়। তাঁর সময় থেকে ব্যক্তিগত মালিকানা গুরুত্ব পেয়েছিল। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার আগে এমনকি ১৯৮৫ সালে মালয়েশিয়ার বিকাশ প্রক্রিয়া ছিল ঋণাত্মক, শূন্যের ১ দশমিক ৬ নিচে। কিন্তু ১৯৮৬ সাল থেকে তা ক্রমশ ধনাত্মকভাবে বাড়তে থাকে। প্রথমে ধীরগতিতে, ১৯৮৭ থেকে অত্যন্ত দ্রুত। ১৯৮৮ সালে উন্নতির সূচক ছিল ৮ দশমিক ৯, আর পরের বছর ৯ দশমিক ২। দাইম মালয়েশিয়ার অর্থনীতিতে ব্যক্তি খাতের বিকাশ বিরাট ভূমিকা রাখেন। আগে যেসব ব্যাংক লোকসান দিচ্ছিল, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর সেসব ব্যাংকও লাভ করতে শুরু করে। তিনি ব্যাংকগুলোকে পুরোনো বিশৃঙ্খল অবস্থা থেকে সুষ্ঠু একটি পরিবেশে ফিরিয়ে আনেন।
দাইম মন্ত্রী হওয়ার আগেই মালয়দের মধ্যে সবচেয়ে ধনী ছিলেন। মাহাথিরের আমন্ত্রণেই তিনি বাণিজ্য ছেড়ে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তিনি মালয়েশিয়াকে যতই উন্নতির শিখরে নিয়ে যান না কেন, দুর্নীতির পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ওঠে। দাইম তাঁর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগে আত্মপক্ষ সমর্থন না করে মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করেন। সত্য যে তিনি তাঁর পরিচিতজনদের ক্ষমতার বিভিন্ন জায়গায় বসিয়েছিলেন বা ব্যবসা-বাণিজ্য করার সুযোগ-সুবিধা দিয়েছিলেন। তিনি দায়িত্ব নিয়ে দেখলেন, অযোগ্যরা মালয়েশিয়ার উন্নতি হতে দিচ্ছে না, তখন তিনি স্বাভাবিকভাবেই তাঁর পরিচিত, আস্থাভাজন ও দক্ষ লোকদের বিভিন্ন দায়িত্বশীল জায়গায় বসিয়েছিলেন। নিঃসন্দেহে তাঁরা তাঁর খুব কাছের লোক ছিলেন।
মাহাথির লিখেছেন, মালয়েশিয়ার উন্নয়নে দাইমের অবদান অনেক। যাঁরা মালয়েশিয়ার উন্নয়ন ত্বরান্বিত করেছেন, তাঁদের দায়িত্বশীল জায়গাগুলোতে বসানোর জন্য দাইম স্বজনপ্রীতির দায়ে অভিযুক্ত হন। স্বজনপ্রীতি যে হয়েছিল তা অস্বীকার করার উপায় দাইমের ছিল না। তাই তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন না করে পদত্যাগ করতে চাইলেন। বৃহত্তর স্বার্থে মাহাথিরের কিছুই বলার ছিল না। মাহাথির লিখেছেন, ‘কখনো কি আমি কাউকে বলতে পারি, তুমি যাদের ভালো চেনো না, যাদের যোগ্যতা সম্পর্কে ভালো জানো না, যারা তোমার বিশ্বস্ত বা আস্থাভাজন নয়, তাদের সরকারের ক্ষমতায় বসিয়ে দাও?’
আত্মীয়স্বজন, দলের আস্থাভাজন লোকদের বড় বড় কাজ পাইয়ে দেওয়ার ব্যাপারে মাহাথিরের নীতি ছিল এ রকম: এই সুবিধাটা দেওয়া হবে মাত্র একবার। এবং কাজ পাওয়ার পর তিনটা দায়িত্ব অবশ্যই পালন করতে হবে। ১. নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করা; ২. ব্যয় না বাড়ানো; এবং ৩. কাজের উন্নত গুণগত মান নিশ্চিত করা। মাহাথির ‘প্রকল্প বাস্তবায়ন ও সমন্বয় সাধনকারী দল’ গঠন করে প্রতিটি প্রকল্পের কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা করেন। প্রকল্প বাস্তবায়ন ও সমন্বয় সাধনকারী দল সর্বদাই ঠিকাদারদের ওপর নজর রাখত এবং দুর্বল পরিকল্পনাগুলো সংশোধন করে দিত। প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে তিন মাস পরপর কাজের প্রতিবেদন দিতে হতো। ঘাটতি বা বিলম্ব দেখা দিলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বা মন্ত্রীর ডাক পড়ত। লালফিতার বাধাবিপত্তি দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ তা দূর করা হতো।
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আমলাদের দ্বারা এসব কাজ নিয়ন্ত্রিত হতো। সিদ্ধান্ত হয়ে যাওয়ার পর প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের নিরপেক্ষতা ও আমলাতন্ত্রের সততা ছিল প্রধান দুটি উপাদান। মাহাথিরের বক্তব্য ছিল, অযোগ্যতার কোনো স্থান থাকবে না, প্রতিটি প্রকল্প অবশ্যই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সাফল্যের সঙ্গে বাস্তবায়ন করতে হবে এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অবশ্যই পেশাদারির ভিত্তিতে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সুযোগ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তার অপব্যবহার চলবে না। বিভিন্ন প্রকল্পের বাজেটের ওপর সংসদ বা রাজনীতিকদের নিয়ন্ত্রণ কমানোর জন্য আরও পদক্ষেপ নেওয়া হয়। সব সরকারি হিসাবের অবশ্যই অডিট হবে এবং অডিটর জেনারেল সেসবের অডিট প্রতিবেদন পাঠাতে বাধ্য থাকবেন। সরকারি অর্থ সংসদ বা রাজ্য আইনসভার অনুমোদিত কাজের পেছনেই ব্যয় করা হয়েছে কি না তা দেখাও অডিটর জেনারেলের দায়িত্ব। তিনি তা স্বাধীনভাবে করবেন, রাজনৈতিক নেতারা তাঁর ওপর কোনো খবরদারি করতে পারবেন না। বলা হয়েছিল, অডিটর জেনারেল ও তাঁর কার্যালয়ের অন্য কর্মকর্তারা প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের এবং প্রতিটি রাজ্য সরকারের সব হিসাব ও নথিপত্র তন্ন তন্ন করে পরীক্ষা করবেন। পক্ষপাতহীনতা রক্ষার জন্য তিনি পরবর্তী সময়ে বিচারকের পদ ছাড়া আর কোনো পদে নিয়োগ পেতেন না। (রাহমান চৌধুরী : গবেষক)