ভারতে নেপালি শিক্ষার্থীর মৃত্যু, কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপোড়েন
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫:৪৮ PM , আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০৩:০৬ PM
ভারতের উড়িষ্যার কালিঙ্গা ইনস্টিটিউট অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনোলজি (কেআইআইটি) বিশ্ববিদ্যালয়ে নেপালি শিক্ষার্থী প্রকৃতি লামসালের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। মৃত্যু ঘিরে বিক্ষোভ, বলপ্রয়োগ, গ্রেফতার এবং ভারত-নেপাল কূটনৈতিক টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সব নেপালি শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাস ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে, যা ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি করেছে।
কী ঘটেছিল?
২০ বছর বয়সী প্রকৃতি লামসাল কেআইআইটিতে কম্পিউটার সায়েন্সের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। গত রোববার বিকেলে তার মরদেহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে পাওয়া যায়। প্রথমদিকে পুলিশ আত্মহত্যা বলে জানালেও, নেপালি শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, প্রকৃতি সহপাঠী আদ্বিক শ্রীবাস্তবের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতনের শিকার হচ্ছিলেন।
একটি অডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভ আরও বাড়ে, যেখানে একজন ব্যক্তি এক নারীকে গালাগাল ও অপমানজনক কথা বলাতে বাধ্য করছেন। যদিও অডিওটির সত্যতা যাচাই করা হয়নি, অনেকেই এটিকে প্রকৃতি ও আদ্বিকের কথোপকথন বলে মনে করছেন।
ময়নাতদন্তের পর প্রকৃতির মরদেহ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয় এবং মঙ্গলবার নেপালে পাঠানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কঠোর ব্যবস্থা ও শিক্ষার্থীদের উচ্ছেদ
প্রকৃতির মৃত্যুর পর নেপালি শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু করলে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিরাপত্তারক্ষী ও কর্মকর্তাদের দিয়ে বলপ্রয়োগ করে।
এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নেপালের অর্থনীতি নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্যের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। একজন কর্মকর্তা বলেন, "কেআইআইটির বাজেট নেপালের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) চেয়েও বেশি!"
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দেয় যে, সব নেপালি শিক্ষার্থীর জন্য ক্যাম্পাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করা হলো এবং তাদের ১৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে চলে যেতে হবে। এরপর শিক্ষার্থীদের বাসে করে কটকের রেলস্টেশনে নামিয়ে দেওয়া হয়।
গ্রেফতার ও তদন্ত
প্রকৃতির মৃত্যুর ঘটনায় ২১ বছর বয়সী আদ্বিক শ্রীবাস্তবকে ভুবনেশ্বর বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে।
এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন শীর্ষ কর্মকর্তা এবং দুই নিরাপত্তারক্ষীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন—ডিরেক্টর জেনারেল (এইচআর) শিবানন্দ মিশ্র, ডিরেক্টর (অ্যাডমিন) প্রতাপ কুমার চমুপতি, হোস্টেল ডিরেক্টর সুধীর কুমার রাথ, নিরাপত্তারক্ষী যোগেন্দ্র বেহেরা ও রামকান্ত নায়ক, উড়িষ্যার রাজ্য সরকার তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া
নেপালের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই ঘটনাকে 'অগ্রহণযোগ্য' বলে নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে, ন্যায়বিচার নিশ্চিত না হলে উড়িষ্যার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নেপালি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার অনুমতি (এনওসি) দেওয়া বন্ধ করা হবে।
এদিকে, কেআইআইটির দুই কর্মকর্তা মঞ্জুষা পান্ডে ও জয়ন্তী নাথ নেপালের বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চান, এবং বিশ্ববিদ্যালয় তাদের বরখাস্ত করে।
নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি বিষয়টি সরাসরি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং নেপালি দূতাবাস প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক ব্যবস্থা নিচ্ছে।
প্রকৃতি লামসালের রহস্যজনক মৃত্যু শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভূমিকা এবং ভারত-নেপাল সম্পর্ক নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছে। তদন্ত চলছে, তবে নেপাল ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য কূটনৈতিক চাপ অব্যাহত রাখবে।